ই-সোসাইটি I শিখোর শিখায়
শিখো [Shikho]। স্বল্পমূল্যে উদ্ভাবনী উপায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের একটি এডু-টেক স্টার্ট-আপ। ছোটবেলায় ক্লাস মিস করার অভিজ্ঞতা আমাদের কম-বেশি সবারই রয়েছে। তখন আসলে কী করতাম? হ্যাঁ, নোট সংগ্রহ করে টপিক বোঝার চেষ্টা থাকত। তবে এর অভিজ্ঞতা কখনো কখনো মিশ্র ও ভয়ংকর হতো। বর্তমানে শিখোর মতো অ্যাপ সাবস্ক্রাইব করে খুব সহজে এসব ঝামেলা এড়ানো যায়।
২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর সচল হওয়ার পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবহারকারী অ্যাপটি গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করেছেন। এই অ্যাপে প্রতিটি কনটেন্ট এমনই উদ্ভাবনী কায়দায় দেওয়া থাকে, যা প্রচলিত পন্থা থেকে ভিন্ন। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সৃজনশীল ডিজাইন এবং কারিকুলাম ও প্রযুক্তির দারুণ সমন্বয় মেলে এখানে।
শিখোর টিম বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া। গুণমানের নিশ্চয়তার জন্য এই স্টার্ট-আপে স্ক্রিপ্ট লেখক এবং বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল রয়েছে। তারা লেকচারগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করেন, যা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের সামর্থ্য রাখে। এ ছাড়া তাদের একটি টিম রয়েছে যেটি শুধু প্রশ্ন, ইলাস্ট্রেটিভ সমাধান এবং পাঠ্য ও টেক্সট ইমেজভিত্তিক বিষয়গুলোকে সমন্বয় করে স্মার্ট নোট তৈরি করে। শিখো কার্যত বিশাল গাইড বইয়ের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যা অতীতে আলাদা কিনতে হতো।
শিখোর সৃজনশীল ডিজাইন বেশ আকর্ষণীয় ও কার্যকর। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য শিক্ষার সঙ্গে বিনোদনের এক প্রকার সংযোগ রয়েছে এখানে। ভিডিও পাঠগুলোতে উচ্চমানের অ্যানিমেশন ব্যবহার শেখার ক্ষেত্রে দারুণ অভিজ্ঞতা এনে দেয়। জটিল ধারণাগুলোকে ভিজ্যুয়াল ব্যাখ্যা করে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে এই অ্যাপ।
শিখোতে একাধিক স্তরে রয়েছে গেমিফিকেশন। এটি একটি সর্বজনীন পয়েন্ট সিস্টেম, যা একজন বিগিনার বা লিজেন্ড হিসেবে একেকজনের প্রোফাইল স্তর নির্দেশ করে। তাতে রয়েছে স্থানীয় পুরস্কার ব্যাজ, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সিএনজি কিংবা রিকশা ব্যাজ পেতে পারেন। মূলত উত্তর দেওয়ার স্পিডের ওপর নির্ভর করে তাদের স্তর নির্ধারিত হয়। একই সঙ্গে রয়েছে লিডারবোর্ড, যেখানে শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে এবং অন্যদের সঙ্গে এই অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকতে পারেন। জানা কথা, শেখার ক্ষেত্রে গেমিফিকেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেক শিক্ষার্থী স্মার্টফোনে গেম খেলতে পছন্দ করেন এবং তারা যত বেশি পয়েন্ট পান, তাদের কাছে ওই অ্যাপকে তত বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে শেখানোর কাজে নিযুক্ত রাখতে গেমিফিকেশন যুক্ত করেছে শিখো।
এটি ডেটা চালিত আর্কিটেকচারের ওপর নির্মিত একটি অ্যাপ। এর পাইলট অ্যাপে প্রথমত একটি ইঞ্জিন ছিল। একজন শিক্ষার্থীর শেখার যাত্রাকে মসৃণ করতে বর্তমানে উন্নত মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে।
শিখোর লুক ও অভিজ্ঞতা নিখুঁত করার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন এর উদ্যোক্তারা। এতে যুক্ত করা হয়েছে ইউজার ইন্টারফেস (ইউআই) এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (ইউএক্স), যেন তরুণ ব্যবহারকারীরা আকৃষ্ট হন।
শিখোর হেড অব এইচআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন তাহিয়া চৌধুরী জানান, শুরুতে শুধু নবম ও দশম শ্রেণির গণিত কোর্স অফার করেছিল অ্যাপটি। এই পাইলট পরিষেবায় ছিল ১২২টি ভিডিও লেকচার, ৭০০টি স্মার্ট নোট, সমাধানসহ ৩০০০টি মক কোশ্চেন এবং নবম ও দশম শ্রেণির গণিতের সহস্রাধিক ডায়াগ্রাম। সবকিছুর জন্য মাসিক ফি নেওয়া হতো মাত্র ১০০ টাকা।
এরপর ধাপে ধাপে একাধিক কোর্স চালু করা হচ্ছে এই অ্যাপে। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০২০ সালের জুনে সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক গ্লোবাল এডু-টেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লার্ন ক্যাপিটাল থেকে প্রথম আর্থিক বিনিয়োগ পায় শিখো টিম।
বেসিক ক্লাসরুমের পাঠ্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তরের প্রচলিত পথে হাঁটেনি শিখো। এখানে পাঠ পরিকল্পনা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন বিভিন্ন টপিক বোঝার জন্য যারা সমস্যায় পড়েন, তারা ধীরে ধীরে বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারেন। দুর্বল শিক্ষার্থীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যও সমান চ্যালেঞ্জিং হবে—এমন পাঠ্যক্রম তৈরির লক্ষ্য শুরু থেকেই ছিল এই অ্যাপ-সংশ্লিষ্টদের।
বাজারে আসা বেশির ভাগ নতুন অ্যাপের মতো শিখোও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। প্রথাগত মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে স্ক্রিপ্ট-রাইটারদের কাজ করা, অনলাইন শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত এবং তাতে অভিভাবকদের সায় আদায় করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। সেই সব চ্যালেঞ্জ সামলে শিখো বেশ দাপটের সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: শিখোর সৌজন্যে