এই শহর এই সময় I রূপ-রূপান্তরের আলো-আঁধারি
বিভিন্ন অস্থিরতায় নভেম্বরজুড়ে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রায় ক্ষণে ক্ষণে নেমে এসেছিল ভাটা। তাই বলে প্রাণশক্তির জোয়ার কম বয়ে যায়নি, বিশেষত শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে। নানা আয়োজনে যথারীতি মাতোয়ারা হয়েছেন নগরবাসী।
এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে যাত্রাপালা। কিন্তু সময়ের ফেরে, নানা বিশৃঙ্খলা ও বিতর্কের কারণে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শিল্পমাধ্যম হারিয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। এর চর্চা হয়ে পড়েছে গণ্ডিবদ্ধ; এমনকি প্রশ্নবিদ্ধও। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এই সংস্কৃতি কেন্দ্রের আয়োজনে ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল ১৯ দিনব্যাপী ‘গণজাগরণের যাত্রাপালা উৎসব’। এর মধ্যে উদ্বোধনী দিন থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে যাত্রাপালা উপভোগের সুযোগ পান ঢাকাবাসী। উদ্বোধনী আয়োজনে যাত্রাদল লোকনাট্যগোষ্ঠী পরিবেশন করে যাত্রাপালা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এরপর জ্যোতি অপেরার পরিবেশনায় যাত্রাপালা ‘জননীর স্বপ্নপূরণ’ এবং বাংলার বাণী অপেরার ‘জাগো মানুষ জাগাও দেশ’ উপভোগ করেন দর্শকেরা। বাকি দিনগুলোতে পরিবেশিত হয় স্বাধীন বাংলা নাট্যগোষ্ঠীর ‘আলোর পথে’, মহানগরের ‘দবির দফাদার’, শিখা নাট্যগোষ্ঠীর ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’, প্রগতি নাট্য সংস্থার ‘একজন রহিমুদ্দি’, নিউ লোকনাথ অপেরার ‘জননী জন্মভূমিশ্চ’, বন্ধু অপেরার ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’, সীমা অপেরার ‘জননীর স্বপ্নপূরণ’, গোল্ডেন-৯ নাট্যগোষ্ঠীর ‘দবির দফাদার’, জয়যাত্রার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, স্বরূপ কথার ‘একজন রহিমুদ্দি’, নিউ শামীম নাট্য সংস্থার ‘শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ’, একতা অপেরার ‘জাগো মানুষ জাগাও মানুষ’ প্রভৃতি যাত্রাপালা। ৭ নভেম্বর রাজধানীতে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাপনী হলেও দেশের ৪২টি জেলায় এই উৎসব চলে ৬ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যাত্রাশিল্পী সম্মাননা লাভ করেন মিলন কান্তি দে।
১৭ নভেম্বর ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে শুরু হয় চিত্রশিল্পী রেজা আসাদ আল হুদা অনুপমের দ্বিতীয় একক চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘কাব্যচিত্র’ বা ‘পোয়েট্রিমেজ’। চলে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। অর্ধশত চিত্রকর্মের এই সমাহারে দেখা মেলে নিসর্গ ও চারপাশের পরিবেশের। আর তা এই চিত্রশিল্পী চিত্রপটে ফুটিয়ে তুলেছেন রূপ ও রূপান্তরের আলো-আঁধারিতে। তার চিত্রভাষ্যে বহমান সময়ের ছাপ, সন্তাপ, আবেগ-অনুভূতি প্রভৃতি যেন পরিণত হয়েছে কালের সাক্ষীতে। দীর্ঘদিন বৃষ্টিতে ভিজে ছাদ বা কার্নিশে যে শেওলা-জমাট নোনা ধরা দেয়ালের রূপ, তা-ও ফুটে উঠেছে কাব্যিক ছোঁয়ায়।
৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব’ (আইআইইউএসএফএফ)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফপিএস) এ আয়োজনকে সহযোগিতা করে নরওয়েজিয়ান দূতাবাস এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, তারুণ্যের সংলাপ, ম্যাগাজিন প্রকাশনা, আর্ট ক্যাম্পসহ ছিল বেশ কিছু আকর্ষণীয় ইভেন্ট। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বাংলাদেশ, ফ্রান্স, পোল্যান্ডের তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ছিল ‘স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা। পরদিন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল জলবায়ুবিষয়ক গ্রাফিতি উদ্বোধন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র প্রদর্শনী তো ছিলই। এবারের আসরে ৯৬টির বেশি দেশ থেকে জমা পড়েছিল ১ হাজার ৬৭১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এগুলোর মধ্যে নির্বাচিত সেরা ২০০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী চলে দেশের সাত বিভাগের দশটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ৩০ নভেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা নামে চলতি আসরের।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ