skip to Main Content

ফিচার I বসন্ত এসে গেছে

শীতযাপন প্রায় শেষের দিকেই বলা চলে। আবহাওয়ার অঙ্ক মিলিয়ে সময় এখন আবার পালাবদলের। বাক্স-পেটরা গোছাতে আর দেরি কেন

স্পটলাইট এখন ক্রমেই ঘুরতে শুরু করবে স্প্রিং ফ্যাশনে। খাতা-কলমে বসন্ত আসতে দিন কয়েক বাকি থাকলেও শীতপোশাক বাক্সবন্দী করার প্রস্তুতি কিন্তু শুরু হয়ে যায় এর মধ্যেই। আবহাওয়ার তো আর কারও কথা শোনার বালাই নেই; তাই তার মর্জি বুঝে এগোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নইলে বসন্ত বাতাসও শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে পারে। নিয়ম মেনে যদি কিছু কাজ করা যায়, খুব বেশি ঝক্কি ছাড়াই শীত থেকে বসন্তের ওয়্যারড্রোব চেঞ্জটা সেরে নেওয়া যাবে। তবে এর অনেকটাই নির্ভর করবে কাবার্ডে থাকা পোশাকের পরিমাণের ওপর। শীতের পোশাকগুলো শুধু বছরের এ সময়েই পরা হয়, নাকি হুটহাট যখন-তখন পরতে ইচ্ছা করে, সেটাও মাথায় রাখা চাই। পুরো প্রক্রিয়া খুব কম সময়ে হয়ে যেতে পারে, আবার সারা দিন লেগে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
টেক ইট ইজি। পছন্দের কোনো গান ছেড়ে পুরো ব্যাপারটা উপভোগের চেষ্টা করলে হয়তো কাজটা আরও দ্রুত হবে। এমন ওয়্যারড্রোব ডিটক্স বছরে দুবার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে ওয়্যারড্রোবের আনাচে-কানাচেও দেখার সুযোগ মেলে, বোঝা যায় অনেক দিন ধরে কোন কোন আউটফিট একদম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
ডিক্লাটার
কারণ, এটা সেলফ কেয়ারের সমতুল্য। হ্যাপার হলেও। সঠিক উপায়ে করা গেলে বেশ ফলপ্রসূও বটে। যেমন ডিক্লাটারের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন বেছে নেওয়া যেতে পারে। ছুটির দিন হলে তো আরও ভালো। কিছুটা বাড়তি সময় দেওয়া যাবে। পুরোটা উইন্টার ওয়্যারড্রোব ঘাঁটা যাবে ভালোভাবে। না হয় কয়েক ঘণ্টা বাড়তি সময় যাক। শুরুটা করতে হবে ওয়্যারড্রোবের সব শীতের কাপড় নামিয়ে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী পোশাকগুলো ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। যেমন ট্রাউজার, জাম্পার, সোয়েটার, শাল ইত্যাদি। এতে রুম অগোছালো দেখাবে না। ধারণা মিলবে কী কী আছে সংগ্রহে। তা গোছানো সহজ হবে। এরপর তিনটি ক্যাটাগরিতে সব আইটেম ভাগ করে রাখতে হবে। কিপ, ডোনেট/সেল, থ্রো এওয়ে। অর্থাৎ একটি ক্যাটাগরি হবে কী কী রেখে দেওয়ার, সেগুলো নিয়ে। একটি পোশাক বিতরণ অথবা বিক্রির জন্য। সর্বশেষ ক্যাটাগরিটি হবে ফেলে দেওয়ার জন্য। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আইটেমটা কি গেল বছর গায়ে উঠেছিল, নাকি শুধু শুধুই আলমিরার জায়গা দখল করে ছিল। কিংবা গায়ে কি এখনো ঠিকঠাকমতো হয়। আর শেষ প্রশ্ন, মনে কি এখনো মায়া আছে প্রোডাক্টটার জন্য? যদি উত্তর না হয়, তাহলে এর জায়গা হবে বিতরণ অথবা বিক্রির জন্য। জমা করে রাখা পোশাকের সঙ্গে। আর যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে ফের কাবার্ডে ফেরত। এ ব্যাপারে নিজের সঙ্গে কোনো লুকোচুরি চলবে না। কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু ঘরে পরার অজুহাত কিংবা বছরের পর বছর পরা হয়নি, অথচ তা নতুন করে স্টাইল করার মিথ্যা প্রতিজ্ঞা পুরো প্রক্রিয়ার কার্যকারিতাই ভেস্তে দেবে। কোনো পোশাকের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকলে যদি একেবারেই ফেলে দেওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে আলাদা কোথাও স্টোর করে রাখা যেতে পারে। এতে করে প্রয়োজনীয় কাপড়গুলোর সঙ্গে মিক্স হবে না।
তারপর গোছানোর পালা। একবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলে নিজের সুবিধা অনুসারে কাবার্ড গুছিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শীতপোশাক যেমন ভারী চাদর, জাম্পার, স্কার্ফ, গ্লাভসসহ অন্যান্য গরম কাপড় ধুয়ে স্টোর করতে হবে ভ্যাকুয়াম ব্যাগে। তারপর সব বাক্সবন্দী করে উঠিয়ে রাখতে হবে আলাদা কোনো জায়গায়। অবশ্যই মেইন ওয়্যারড্রোবের বাইরে। ব্যস, এভাবেই শীতের কাপড় সরিয়ে বসন্ত উপযোগী পোশাকের জন্য জায়গা করে নেওয়া যাবে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: সৎ থাকতে হবে শতভাগ। হয়তো পরা হয় না কোনো পোশাক বা একেবারে প্রয়োজন নেই, তা কোনোভাবেই ধরে রাখা যাবে না।
রিফ্রেশ অ্যান্ড রিস্টার্ট
নতুন পোশাক না কিনেই। কারণ, হুটহাট কেনাকাটা ব্যয়বহুল, অপচয়ী এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। সুখবর হচ্ছে, খুব বেশি খরচ না করেই ওয়্যারড্রোব সাজিয়ে নেওয়া যাবে বসন্ত উপযোগী উপায়ে। সহজ কিছু নিয়ম মেনে—
 লেয়ারিং। কারণ, বসন্তের মর্জি বোঝা বড় দায়। কখনো কনকনে বাতাস দেওয়া সকাল, আবার দুপুর গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। এ ক্ষেত্রে লেয়ারিংই ভরসা। উষ্ণতার ওঠানামার সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়। যেমন একটি লাইটওয়েট টপ বা কামিজের সঙ্গে পাতলা জাম্পার পরে নিয়ে সঙ্গে রাখা যেতে পারে একটি ব্লেজার বা জ্যাকেট। ইচ্ছেমতো যেমন গায়ে তোলা যাবে এগুলো, শরীর থেকে সরিয়েও নেওয়া যাবে যখন-তখন।
 উল, ক্যাশমেরের মতো ভারী অনুভূতি দেওয়া ফ্যাব্রিকগুলো বসন্ত উপযোগী নয়; বরং কটন, লিনেন, সিল্কের মতো হালকা ফ্যাব্রিকগুলোর সঙ্গে অদলবদল করে নিলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এগুলো স্বস্তির সঙ্গে সাজে যোগ করবে সতেজ ফুরফুরে আমেজ।
 ওয়্যারড্রোব ঘাঁটলে তাতে কয়েক রঙের পোশাকের উপস্থিতি থাকবেই। বসন্তে উজ্জ্বল রং আর প্রিন্টের পোশাকগুলো ওয়্যারড্রোবের সামনের দিকে রাখা ভালো। শীতের আলোহীন দিন শেষে উজ্জ্বল, প্যাস্টেল, ফ্লোরাল আর বোল্ড প্যাটার্ন পুরো গেটআপকেই বদলে দেবে।
 হেভি বুট নয়; বসন্তে লাইটওয়েট স্যান্ডেল, স্নিকার আর লোফার পায়ে গলানো যেতে পারে। স্টাইলিশ আউটলুকের পাশাপাশি স্বস্তি মিলবে শতভাগ।
 মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ সিজন বললেও ভুল হবে না এতটুকু। শীতপোশাকগুলো অনায়াসেই পরে নেওয়া যাবে হালকা বসন্ত উপযোগী পোশাকের সঙ্গে, নতুন লুক তৈরির জন্য। যেমন নরম, আরামদায়ক একটি সোয়েটারের সঙ্গে ফ্লোয়ি স্কার্টের জোড় কিংবা স্প্রিং উপযোগী পোশাকের সঙ্গে উইন্টার কোটও মন্দ দেখাবে না।

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: মৃদুলা ও প্রসাদ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: চন্দন
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top