ফরহিম I ম্যান অব দ্য মোমেন্ট
উৎসবসম্মত সব আইলুক। পুরুষালি ভাব কমাবে না, বরং তৈরি করবে বাউন্ডারি পুশিং স্টাইল স্টেটমেন্ট। ফ্যাশন রানওয়ে আর রেড কার্পেট প্রসূত
প্রজন্ম পরম্পরায় মেকআপ যেন ‘গার্ল অনলি’ এন্টারপ্রাইজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অতীতের আখ্যান এর ঠিক উল্টো। চিত্রা দেবের ‘আবরণে আভরণে ভারতীয় নারী’ গ্রন্থ অনুসারে, প্রাচীন ভারতে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই সাজসজ্জা ভালোবাসতেন। শুধু তা-ই নয়, সাজকৌশল আর সরঞ্জামও যে একসময় প্রায় একই রকমের ছিল, তার বহু নিদর্শনও মেলে। উভয়েই নানা রঙের পোশাক পরতেন, গায়ে জড়াতেন নানা ধরনের গয়না, চুল বাঁধতেন, টিপ পরতেন, পরতেন কাজলও। এমনকি হাতে বড় বড় নখ রাখতেন এবং তাতে রং মাখতেন। পরে পুরুষের রূপচর্চায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। তার কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, সাজসজ্জা ও রূপচর্চার জন্য ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সময় কর্মব্যস্ত পুরুষের হাতে ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে সাজসজ্জার অনুশীলন শুধু ধনী ও নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় চিত্র আর ভাস্কর্যের দিকে চোখ পড়লেও এ কথার সমর্থন মেলে।
পাশ্চাত্যের গল্পটা আবার ভিন্ন। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ১৮ শতক অব্দি পুরুষদের বিভিন্ন রকমের মেকআপ ব্যবহারের ঐতিহ্য দারুণ সমৃদ্ধ। ব্যাপারটাকে তখন একদমই স্বাভাবিক গণ্য করা হতো। কিন্তু রানি প্রথম ভিক্টোরিয়ার আমলে পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ভিক্টোরিয়ান এরা জুড়ে পুরুষদের মেকআপের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়। কদর্যতা আর কুরুচিপূর্ণ তকমা জুড়ে দেওয়া হয় এর সঙ্গে। ফলাফল, বিংশ শতাব্দীর মধ্যে ‘শুধু নারীদের জন্য’ পরিণত হয় মেকআপ।
পুরুষালি মেকআপে চোখের প্রাধান্য বরাবরই বেশি ছিল। সেই ৪০০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে। ইজিপ্টশিয়ান কালচারে মর্দানি ভাবের গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। আশ্চর্যের ব্যাপার, তাতে ভূমিকা ছিল মেকআপের, বিশেষ করে আই মেকআপের। সে সময় কালো রঞ্জক দিয়ে পুরুষদের চোখে আঁকা হতো অভিনব সব ক্যাটস আই ডিজাইন। সহস্রাব্দ পেরিয়ে জনপ্রিয়তার তালিকা আরও দীর্ঘ হয়। তাতে যুক্ত হয় কাজল, সবুজ মালাকাইটের আইশ্যাডো, লাল গিরিমাটি থেকে তৈরি লিপ আর চিক স্টেইন। সে সময় আইলাইনারের নাটকীয় রেখায় প্রকাশ পেত বংশমর্যাদা আর অর্থ প্রতিপত্তির দাপট।
এরপর বিশ দশকের প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময়ে পুরুষদের আই মেকআপ আবার ফিরে আসে লাইমলাইটে। পপ পাঙ্ক ব্যান্ড আর এর অনুসারীদের কল্যাণে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘গাইলাইনার’ ট্রেন্ড। আর এখনকার কসমোপলিটন পুরুষেরা তো আরও একধাপ এগিয়ে। এক্সপেরিমেন্টে কোনো না নেই তাদের। এমনই নিরীক্ষাধর্মী চারটি আই লুক রইল ক্যানভাসের পুরুষ পাঠকদের জন্য।
মেটাল মেইজ
দিনে কিংবা রাতে, যারা চোখে আনতে চান মেটালের মাদকতা, তাদের জন্য এ লুক। যা চট করে চেহারাকে করে তুলবে সুপার গ্ল্যামারাস। মিনিমাল, নো মেকআপ মেকআপ লুক হওয়ায় পরে নিতে পারবেন যে কেউ। শুধু প্রয়োজন পড়বে একটা আইশ্যাডো ব্রাশ আর ক্রিমি ফর্মুলার মেটালিক আইশ্যাডো। চোখের পাতায় আলতো করে বুলিয়ে নিলেই ব্যস- সাজের কাজ সারা।
গেট গ্লিটারি
উৎসব মানেই একরাশ উজ্জ্বলতা। সেই উজ্জ্বলতার ছটা থাক আই মেকআপে। লাগবে লিকুইড গ্লিটারি আইশ্যাডো। পুরো চোখের পাতায় ছড়াছড়ির প্রয়োজন নেই। গ্লিটারসমেত ব্রাশ দিয়ে ভেতরের কোণ থেকে ক্রিজের অর্ধেক পথ পর্যন্ত এগোলেই চলবে। কারণ, আ লিটল বিট অব গ্লিটার গোজ আ লং ওয়ে।
গ্রাফিক গ্রেস
লাইন ঠিকঠাকভাবে টেনে নিতে পারলে এই আইলুক যে কাউকে আরও আত্মবিশ্বাসী দেখাতে যথেষ্ট। যেকোনো আসরে সব কটা চোখের মধ্যমণি হয়ে ওঠার জন্য পারফেক্ট।
স্মোকিং হট
চোখের মায়ায় গোটা দুনিয়াকে জড়িয়ে রাখতে চাইলে ট্রাইড অ্যান্ড টেস্টেড এই ক্ল্যাসিক স্মোকি আই লুক। শিমার আর গ্লিটারে যাদের অস্বস্তি, তাদের জন্য। চোখ ভরে কাজল দিয়ে সেটা স্মাজ করে নিতে হবে মানানসই রঙের আইশ্যাডো দিয়ে। আইল্যাশে এক কোট মাসকারার সংগত। উৎসব কিংবা হাই-এন্ড পার্টির জন্য প্রস্তুত লুক।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আকাশ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল