বহুরূপী I দোসা দশা
ব্রেকফাস্ট, ব্রাঞ্চ কিংবা ইভনিং স্ন্যাকস—নাশতা হিসেবে সুস্বাদু দোসার কদর প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মজার ব্যাপার হলো, একধরনের দোসাবাটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দোসা বানানো যায়। মাসালা দোসা, জিনি দোসা থেকে চিলি চিজ দোসা—আপনি এই খাবারের সব বৈচিত্র্যই উপভোগ করতে পারবেন। দোসা আছে হরেক প্রকারই! চলুন, সবচেয়ে প্রচলিত কয়েকটির কথা জানা যাক।
দোসা বলতেই অনেকে প্লেইন দোসাকে বোঝান। কারণও আছে। হালকা নাশতা হিসেবে এর জুড়ি মেলা ভার। সাম্বার স্টু ও নারকেল চাটনি যোগে এর স্বাদ দারুণ। প্যানে দোসা বাটারের একটি পাতলা স্তর রেখে মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করলেই প্রস্তুত। অন্যদিকে, মাসালা দোসা একটু অন্য এক ধরনের। সাধারণত মাসালা আলু দিয়ে ভরা হয় একে। ঐতিহ্যগতভাবে আলু, পেঁয়াজ, আদা, কারিপাতা, লবণ ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি। তাতে পছন্দের শাকসবজি নিয়েও নিরীক্ষা করা সম্ভব। আবার, নীর দোসার জন্য প্রয়োজন মাত্র তিনটি উপাদান—পানি, লবণ ও চাল। এই দোসা অবিশ্বাস্য রকমের পাতলা। প্রস্তুত করা সহজ বলে জনপ্রিয়তাও বাড়বাড়ন্ত।
চিজপ্রেমীদের প্রিয় দোসা—চিজ দোসা। পনিরের টুকরো, কাটা পনির কিউব কিংবা টাটকা মোজারেলা পনির দিয়ে এই দোসা পূর্ণ করা হয়। চারপাশে চিজ থাকায় এবং একটি সস, অরিগানো টপিংসহ এটি পিৎজা ও দোসার মাঝামাঝি একটি স্বাদ এনে দেয়। আরও আছে পেসারত্তু! কী, খুব কঠিন নাম মনে হচ্ছে? এর সরল বাংলা হতে পারে—মুগ ডাল দোসা। মুগ ডাল, চিলা (প্যানকেক বিশেষ) ও হালুয়া যোগে বেশ সুস্বাদু। স্বাদ বাড়াতে যোগ করতে পারেন আলু কিংবা পনির ফিলিং।
এগ দোসার নামই বলে দেয় এর সঙ্গে ডিমের যোগ। এই দোসার ঘ্রাণ এবং ডিমের গুণাগুণ আপনাকে মুহূর্তেই করে তুলবে দোসাপ্রেমী! ভারতের তামিলনাড়ুতে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুডগুলোর অন্যতম। রান্নার সময় দোসার ওপরে একটি ডিম ভেঙে দিয়ে তৈরি করা হয়। অন্যদিকে, আপনি যদি চালের বদলে আটা বা ময়দা ব্যবহার করে দোসার উত্তর ভারতীয় সংস্করণ চেখে দেখতে চান, তাহলে রয়েছে হুইট দোসা। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে আটা সামান্য পানিতে মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা সম্ভব। নারকেলের চাটনি যোগে পরিবেশন করলে খেতে সুস্বাদু লাগে।
স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য রয়েছে ওটস দোসা। একই সঙ্গে সুস্বাদু ও কুড়মুড়ে। এতে গাঁজনের দরকার পড়ে না। ওটস গুঁড়ার সঙ্গে পানি মিশিয়ে ঝটপট বানানো যায়। চাইলে মসুর ডালও যোগ করতে পারেন। আরও পুষ্টিকর করে তুলতে বানাতে পারেন শাকসবজি দিয়েও।
ডায়েট মেইনটেইনে যারা ছাড় দিতে নারাজ, তাদের জন্য আছে মিনি সয়া দোসা। এতে রয়েছে অধিক ফাইবার, যা অতিরিক্ত ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে। এই দোসা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সয়া মিল্ক ও গমের আটা, যা শরীরে সরবরাহ করে বাড়তি এনার্জি। অন্যদিকে, সেট দোসা খুব হালকা ও স্পঞ্জি। একসঙ্গে তিনজন খাওয়ার উপযোগী। সকালের নাশতায় কিংবা বনভোজনে এর বেশ কদর। রান্নার পাঁচ ঘণ্টা পরও এই দোসাগুলো অবিশ্বাস্য রকমের নরম থাকে। চিনাবাদামগুঁড়া, তিলের চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করতে পারবেন।
আরও আছে মহীশূর মাসালা দোসা। খুবই মসলাদার। দোসা বাটা, লাল মরিচ, রসুন, লাল চাটনি আর আলু ভাজি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা সম্ভব। এটি সাম্বার স্টু ও নারকেল চাটনি যোগে খেতে উপযুক্ত। ভারতের বেঙ্গালুরু ও মহীশূরে বেশ জনপ্রিয়। দেশটির কর্ণাটক রাজ্যের দাভাঙ্গেরে উদ্ভাবিত বিশেষ দোসার নাম বেনে দোসা। বেনে অর্থ মাখন। এই দোসা সাধারণ চাল, উরদ ডাল ও পাফ করা চাল দিয়ে বানানো হয়। ওপরে থাকে মাখন। চাটনির সঙ্গে মসলাদার আলুর থালা প্রায়শই সঙ্গী হয় এর।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট