এই শহর এই সময় I উষ্ণতায় শীতলতায়
জুনের শুরুতে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ আর আষাঢ়ের একপশলা বৃষ্টির শীতলতা অনুভব করেছেন নগরবাসী। মাসজুড়ে রাজধানীর শিল্প-সংস্কৃতির মঞ্চগুলোতেও ছিল উষ্ণতা ও শীতলতার যৌথ নিবাস! নাচ, গান, চিত্রশিল্প, আলোকচিত্র, কবিতা, চলচ্চিত্র, মঞ্চনাটক—সব মাধ্যমেই দর্শক-শ্রোতাদের জন্য ছিল হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন।
এরই মধ্যে বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে দেখা মেলে, রিমান্ডকক্ষে বসে আছে এক লেখক। তাকে জেরা করছে এক জাঁদরেল পুলিশ কর্মকর্তা। তাতে জীবনের এক অন্যতর দর্শন উন্মোচিত হচ্ছে দর্শকের সামনে। এটি মূলত একজন নৈরাজ্যবাদী লেখকের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন। নিজস্ব মতবাদ প্রচার, ব্যক্তিক আদর্শ কিংবা আধিপত্যের মায়াজাল সে লেখার মাধ্যমে বিস্তার ঘটায়। আর তা সময়ে সময়ে তরুণদের ভেতর উসকে দেয় জীবনবিধ্বংসী নানা প্রবণতা। জেরার মুখেও সে নির্বিকার। তার একেকটি জবাবের ভেতর দিয়ে ঘটতে থাকে নিজ জীবনবোধের বিস্ফোরণ। এমন টান টান গল্পের নাটক ‘রিমান্ড’ মঞ্চস্থ হয়ে গেল ১৫ ও ১৬ জুন। হৃৎমঞ্চ প্রযোজিত এ নাটক রচনা ও নির্দেশনায় শুভাশিস সিনহা। লেখক চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে জ্যোতি সিনহা। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন কামাল উদ্দীন কবির, সজীব হোসেন, সউদ চৌধুরী, শাহনাজ জাহান, আনিসুর রহমান রিমন, বর্ষা, সৌম্য, শাকিল, শম্পা প্রমুখ।
‘দ্বৈত রথ’। শিল্পী দম্পতি শাহিনা ইসলাম ও মো. মাসুদুল হকের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সহপাঠী ছিলেন তারা। ৩৯ বছরের যুগল জীবনে এটিই তাদের একসঙ্গে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী। ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে প্রদর্শিত হয়ে গেল ৯ থেকে ১৭ জুন। তাতে তেলচিত্র, অ্যাক্রিলিক ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ৫৭টি ছবি জায়গা পেয়েছিল। বেশির ভাগ ছবির বিষয়বস্তু প্রকৃতি। ছিল মানুষের অবয়বও। শাহিনা ইসলামের তুলিতে ফুটে ওঠে হরেক রকম পাখির ছবি। অন্যদিকে মো. মাসুদুল হকের আঁকা নিরীক্ষাধর্মী। ‘এ শিল্পী যুগল শিল্পের নিবিষ্ট শ্রমিক। চাকরির ব্যস্ততায় ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কিছুটা অনভ্যস্ততা থাকলেও বিষয় বৈচিত্র্য আর শিল্পের প্রতি শ্রম তাদের ছবির প্রতি দর্শককে আগ্রহী করে তুলবে,’ প্রদর্শনী উদ্বোধন করে বলেছেন প্রসিদ্ধ চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য ভিন্নধারার চলচ্চিত্রের পসরা সাজানো ছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের আয়োজনে।
‘চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্র উৎসব’টি শুরু হয় ৮ জুন; চলে ১০ দিন। আমাদের ভূখণ্ডে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর এবং ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। তাতে ২২টি ফিচার ফিল্ম, ১৩টি ডকুমেন্টারি এবং ৮টি শর্ট ফিল্ম উপভোগের সুযোগ পান দর্শক। ফিচার ফিল্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলমগীর কবিরের ‘সূর্যকন্যা’, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকীর ‘ঘুড্ডি’, তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, শামীম আখতারের ‘রীনা ব্রাউন’, বাদল রহমানের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, আবু সাইয়ীদের ‘শঙ্খনাদ’, এম এ সামাদের ‘সূর্যগ্রহণ’, হারুনর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’, নাসির উদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’, সাইদুল আনাম টুটুলের ‘আধিয়ার’, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, নূরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ প্রভৃতি।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ