ফিচার I ব্রাশ নাকি আঙুল
বহুদিনের বিতর্কের উদ্দেশ্য একটাই! মেকআপ প্রয়োগের জন্য সর্বোত্তমটা বাছাই
মেকআপ বসলেই তো হলো! অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে কোনটি সেরা, প্রায়োরিটি লিস্টে কাকে সবচেয়ে ওপরে রাখা যায় বা ফিনিশিংয়ে পার্থক্যটা কেমন বোঝা যায়—এসব নিয়ে মেকআপ লাভারদের এত দ্বিধাদ্বন্দ্বের আসলে কারণটা কী।
ব্রাশ কেন
মেকআপকে একদম স্টুডিও রেডি দেখাতেই ব্রাশের আবির্ভাব। আগের দিনের সেলিব্রিটিরা মেকআপের নির্ভুল প্রয়োগে চেহারাকে ক্যামেরা রেডি রাখতে ব্যবহার করতেন বিশেষ এই টুলগুলো। যারা দৈনন্দিন কনসিলার কিংবা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য মেকআপ ব্রাশ কাজ করে ম্যাজিকের মতো। চেহারার কাট-কাট ভাব আরও ফুটিয়ে তুলতে, ব্রোঞ্জার ও কনট্যুরের কার্যকারিতা উপভোগের সময় মেকআপ ব্রাশের জুড়ি নেই।
যাদের ত্বক একটু বুড়িয়ে গেছে, কিংবা লোমকূপ অপেক্ষাকৃত বড়, তারাও মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের সময় বেছে নিতে পারেন মেকআপ ব্রাশ। আঙুল দিয়ে মেকআপ অ্যাপ্লাই করতে গেলে প্রায়ই লোমকূপে প্রোডাক্ট আটকে যায়, সে ক্ষেত্রে মেকআপ ব্রাশ ব্যবহার করা শ্রেয়।
ফ্লাফি পাউডার ব্রাশ বা ব্লাশ ব্রাশ কিন্তু একাই যথেষ্ট। ড্রামাটিক লুক তৈরিতে যেমন দুর্দান্ত, তেমনি পুরো মেকআপের ওপর হালকা প্রেসড পাউডার বুলিয়ে নেওয়ার জন্যও জুতসই।
টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে মেকআপ আর্টিস্টদের কাজ সমাদৃত। বর্তমান জেন-জি যেন মেকআপ গুরু বলতে মেকআপ আর্টিস্টদেরই বোঝে। একজন পেইন্টারের কাছে তুলি যেমন তার অস্ত্র, তেমনি মেকআপ আর্টিস্টদের কাছে ব্রাশ। বিয়েশাদি থেকে বিশেষ কোনো আয়োজন—মেকআপ ব্রাশ তার জাদুকরি স্পর্শে যে কাউকে সেলিব্রিটি বানিয়ে দিতে পারে। তবে ব্রাশ ব্যবহারেও আছে নিয়মকানুন, যা যথাযথভাবে প্রয়োগ না করলে বার্বি ডলের পরিবর্তে যে কারও চেহারা দেখাতে পারে অ্যানাবেলের মতো! তাই শুধু সাবধানতা নয়, মেনে চলা চাই ছোট ছোট কিছু নিয়ম। এ ক্ষেত্রে ইউটিউব টিউটরিয়ালগুলো হতে পারে দারুণ সল্যুশন। কোন ব্রাশের কাজ কী অথবা মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কী করে ব্রাশ ধরতে হয়—এ বিষয়গুলো যদি রপ্ত করা যায়, তবে যে কেউই দারুণ একটি লুক তৈরি করে নিতে পারবেন।
আঙুলের উপযোগিতা
হালের আলিয়া ভাট কিংবা কিম কারদাশিয়ান; মেকআপকে আরও ন্যাচারাল আর ডিউই লুক দিতে, মেকআপের মেকি ভাব এড়াতে প্রায়ই ব্যবহার করে থাকেন আঙুল। এমনকি তাদের মেকআপ আর্টিস্টরাও বাদ যান না এ ক্ষেত্রে। কাঙ্ক্ষিত নো মেকআপ মেকআপ লুক পেতে প্রায়শই মেকআপ আর্টিস্টদের আঙুলকে দিতে হয় অগ্নিপরীক্ষা। ফলাফল কিন্তু বড় পর্দা আর অ্যাওয়ার্ড ফাংশনগুলোই বলে দেয়।
আঙুল দিয়ে পেইন্টিং করতে যেমন বেগ পেতে হয় না, মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রেও তাই। তেমন সম্যক জ্ঞানের দরকার পড়ে না বলে যে কেউ আঙুলের সাহায্যে সহজে মেকআপ অ্যাপ্লাই করতে পারেন। আঙুলের সাহায্যে বিভিন্ন মোশন মেনে মেকআপ খুব দ্রুত ত্বকের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নেওয়া যায়। তাই যারা এখনো আনাড়ি, বিনা দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন এই পন্থা।
বাজেট-ফ্রেন্ডলি উপায়ে মেকআপ লুক তৈরির ক্ষেত্রে ব্রাশের খরচ বাঁচানোর দারুণ বিকল্প হতে পারে আঙুল। মেয়াদোত্তীর্ণের হ্যাপা নেই, তাই পরিবর্তনের ঝামেলায়ও পড়তে হয় না। আবার ব্রাশ পরিষ্কারের যে বাড়তি ঝক্কি, তা-ও পোহাতে হয় না।
আঙুলের সাহায্যে মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, শরীরের তাপমাত্রা অনুযায়ী হাতে নেওয়া মেকআপ প্রোডাক্টটি তার তাপমান সেট করে নেয়। ফলে মেকআপের অ্যাপ্লিকেশনে একটা ন্যাচারাল লুক আসে। কোনো কেকি ভাব তৈরি হয় না। ত্বকে মিশে যায় সাবলীলভাবে। যাদের ত্বক সেনসিটিভ অথবা শুষ্ক, তাদের জন্য মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনের দারুণ উপায় এটি।
ক্ষেত্রবিশেষে ব্রাশের তারতম্য হতে পারে, কিন্তু আঙুলের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা একদমই নেই। শুধু মানা চাই কিছু নিয়মকানুন। ব্রাশ ব্যবহারের সময় ঝেড়ে ফেলতে হয় বলে প্রোডাক্ট তুলতেও হয় বেশি। কিন্তু আঙুলের ক্ষেত্রে তা পুরো বিপরীত। যতটুকু প্রোডাক্ট হাতে মাখানো হয়, সবটাই ত্বকে যায়। তাই প্রোডাক্ট তুলতে হবে বুঝেশুনে। যতটা মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার না করলেই নয়, ঠিক ততটুকু নিতে হবে আঙুলের ডগায়। ঠিকমতো ব্লেন্ড করতে পারলে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।
মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনে ব্রাশ ব্যবহার করা হবে নাকি আঙুল—সিদ্ধান্ত পুরোটাই ব্যবহারকারীর। কেউ হয়তো ফাউন্ডেশন ব্যবহার করছেন মেকআপ স্পঞ্জ দিয়ে, আবার লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করছেন আঙুলের ডগা দিয়ে। আবার কেউ কেউ হয়তো পুরো লুকটাকে অ্যাসথেটিক করে তুলছেন শিল্পীর তুলির মতো ব্রাশ ব্যবহারে। কিন্তু দিন শেষে সবার চাওয়া- মেকআপ যেন দেখতে ঠিকঠাক লাগে। তাই মেকআপ করার সময় টুলের পাশাপাশি প্রাধান্য দিতে হবে কৌশল এবং কেমন লুক চাই, সেদিকেও।
বিদিশা শরাফ
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল