skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I পাফিফায়িং

উদ্দেশ্য, দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ। শীতে তো বটেই, হঠাৎ বৃষ্টিতেও তাপমাত্রার পারদের নিম্নগামিতায় দারুণ উপযোগী। প্রায় নব্বই বছর ধরে প্রয়োজনের তালিকায় অবস্থান। এবারের মনসুন মাতাবে ট্রেন্ডের শীর্ষে থেকে

মূলত উইন্টার আউটারওয়্যার হিসেবে পরিচিত পাফার জ্যাকেট। তো এই ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে শীতপোশাক নিয়ে গল্পের পেছনের কারণ আছে নিশ্চয়ই। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বর্ষাকালে নিম্ন তাপমাত্রা অনুভূত হয়। ফলে সেখানকার অধিবাসীদের শুধু রেইনকোটে নিস্তার মেলে না; একই সঙ্গে তাপমাত্রার ব্যাপারটাও বুঝে চলতে হয়। মূলত সেসব এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রেইনপ্রুফ পাফার। মূল সূত্র পাফার জ্যাকেটের। সঙ্গত দিয়েছে বৃষ্টিপ্রতিরোধী বিশেষত্ব।
ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেললেই জানা যায়, উইন্টার আউটারওয়্যার হিসেবে পাফার জ্যাকেট জনপ্রিয় হওয়ার কারণ এর উষ্ণ আরাম। ১৯৩৬ সালে প্রয়োজন থেকেই এর উদ্ভাবন। ক্লদিং চেইন ব্র্যান্ড এডি বাওর নিয়ে আসে বাজারে। এর পেছনে আছে বাস্তব এক কাহিনি। ডিজাইনার বাওর নিজেই অনুভব করেন এই পোশাকের প্রয়োজন। অবসরে মাছ ধরতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন হাইপোথারমিয়াতে। এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি। এমন হলে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। মানবদেহ নিজে থেকেই তাপ উৎপন্ন করতে পারে। কিন্তু হাইপোথারমিয়া হলে দেহ যতটা তাপ উৎপন্ন করে, তার চেয়ে বেশি দ্রুত কমে যেতে থাকে। ফল—আকস্মিক অসুস্থতা। দেহের তাপ অস্বাভাবিক মাত্রায় কমে যাওয়ার কারণে মৃত্যুও হতে পারে। তাই তাপমাত্রার নিম্নমুখী হওয়া মোটেই হালকাভাবে নেওয়ার জো নেই। এ কারণে তিনি তৈরি করেন ফেদার ইনসুলেটেড লং কোট; যা বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দেহ সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাফার জ্যাকেট যতটা ফ্যাশন এলিমেন্ট, তার চেয়ে অনেক বেশি মাস্ট হ্যাভ। রিটেইল ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন এডিটেডের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২৩ সালে পাফার জ্যাকেট দারুণ ব্যবসা করেছে। বর্তমানে বহুল বিক্রীত পণ্যতালিকার দুই নম্বরে এর অবস্থান। রেইনপ্রুফ পাফার দুইভাবে বৃষ্টির প্রবেশ রোধ করে।
 ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট পাফার বৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এতে ওয়াটারপ্রুফ আউটার সেল ব্যবহারের কারণে পানির প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু পানি কোনোভাবেই প্রবেশ করবে না এমন নিশ্চয়তা দেয় না। হালকা বৃষ্টির জন্য এটি উপযোগী। অর্থাৎ সচেতন থেকে বৃষ্টিতে ব্যবহার করতে হবে এই জ্যাকেট।
 ওয়াটারপ্রুফ পাফার জ্যাকেট পরিধানকারীকে পানি কোনোভাবেই স্পর্শ করতে দেয় না। পানির জন্য দুর্ভেদ্য। এ ধরনের জ্যাকেট ভারী বর্ষায় ব্যবহারের উপযোগী।
বর্ষা উপযোগী পাফারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উপাদান। এই জ্যাকেটের অংশ দুটি—বাইরের অংশের কাজ বাতাস ও পানি থেকে দেহ নিরাপদ রাখা। ভেতরের অংশ দায়িত্ব নিয়েছে বাইরের তাপমাত্রা থেকে দেহকে রক্ষা করার। রেইনপ্রুফ পাফারের বাইরের অংশে ডিউরেবল ওয়াটার রেপেলেন্ট অর্থাৎ পানি প্রতিরোধকের প্রলেপ দেওয়া হয়। তবে এ ধরনের কোটিংয়ের টিকে থাকার ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর ভেতরে ব্যবহার করা হয় তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো উপাদান।
রেইনপ্রুফ পাফারের বৈশিষ্ট্য
 সিনথেটিক ফিলার ব্যবহার করা হয়। ফলে পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মূল উপাদান হিসেবে থাকে নাইলন অথবা পলিয়েস্টার। কারণ, পানির স্পর্শে নষ্ট হয়ে যায় না এসব ফ্যাব্রিক।
 পাফার তৈরি করার পদ্ধতি আর কুইল্ট তৈরির পদ্ধতি একই। একাধিক লেয়ারযোগে তৈরি হয় পাফার। ফলে উত্তাপ ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত উপাদানের অবস্থান সুবিন্যস্ত হয়।
 বাইরের আস্তরণ তৈরি করা হয় নাইলন অথবা পলিয়েস্টার ব্যবহার করে; যাতে পানিতে ভিজে না যায়।
 পানিরোধী করার জন্য রাসায়নিক প্রলেপ ব্যবহার করা হয় আউটার সেল অংশে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই কোটিং শুধু পানির বিরুদ্ধাচরণ করে না; দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখতেও ভূমিকা রয়েছে এর।
কেনার আগে
 রেইনপ্রুফ পাফার কেনার সময় গুরুত্ব দিতে হবে মানের দিকে। ভালো মানের পাফার বেছে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
 লেবেলে দেওয়া তথ্য থেকে পানি প্রতিরোধী হিসেবে জ্যাকেটটি কতটা কার্যকরী, তা জেনে নেওয়া সম্ভব।
 ডিউরেবল ওয়াটার রেপেলেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঠিক করার পদ্ধতি পণ্য বিবরণীতে উল্লেখ আছে কি না দেখে নিলে ভালো।
 ওজনে হালকা হলে ব্যবহার আরামদায়ক হবে।
 ব্রিদেবল ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি পাফারগুলোকে পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রাখা যেতে পারে। কারণ, তাতে দেহ থাকবে স্বস্তিতে। যেমন নাইলন ও পলিয়েস্টার।
দায়বদ্ধতা
এ ধরনের জ্যাকেটে প্রচুর ফিলার ব্যবহার করা হয়, যা আসে রাজহাঁস অথবা হাঁসের পালক ও গলার পাতলা চামড়া থেকে। এই পাখিসহ আরও অনেক প্রাণী পালক, পশম, গলার চামড়া সংগ্রহের সময় চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। নৃশংসতার চরম রূপ হিসেবে ইতিমধ্যে এ ধরনের কার্যক্রমের বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে পিপল ফর দ্য ইথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিমেল (পেটা)। কিন্তু ঝুম বৃষ্টির জন্য তৈরি করা রেইনপ্রুফ পাফারে এ ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় না। অর্থাৎ বর্ষা উপযোগী পাফার তৈরিতে কোনো প্রাণী প্রাণ হারায় না। তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় বিকল্প পদ্ধতি। যার পুস্তকীয় নাম ফেদার-ফ্রি চেম্বার টেকনোলজি।
যত্ন
পাফার পরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফেরা যেতেই পারে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, পাফারে যেন পানি না জমে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী উপায় হচ্ছে এয়ার ড্রাই করে নেওয়া। বাতাসের পর্যাপ্ত চলাচল রয়েছে এমন জায়গায় শুকাতে পারলে এই আউটারওয়্যার দীর্ঘদিন কার্যকরী থাকবে।
 ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top