ফিচার I ফাস্ট ফুডে কাতর কৈশোর
ফাস্ট ফুডের ভোক্তা ছোট-বড় সবাই। কিন্তু টিনএজারদের যেন একটু বেশিই ঝোঁক এ ধরনের খাবারে। এর দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত এ বয়সে স্বাদে পরিবর্তন আসে। নতুন স্বাদ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে কেউ কেউ। আবার, কারও কারও খাবারে একদমই অনীহা চলে আসে। নতুন স্বাদের হদিস পেতে এ বয়সের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পেলেই ঝুঁকে পড়ে ফাস্ট ফুডের প্রতি। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে রেস্তোরাঁয় চেক-ইন দেওয়া একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বন্ধুর জন্মদিন কিংবা কোনো সফলতায় ‘ট্রিট’-এর প্রধান অনুষঙ্গ যেন ফাস্ট ফুড। সব মিলিয়ে টিনএজাররা খুব অল্প বয়স থেকেই বাড়তি কোলেস্টেরল, ফ্যাট ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারে ঝাঁপ দিচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
এ কোনো মনগড়া কিংবা কাল্পনিক আশঙ্কা নয়; বরং গবেষণায় প্রমাণিত। এসব বিষয়ে আমেরিকার ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ল্যানসেট জার্নালে সেটির ফলাফল প্রকাশিত হয়। যা থেকে জানা গেছে, ফাস্ট ফুড টিনএজারদের স্থূলতা বাড়ায়। তা ছাড়া ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়ে।
বর্তমানে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা বাড়ন্ত। গবেষণায় প্রমাণিত, এ রোগের অনেক কারণের মধ্যে নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ফাস্ট ফুড খাওয়া অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, রেস্তোরাঁর এক বেলার ফাস্ট ফুডে যে পরিমাণ ক্যালরি থাকে, ঘরোয়া সারা দিনের সাধারণ খাবারেও তা থাকে না। এসব খাবার খাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেড়েই চলেছে। ইনসুলিন নিঃসরণের হার কমে যাওয়ায় স্নায়ু ও কিডনির হচ্ছে ক্ষতি। বাড়ছে আলঝেইমারের ঝুঁকি।
ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারে নানান ক্ষতি থাকলেও বেশি বিপজ্জনক হলো তাতে থাকা সুপ্ত চিনি। চিনির বিকল্প হিসেবে যে উপাদানগুলো তাতে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবার খেলে বারবার শরীরে চিনির মাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ফলে অগ্ন্যাশয় দুর্বল হয়ে বিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া এসব খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেনেট তেল, যা কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়ায় বহুগুণে। ত্বকেরও ক্ষতি করে ফাস্ট ফুড। টিনএজে এ ধরনের খাবার খুব বেশি খাওয়ায় অল্প বয়সেই লাবণ্য হারায় ত্বক। শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। তা ছাড়া ব্রণ ও অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
টিনএজারদের খাবারে আছে আলাদা তরিকা। এ সময় শরীরে নানান পরিবর্তন ঘটে। ফলে যা খুশি তা খেয়ে এ বয়সেই শরীর দুর্বল করে ফেললে পরে তা সারানো খুব সহজ হয় না। তখন রোগবালাই বাসা বাঁধতে পারে সহজে। তাই এ বয়সীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ডায়েট। এমনকি সকাল, দুপুর ও রাতে কী খেতে হবে, সে বিষয়েও রয়েছে নির্দেশনা। টিনএজে ভিটামিন ডি দরকার হয় বলে সকালের নাশতায় দুধ রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। স্যান্ডউইচের প্রতি টিনএজারদের ঝোঁক থাকতে পারে। তাই লাঞ্চে মুরগি কিংবা টুনা মাছের স্যান্ডউইচ খাওয়া যেতে পারে। তবে দুপুরে যা-ই খাওয়া হোক, সঙ্গে থাকা চাই স্যালাড। রাতের খাবারে ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা ভালো। সে ক্ষেত্রে কৈশোরে লাল চালের ভাত কিংবা রুটি খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।
ফাস্ট ফুড এড়িয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে টিনএজারদের তালিকায় থাকা চাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন ডিম, কাবাব, শিমের বীজ, সয়া ইত্যাদি। সুস্থতা নিশ্চিত রাখতে সবজির বড়া, ফুলকপি ভাজা, গাজরের হালুয়া—এসব মুখরোচক খাবারও দেওয়া যেতে পারে তাদের পাতে। মানে এমন খাবার রাখতে হবে, যা কিশোর-কিশোরীদের জিভে যথাযথ স্বাদের জোগান দেবে, আবার স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করবে না। খাবারগুলো হওয়া চাই ফাস্ট ফুডের বিকল্প।
এ বয়সে শরীরের তাপমাত্রাও বিবেচনায় রাখতে হয়। তাই টিনএজারদের খাদ্যতালিকায় বাদাম, কুকিজ, ক্যান্ডি ও মাখন রাখলে ভালো। ফলের ক্ষেত্রে দেশিগুলোই উত্তম বলে অভিমত পুষ্টিবিদদের। সেগুলো জুস করে খাওয়া যেতে পারে। তবে তা না ছেঁকে। আরেকটি বিষয়, একই খাবার বারবার সামনে দিলে সেই খাদ্যের প্রতি টিনএজারদের অনীহা জন্মাতে পারে। তাই স্বাদে ভিন্নতা আনতে দুই-তিন পদ একত্রে মিশিয়ে ফিউশন করা যেতে পারে। ফাস্ট ফুড একদম বারণ করে না দেওয়াই ভালো। কারণ, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহ প্রবল হয় এই বয়সে। তবে ফাস্ট ফুড খেলে তা পর্যাপ্ত স্যালাড যোগে খাওয়া চাই, যেন বাড়তি ক্যালরি ঝরে যায়। মেয়োনেজ আসক্তি টিনএজারদের আরেক জটিল সমস্যা। এই খাদ্য থেকে দূরে থাকাই উত্তম।
টিনএজারদের ক্ষেত্রে ফাস্ট ফুড খেয়ে স্থ’ূলতা বাড়ানোর বিপদ থেকে রেহাই পেতে ব্যায়াম করা জরুরি। হাঁটা ও সাঁতার কাটার পাশাপাশি নিজের কাজগুলো নিজে করাই স্বাস্থ্যবান্ধব।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট