সেলুলয়েড I ব্লো আপ
পরিচালনা: মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি
চিত্রনাট্য: মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি, টনিনো গুয়েরা
চিত্রগ্রহণ: কার্লো দি পালমা
সম্পাদনা: ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক
অভিনয়: ডেভিড হেমিংস, ভ্যানেসা রেডগ্রেভ, সারা মাইলস
সময়ব্যাপ্তি: ১১১ মিনিট
ভাষা: ইংরেজি
দেশ: যুক্তরাজ্য, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র
মুক্তি: ১৯৬৬
ষাটের দশক। সুইংগিং সিক্সটিজ সাবকালচারে ঘোরগ্রস্ত লন্ডনের একদল তরুণ। দিনমান হুল্লোড়ের ভেতর জীবন। এ সময়ে এই কালচারাল মুভমেন্টের সমর্থক এক ডাকসাইটে ফ্যাশন ফটোগ্রাফারকে ঘিরে ইতালিয়ান মাস্টার ফিল্মমেকার মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি বানিয়েছিলেন তার প্রথম সম্পূর্ণ ইংরেজিভাষী সিনেমা, ‘ব্লো আপ’। বেশ ব্যস্ত জীবন এই ফটোগ্রাফারের। তবু সে খেয়ালিও। পেশাগত ব্যস্ততার ফাঁকতালে কাটায় বেপরোয়া জীবন। ছুটে বেড়ায় এখানে-সেখানে। সঙ্গে থাকে ক্যামেরা। বলা বাহুল্য, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি তখনো আসেনি; ফিল্মই সম্বল। এমনই এক দিনে অনেকটা পাপারাজ্জির মতো কাণ্ড করে বসে সে। শহরতলির এক নির্জন পার্কে, এক তরুণী ও একজন মধ্যবয়সী লোককে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে। আর আড়াল থেকে তুলতে থাকে ছবি।
একসময় তরুণীটির চোখে ধরা পড়ে যায় তার কাণ্ড। ওই তরুণী দৃশ্যতই সচকিত হয়ে পড়ে; ছুটে আসে তার কাছে। সে দৌড়ে পালাতে চায়; কিন্তু পারে না। কিংবা বলা ভালো, তরুণীর কাছে একপ্রকার ধরা দেয় নিজে থেকেই। ছবির রিল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ওই তরুণী। ব্যর্থ হয়ে ফেলে টোপ। সেই টোপ প্রাগৈতিহাসিক! অন্যদিকে, তরুণীর সঙ্গে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটি তখনো দূরে, আগের জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে; দৃশ্যতই অস্বস্তিতে ভুগছিল। বোঝা যায়, এই তরুণী এবং ওই লোকের মধ্যে সম্পর্কটি সরল নয়। এরপর ফটোগ্রাফার ফিরে আসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। পাশেই স্টুডিও তার। আর সেখানে হাজির হয় সেই তরুণী। ছলে-বলে ছিনিয়ে নিতে চায় ছবির রিল। নেয়ও একসময়। কিন্তু আসল রিল নয়; অন্য রিল।
তারপর কৌতূহলের ঘোরে ফটোগ্রাফারটি ওই রিলের ছবিগুলো প্রিন্ট করে বড় আকারে। আর আবিষ্কার করে, পার্কে ওই ছবিগুলো তোলার মুহূর্তে আসলে একটি খুনের ঘটনা ঘটে গেছে; কেননা, ওখানে শুধু ওই তরুণী ও লোকটিই ছিল না তখন, ছিল একজন তৃতীয় ব্যক্তিও—যার হাতে থাকা পিস্তলটিই শুধু দেখা যাচ্ছে, তা-ও ঝাপসা। ছবিগুলো ব্লোআপ করে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। তারপর ছুটে যায় সেই পার্কে; তখন রাত। সেখানে লাশটি তখনো রাখা। লাশটি ওই মধ্যবয়সী লোকের। তার মানে, ওই তরুণী শারীরিক সম্পর্কের প্রাগৈতিহাসিক টোপ ফেলে ওই লোককে খুন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল? এমন ধারণা নিয়ে ফটোগ্রাফার ফিরে আসে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে। এসে দেখে, সবকিছু তছনছ; শুধু ওই রিলই নয়, আরও অনেকগুলো রিল তার অবর্তমানে নিয়ে গেছে কে বা কারা। বড় করে প্রিন্ট করে টানিয়ে রাখা ছবিগুলোও নেই। অবশ্য এক কোনায় বেখেয়ালে পড়ে যাওয়া একটা ছবি রয়ে গেছে তখনো। কে বা কারা নিয়ে গেছে—আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না ফটোগ্রাফারের। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার মাথা ঘামানো ও ছুটোছুটির পর সে কিছুটা ক্ষান্ত হয়। তারপর সারা রাত বেপরোয়া পার্টিজীবন কাটিয়ে, সকালে আবারও ওই পার্কে গিয়ে দেখে—লাশ নেই! ফটোগ্রাফার বেরিয়ে আসে পার্ক থেকে। তখন গাড়ি চালিয়ে হুল্লোড় করে আসা একদল সুইংগিং সিক্সটিজ, মূকাভিনেতাদের সাজে, পাশের টেনিস কোর্ট ঘিরে দাঁড়িয়ে যায়। আর দেখতে থাকে তাদেরই দুই সদস্যের টেনিস খেলা—অদৃশ্য বল দিয়ে! প্রথমে অবাক হলেও, এই ইন্দ্রজালে ফটোগ্রাফারও সম্পৃক্ত হয়। তার কাছে গিয়ে পড়া অদৃশ্য টেনিস বলটিকে হাতে তুলে, ছুড়ে দেয় সে। এভাবেই ‘আছে ও নাই’-এর এক রহস্যচক্রের অংশ হয়ে যায় সে-ও।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘ব্লো আপ’ কোন সাবকালচার মুভমেন্টের প্রেক্ষাপটে বানানো?
[ক] হিপ্পি
[খ] সুইংগিং সিক্সটিজ
[গ] গথ
[ঘ] ট্রেকি
২। এটি আন্তোনিওনির কততম সম্পূর্ণ ইংরেজিভাষী সিনেমা?
[ক] সপ্তম
[খ] চতুর্থ
[গ] অষ্টম
[ঘ] প্রথম
৩। সিনেমার শেষ দৃশ্যে কী ধরনের বল দিয়ে টেনিস খেলা হয়েছিল?
[ক] অদৃশ্য বল
[খ] টেনিস বল
[গ] ক্রিকেট বল
[ঘ] ফুটবল
গত পর্বের বিজয়ী
১. শিলামণি, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা,
২. নাজমুল হাসান, উত্তরা, ঢাকা,
৩. শুভ, হালিশহর, চট্টগ্রাম।