টেকসহি I নিশ্চিহ্ন নিমেষেই!
সৌন্দর্যবিশ্বে এমন আবিষ্কার এই প্রথম। সাজসারাইয়ের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য। এমনকি প্যাকেজিংয়েও প্রকাশিত প্রস্তুতকারকের পরিবেশ-সচেতনতা
মেকআপ ওয়াইপ অন্যান্য প্রসাধনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে ত্বক থেকে মেকআপ তো বটেই, অন্যান্য ময়লা তুলে নেওয়া সম্ভব। এটি একধরনের ভেজা টিস্যু, যা বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারে তৈরি। এটি তৈরিতেও প্রচুর পানির দরকার পড়ে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এরই মধ্যে প্রস্তুতকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। আবার পরিবেশের জন্যও খুব একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। গবেষণায় জানা যায়, এটি মাটির সঙ্গে মিশে যেতে প্রয়োজন অন্তত ১০০ বছর। অস্ট্রেলিয়ান এক জরিপে জানা গেছে, সেখানকার স্যুয়ারেজ লাইনের ৭৫ শতাংশ ব্লকেজ তৈরির কারণ এই ওয়েট ওয়াইপ। তাই মেকআপ ওয়াইপের মতো বিউটি বর্জ্য বর্তমান পৃথিবীর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।
প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর নয় এমন সৌন্দর্য উপকরণ তৈরিতে মনোযোগী হয়েছেন অনেক বিজ্ঞানী। সফলতাও এসেছে। ওয়াটার রেসপন্সিবল স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড কনজারভিং বিউটি তৈরি করেছে মেকআপ ওয়াইপ। এটি পৃথিবীর প্রথম ভেজা টিস্যু, যেটি তৈরিতে পানির ব্যবহার হয়নি। নাম রাখা হয়েছে ‘ইন্সটামেল্ট ডিপ এক্সফোলিয়েটিং ডে ডিজলভার ওয়াইপ’। আধুনিক ফ্যাব্রিক টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি। পেটেন্টের মাধ্যমে সেটিকে সংরক্ষণ করেছে কনজারভিং বিউটি।
ইন্সটামেল্ট বিউটি ওয়াইপ ডিপ এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে ত্বকের উপরিতল পরিষ্কারে সক্ষম। শতভাগ বায়ো-ডিগ্রেডেবল। মাত্র ১৪ দিনে মাটিতে মিশে যায়।
ইন্সটামেল্ট আটটি উপাদানে তৈরি। এগুলো হচ্ছে এসকুয়ালিন, জোজোবা অয়েল, জোজোবা এস্টার, হেম্প সিড অয়েল, সানফ্লাওয়ার সিড অয়েল, ডারমোফিল, ভিটামিন ই এবং হ্যালিয়েন্থাস অ্যানুয়েস। তৈরি বিভিন্ন রকম ত্বকবান্ধব তেলযোগে। ডিজলভঅ্যাবল ওয়াইপটি মূলত অয়েল বেইজড ক্লিনজার। টিস্যুটি প্যাকেট থেকে বের করে, ত্বকে বুলিয়ে মেকআপ পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে। টিস্যুটির টেক্সচার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে ভূমিকা রাখে। ময়লা জমে থাকতে দেয় না। এটি ব্যবহারে প্রসাধনের লেয়ার যেমন উঠে আসে, তেমনি ত্বকে পৌঁছে যায় ওয়াইপে ব্যবহৃত তেল। আর্দ্রতা নিশ্চিত করে। শুষ্কতা থেকে বাঁচায়।
ভেগান পণ্য ইন্সটামেল্ট। ক্রুয়েলটি ফ্রি। এতে ব্যবহৃত সব উপাদান বাছাইয়ে টেকসই তত্ত্ব গুরুত্ব পেয়েছে। প্যাকেজিং করা হয়েছে দায়িত্বের সঙ্গে। যাকে বলা হয় রেসপন্সিবিলি প্যাকেজড। কোনো রকম সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়নি। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত আর্টিকেলের মাধ্যমে জানা যায় কনজারভিং বিউটির উদ্যোক্তা এবং বায়োকেমিস্ট নাটাশিয়া নিকোলাওয়ের বক্তব্য, ‘ব্যবহারের পর পানিতে মিশে যায় ইন্সটামেল্ট ওয়াইপটি। আমরা চাই পানি ব্যবহারে সংযত হোক মানুষ। গোসল কিংবা টয়লেট ব্যবহারের সময় টিস্যুটিকে দ্রবীভূত করা যাবে অতিরিক্ত কোনো পানি ব্যবহার না করেই।’ তিনি আরও জানান, ইন্সটামেল্ট পানিতে বিলীন না করে কেউ যদি ডাস্টবিনে ফেলে দেন, তাহলে ১৪ দিন সময় লাগবে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে।
প্রস্তুতপর্ব বিষয়ে নিকোলাও বলেন, ‘স্কটল্যান্ডের একটি আবিষ্কার আগ্রহী দলের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ইন্সটামেল্ট নিয়ে আমার যাত্রা শুরু। এই দলের নাম মুহকোহমে’স ইনোভেশন। তারা আমাকে তাদের পেটেন্ট করা ফ্যাব্রিকটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ করে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে আসা হয়েছে।’ ইন্সটামেল্ট একবার ব্যবহার করা যায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা সম্ভব। জীবাণু আক্রান্ত করতে পারে না।
প্যাকেজিংয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে এই ওয়াটার রেসপন্সিবল প্রসাধন ব্র্যান্ড। বর্তমানে যে স্যাশেতে পাওয়া যাচ্ছে এটি, তা তৈরি হয়েছে বায়োফিল্ম ব্যবহার করে। প্যাকেটটি ‘হোম কম্পোস্ট সেইফ’ অর্থাৎ ময়লার ঝুড়িতে রেখে দিলে ৯০ দিনের মধ্যে পচনশীল ফল ও সবজির মতো পচে যাবে। আধুনিক প্রযুক্তির এই প্যাকেজিং পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে যেমন মাটিতে মিশে যায়, তেমনি নিশ্চিত করে এর ভেতরকার টিস্যুর গুণগত মান। অক্সিজেন থেকে সুরক্ষিত রাখে। ফলে আর্দ্রতা নষ্ট হয় না। ৩৯ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পাওয়া যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এই ওয়াইপের প্যাকেট।
সারাহ্ দীনা
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল