তনুরাগ I গো ফর গ্লাইকোলিক
মুখত্বকের যত্নে বহুল প্রচলিত। বিলো দ্য নেক স্কিন কেয়ার বেনিফিটও কিন্তু কম নয়। টিকটকে ট্রেন্ডিং ভিডিওগুলো চোখ এড়িয়ে যায়নি নিশ্চয়ই
এমন উপাদানই তো চাই। যা মুখত্বকের যত্নে যেমন যথাযথ, দেহত্বকের তদারকিতেও দারুণ। তার ওপর যদি হয় কোমল, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই একটি পাওয়ার হাউস অ্যাকটিভ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড।
সারসংক্ষেপ
আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এটি। মূলত আখ থেকে নির্যাসিত। আণবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম। অর্থাৎ ত্বক ভেদ করে গভীরে প্রবেশের ক্ষমতা এর দুর্দান্ত। তাই বিশেষায়িত তো বটেই, অ্যাট হোম স্কিন কেয়ার রুটিনে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের দেখা মেলে অহরহ। মৃতকোষগুলোকে জুড়ে রাখা বন্ধনীকে আলগা করে দিতে কাজ করে। ফলে এগুলোর সারাই সহজ হয়। বের হয়ে আসে উজ্জ্বল, সতেজ ত্বক। ঘনত্বভেদে এর কার্যকারিতাও ভিন্ন হয়। ইন অফিস গ্লাইকোলিক অ্যাসিড পিলের ঘনত্ব মাঝারি হয়ে থাকে, যা ত্বকের টোন আর টেক্সচারের উন্নতি সাধনে সহায়ক। সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকে এগুলোতে। ত্বকের নির্জীবতা, হাইপারপিগমেন্টেশন, হালকা দাগছোপ আর সূক্ষ্ম রেখা সারাইয়ে সহায়ক। অন্যদিকে অ্যাট-হোম স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে সাধারণত ৫ থেকে ৭ শতাংশ গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকে; যা অনায়াসে সয়ে যেতে পারে সব ধরনের ত্বক। ব্যবহারের শুরুতে মাত্রা এমনটাই রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অঙ্গরাগে
দেহত্বকের যত্নে এমন উপাদানের বিকল্প নেই বললেই চলে। ব্যবহারের প্রক্রিয়াতেও তেমন ঝক্কি নেই। অথচ উপকারিতা হরেক রকমের। যেমন—
দেহত্বকের টোন এবং টেক্সচারের উন্নতি সাধন
লোমকূপের বদ্ধমুখ খুলে দেওয়া
বডি অ্যাকনে, বাম্প আর রেজর বার্ন প্রতিরোধ
ত্বকের শুষ্কতা সারাই।
বিশেষ করে গরম আর স্যাঁতস্যাঁতে মৌসুমে এর ব্যবহার দারুণ কাজের। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত বডি শাওয়ার ক্লিনজার ব্যবহার করা যায় গোসলের সময়। বডি অ্যাকনে আর রেজর বাম্প প্রতিরোধে। এরপর মেখে নেওয়া যেতে পারে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ লিভ-অন এক্সফোলিয়েটিং ট্রিটমেন্ট লোশন। শুষ্ক ত্বক সারাইয়ের এ জাদুপণ্য প্রতিদিন ব্যবহার উপযোগী। তবে বর্তমানে স্টার প্রোডাক্ট হচ্ছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার। সাধারণত মুখত্বকে ব্যবহার উপযোগী এ পণ্য দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে দেহত্বকের নানা সমস্যা সারাইয়ে। ফলাফলও মিলছে ইতিবাচক। সাধারণত ৭% গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত এ টোনিং সলিউশন নারিশিং স্কিন কেয়ার ট্রিটমেন্টের অংশ হতে পারে অনায়াসে; যা কোমলভাবে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। ফলে নিয়মমাফিক ব্যবহারে ত্বক দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং তুলনামূলকভাবে তরুণ। কী কী উপায়ে দেহত্বকে ব্যবহার উপযোগী এই টোনার, সেটা জেনে নেওয়া চাই আগেভাগে। আরও মনে রাখতে হবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড মুখত্বকে যেমন অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে, দেহত্বকেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া নিরাপদ ব্যবহারের আগে। তবে কোনোভাবেই এটি অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। তাতে ঘটতে পারে হিতে বিপরীত। ত্বকের প্রতিরক্ষা স্তরের বেজে যেতে পারে বারোটা!
খুশকি দূরে
চুলের খুব সাধারণ সমস্যা, কিন্তু ভীষণ অস্বস্তিকর। খুশকি মূলত মাথার ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষের মতোই। ধুলো, ময়লা, জীবাণু আর ব্যবহৃত পণ্যের বিল্ডআপের মিশেল বলা চলে। দূর করতে বিশেষায়িত স্যালনে মিলবে স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট। কিন্তু মজার ব্যাপার, এ ট্রিটমেন্টগুলোতে মাথার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করার জন্য যে সলিউশন ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উপস্থিতি। তাই একই উপকারিতা মিলবে বাসায় বসেই, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার ব্যবহারে। খুশকি দূরে এর কার্যকারিতার কারণ? এই আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মৃতকোষ সারাইয়ে দুর্দান্ত। সেই সঙ্গে চুল আর মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতেও দারুণ। কিন্তু স্ক্যাল্পে ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে এ ক্ষেত্রে।
মাথা ধোয়ার আগে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট।
সরাসরি মাথার ত্বকে ঢেলে আলতো হাতে ঘষে ঘষে মাসাজ করতে হবে। রেখে দিতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
তারপর সাধারণভাবে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
আন্ডার আর্মের দাগ ও দুর্গন্ধ রোধে
নানা কারণে বগলের নিচে কালো দাগ-ছোপ দেখা দিতে পারে। ওবেসিটি কিংবা ডায়াবেটিসের মতো নানা রকম রোগ, অতিরিক্ত শেভিং—সবই থাকতে পারে তালিকায়। এ ক্ষেত্রে দাগ হালকা করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এর নিয়মিত ব্যবহারে বগলের ত্বকের টেক্সচার সেরে ওঠে। হালকা হতে শুরু করে পিগমেন্টেশন। এটি এই অংশে ত্বকের পিএইচ লেভেলকেও নামিয়ে আনতে সহায়ক; যা জীবাণু তৈরি রোধ করে, কমায় দুর্গন্ধ। আন্ডার আর্মে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে দুবার। কটন প্যাডে টোনার ঢেলে নিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে বগলের ত্বক। তবে শেভিং বা ওয়াক্সিংয়ের পরপর এটি কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। অস্বস্তিদায়ক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
ফাটা গোড়ালি থেকে পরিত্রাণ
গোড়ালি ফাটা সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগে। এ ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজিং পণ্যের ব্যবহারে জরুরি আর্দ্রতার জোগানই একমাত্র সমাধান। কিন্তু গোড়ালিতে জমে থাকা শুষ্ক মৃতকোষ তাতে খুব বাধা দেয়। পুরোপুরি শুষে নিতে দেয় না ময়শ্চারাইজার। ফলে পণ্যের উপকারিতা পৌঁছাতে পারে না আক্রান্ত স্থানে। তাহলে উপায়? ময়শ্চারাইজিংয়ের আগে সেরে নেওয়া চাই এক্সফোলিয়েটিং। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কিন্তু দারুণ কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর। টোনারে এর উপস্থিতি কোমলভাবে এক্সফোলিয়েট করবে গোড়ালি। সারাবে টেক্সচার। রোজ একবার ব্যবহারই যথেষ্ট। দিনে নয়, রাতে। কটন প্যাড গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে গোড়ালির শুষ্ক জায়গায় বুলিয়ে নিতে হবে ভালো করে। তারপর ময়শ্চারাইজিং ফুট ক্রিম অ্যাপ্লাই করা চাই। তারপর এক জোড়া মোজা পায়ে পরে ঘুমাতে গেলেই হবে।
আরও সমস্যায়
কনুই অথবা হাঁটু শুষ্ক; কালশিটে দাগ পুরো জায়গাজুড়ে। এর সমাধানও মিলবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনারে। সপ্তাহে দু-তিন দিন ব্যবহারে সারবে শুষ্কতা। হালকা হবে দাগ। শেভিংয়ের পর পা জুড়ে ছোট ছোট বিন্দুর মতো দাগ? একে বলা হয় স্ট্রবেরি লেগ। নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন এটি সমাধানের অন্যতম উপায়। কারণ, মৃতকোষ জমে লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে এর সৃষ্টি। এ ক্ষেত্রে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের এক্সফোলিয়েন্ট প্রপার্টি সমস্যা সমাধানের দারুণ উপায় হতে পারে। এটি মৃতকোষ সরায়; লোমকূপ থেকে ইনগ্রোন হেয়ার পরিষ্কার করে দেয়। ফলাফল—স্ট্রবেরি লেগস দৃশ্যমানভাবে কমে আসে। সাধারণত রাতে ব্যবহারই ভালো। রোজ একবার, ব্যস। কটন প্যাড অ্যাসিডে ভিজিয়ে নিয়ে পায়ে বুলিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনমতো ময়শ্চারাইজার মেখে নিতে হবে।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: শাকিরা তামান্না
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল