skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I যত্নে গোমাজ

সপ্তদশ শতাব্দীর সৌন্দর্যকৌশল। এত যুগ পর আবার সাড়া জাগানোর কারণ? খতিয়ে দেখতে হয় বৈকি!

সৌন্দর্যসচেতন? তাহলে তো এক্সফোলিয়েশন নিয়ে কম-বেশি ধারণা অবশ্যই আছে। ত্বকচর্চার অন্যতম ধাপ এটি। উপরিস্তরে জমে থাকা ধুলা-ময়লা দূষণ দূরে সহায়ক। মৃতকোষ সরিয়ে ত্বককে নতুনতর করে তুলতে যথাযথ। নিয়মিত ও সঠিক প্রক্রিয়ায় এক্সফোলিয়েশন লোমকূপ পরিষ্কার রাখে। ফলে ব্রণ, অ্যাকনে, বুড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। এক্সফোলিয়েশনের একদম বেসিক এই-ই।
তিনটি ফর্ম রয়েছে এ কৌশলের। ফিজিক্যাল, কেমিক্যাল আর মেকানিক্যাল। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন হচ্ছে স্ক্রাব অথবা ড্রাই ব্রাশ ব্যবহারে ত্বকের মৃতকোষ দূর করার প্রক্রিয়া। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনে ব্যবহৃত হয় এক্সফোলিয়েটিং এফেক্টযুক্ত হরেক রকমের এনজাইম আর কেমিক্যাল কম্পোনেন্টে তৈরি পণ্য যেমন—কেমিক্যাল পিল। এগুলোর মূল কাজ ত্বকের মৃতকোষ ভেঙে দেওয়া। অন্যদিকে মেকানিক্যাল এক্সফোলিয়েশন হচ্ছে বিশেষায়িত যন্ত্রের ব্যবহারে মৃতকোষ সারাইয়ের প্রক্রিয়া।
এই তিনটি প্রক্রিয়াই বেশ জনপ্রিয় এক্সফোলিয়েশনের জন্য। তবে আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে, যা অনেকের অজানা। তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত কৌশলটি ফরাসিদের মস্তিষ্কপ্রসূত। ফরাসি বিপ্লবের পূর্ববর্তী সময়ে সেখানকার শেষ রানি মারি অ্যান্টয়নেত্তা অভিনব এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ফেস মাস্ক প্রস্তুত করেছিলেন। তাতে ব্যবহৃত হয়েছিল ফরাসি ব্র্যান্ডি, ডিম, গুঁড়া দুধ আর লেবু। নাম দেওয়া হয়েছিল গোমাজ। যা এসেছে ফ্রেঞ্চ ‘গোমার’ শব্দটি থেকে, যার অর্থ টু ইরেজ বা মুছে ফেলা।
পরিচয় সন্ধান
এটি মূলত কেমিক্যাল ও ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের সমন্বিত রূপ। নানা ধরনের এনজাইম-সংবলিত এক্সফোলিয়েটর দিয়ে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন করা হয় এ প্রক্রিয়ায়। আর হাতে অর্থাৎ ম্যানুয়ালি মাসাজ করে এক্সফোলিয়েট করা হয় বলে মেলে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের উপকারিতা। তবে ফ্রেঞ্চ এ টেকনিকে টিপিকাল ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটরে ব্যবহৃত দানাদার এক্সফোলিয়েটিং ফর্মুলেশন যেমন কফি গ্রাউন্ড, মাইক্রোক্রিস্টাল আর জোজোবা বিডস ব্যবহৃত হয় না। এমনকি এক্সফোলিয়েটিং অ্যাসিডযুক্ত কেমিক্যাল সলিউশনও মাখা হয় না। ফলে অন্য যেকোনো এক্সফোলিয়েশন প্রক্রিয়ার তুলনায় গোমাজ বেশ কোমল। স্পর্শকাতর ত্বকের যত্নেও যথাযথ।
প্রক্রিয়ার পুরোটা
গোমাজে ব্যবহৃত এক্সফোলিয়েটর মূলত এনজাইমসমৃদ্ধ ফর্মুলেশনে তৈরি হয়। উৎস গাছ অথবা ফল। এগুলো প্রোটিওলাইটিক এফেক্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বকের উপরিস্তরে থাকা মৃতকোষের প্রোটিনগুলোকে দ্রবীভূত করে দেয়। ফলে তা দূর করা সহজ হয়। গোমাজ এক্সফোলিয়েটরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্যাপেইন, ব্রোমেলেইন, প্যানক্রিয়াটিন আর ট্রিপসিন নামক এনজাইমগুলো। সাধারণত ক্রিম, পেস্ট, লিকুইড অথবা জেল ফর্মুলার হয়ে থাকে এই বিউটি প্রোডাক্টগুলো। এগুলো ব্যবহারের শর্ত একটাই—মাখার পর ত্বকে ভালোভাবে শুকাতে দিতে হবে। প্রক্রিয়া শুরুর আগে পরিষ্কারও করে নেওয়া চাই ত্বক। তারপর সামান্য ভেজা থাকতেই গোমাজ এক্সফোলিয়েটর মাখিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে বসতে দিতে হবে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে। ফর্মুলা শুকিয়ে শক্ত হয়ে এলে আলতো হাতে আঙুল দিয়ে ঘষে ঘষে উঠিয়ে নিতে হবে। প্রোডাক্টের উঠে আসা আস্তরের সঙ্গে উঠে আসবে মৃতকোষ আর দূষণ। তারপর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ময়শ্চারাইজার মেখে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মত, শুরুর দিকে সপ্তাহে একবারই এই ধরনের এক্সফোলিয়েশন ত্বকের জন্য যথেষ্ট। এতে প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পণ্যগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে। ফল যদি ইতিবাচক হয়, পরে না হয় দুদিন করে নেওয়া যাবে।
যাদের জন্য
লোমকূপের মুখ উন্মুক্ত করে দেওয়া, কোলাজেনের উৎপাদন ত্বরান্বিত করা ছাড়াও অ্যাকনে হ্রাস আর ত্বকের গভীরে আরও ভালোভাবে যেন পণ্যের উপকারিতা পৌঁছে যায়, তা নিশ্চিত করে গোমাজ। ত্বকের সুরক্ষা দেয়ালের এতটুকু ক্ষতি না করে। তুলনামূলকভাবে কোমল হওয়ায় এটি স্পর্শকাতর এবং শুষ্ক ত্বকের যত্নে বেশ কার্যকর। তবে যাদের অ্যাকটিভ অ্যাকনে রয়েছে, তাদের জন্য এটি করা মানা। কারণ, ত্বক থেকে ঘষে ঘষে তোলার সময় সংক্রমিত লোমকূপ থেকে ব্যাকটেরিয়া পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। যাদের রোজাশিয়া আছে, তাদের জন্যও এটি মানা। যাদের মুখে অনেক পিচ ফাজ, তাদের জন্যও ব্যথাদায়ক হতে পারে গোমাজ এক্সফোলিয়েশন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এক্সফোলিয়েশনের অন্যান্য প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেকাংশে কোমল হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। ত্বকে লালচে ভাব, পিলিং, প্রদাহ এমনকি ব্যথাদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে প্রক্রিয়া সঠিক না হলে। গোমাজ এক্সফোলিয়েন্টগুলো গাছ আর ফল থেকে নির্যাসিত এনজাইমে তৈরি বলে লেবেলের উপাদানগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। কোনোটা থেকে অ্যালার্জির উদ্রেক হয় কি না, সে ক্ষেত্রে আগেভাগেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। গোমাজ এক্সফোলিয়েন্টগুলোর সবচেয়ে সাধারণ উপাদান প্যাপেইন থেকে অতিমাত্রার অ্যালার্জির রিঅ্যাকশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সীমাবদ্ধতা
এক্সফোলিয়েশনের এই প্রক্রিয়া নিরাপদ বটে, তবে খুব বেশি শক্তিশালী নয়। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের ক্ষেত্রে গ্লাইকোলিক আর ল্যাকটিক অ্যাসিড যেমন সহজে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ফেলে, গোমাজ পৌঁছাতে পারে ত্বকের উপরিস্তর অব্দি। আর্দ্রতা রক্ষায় সহায়ক হলেও হাইপারপিগমেন্টেশন সারাতে খুব বেশি কার্যকর নয়। তাই ত্বকের চাহিদা বুঝে তবেই বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top