skip to Main Content

মনোজাল I হেয়ার ডিপ্রেশন

বেহাল চুলে বাড়ছে বিষণ্নতা, নাকি বিষণ্ন মন বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে চুলের। খোঁজ রাখতে হবে তো!

পুরো পৃথিবীতে অর্ধেকের বেশি মানুষ কোনো না কোনো সময় চুল নিয়ে হতাশা বোধ করেন। এ নতুন কিছু নয়। কিন্তু হেয়ার ডিপ্রেশন বা চুলের বিষণ্নতা? এবার নিশ্চয় নড়েচড়ে বসবেন অনেকে। ভাববেন, এ আবার কী। দেশের বেশির ভাগ মানুষ আসলে এই টার্মের সঙ্গে পরিচিত নয়। চুলের বিষণ্নতা হলো, যখন চুল নিয়ে মনে বেশি দুঃখ বা চাপ অনুভূত হয়। বিষণ্নতা অনেক কারণে হতে পারে। চুলের মানসিক প্রভাব নিয়ে হয় বলে এটি চুলের বিষণ্নতা। চুল পড়া ও বিষণ্নতার মধ্যে দ্বিমুখী সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা। সহজ অর্থে, চুল পড়া যেমন বিষণ্নতার কারণ হতে পারে, আবার মন বিষণ্ন থাকার কারণেও চুল পড়তে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে মানসিক চাপও চুল পড়ার কারণ হতে পারে; যা কর্টিসলের মাত্রা বাড়ায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অধিক বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চুল পড়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ বেশি।
অনেকের মনে হতে পারে, চুলের বিষণ্নতা আসলে সত্যি, নাকি খামখেয়ালি ভাবনাপ্রসূত? এককথায় বলা যায়, ব্যাপারটি সত্যি; মোটেই কল্পনা নয়। সমাজ একজন ব্যক্তিকে কীভাবে দেখে, তাতে চুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধরা যাক, কেউ দেখতে খুব সুদর্শন বা সুদর্শনা, কিন্তু মাথার চুলগুলো বেশ রুক্ষ, পাতলা, অসুন্দর বা একদমই টেকো, তাহলে মানুষ সম্পর্কে চলতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে? গভীরে ভাবলে বোঝা যাবে, চুলের ভূমিকা অস্বীকারের উপায় নেই।
তবে ছোটখাটো ব্যাপারে চুল নিয়ে হতাশা বোধ করা আর হেয়ার ডিপ্রেশনে ভোগা অবশ্য ভিন্ন জিনিস। এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, টার্মটি মূলত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান নারীদের নিয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। তাদের কাছে চুলের গুরুত্ব আমাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। অতীতে তো বটেই, বর্তমানেও চাকরি থেকে শুরু করে স্কুলে বরখাস্ত কিংবা উপহাসের শিকার—সবকিছু চুলের কারণে ঘটে থাকে বলে তাদের বিশ্বাস। রিলেশনশিপ স্পেশালিস্ট মাকালাহ হ্যাম্পটনের মতে, কেউ মানুক বা না মানুক, চুল তার আশপাশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, ‘যখন আমি নিজের চুল পছন্দ করছি না, তখন এটি নিয়ে বাইরে যাওয়া বা অন্যদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাওয়ার ইচ্ছার ওপর সত্যিই প্রভাব ফেলে। তারপরেও বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে একরকম অনুভূতি হয় যে, অন্যরা বোধ হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যদিও সম্ভবত তা নয়। ফলে এটি আমাকে নিজের অতিরিক্ত সম্পর্কে আত্মসচেতন করে তোলে এবং মনোজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।’
অনেকে এই উক্তির সঙ্গে একমত না-ও হতে পারেন, তবে এটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। কারণ, প্রায় সব কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানই এই মতে বিশ্বাসী। মনোবিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করেন, চুল নিয়ে দুঃখ বা চাপ অনুভব করা চুলের হতাশারই একটি অংশ। এটি আপনাকে রাগান্বিত, বিব্রত বা কম আত্মবিশ্বাসী বোধ করাতে পারে। এতে করে অনেকে সামাজিকীকরণ এড়িয়ে চলা শুরু করেন। কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে ভালো ফল করার ক্ষেত্রেও অন্তরায় হতে পারে। তার মানে, হেয়ার ডিপ্রেশন বেশ জটিল বিষয়। ব্যাপারটি কেবল অনুমান নয়, ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ আফ্রিকান-আমেরিকান নারীর মধ্যে চুল নিয়ে বিষণ্নতা কাজ করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, পৃথিবীর অনেক দেশে নারী, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষদেরও কথোপকথন শুরুর সময় চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় চুল। কেন? কারণ, কারও দিকে তাকালে এটিই প্রথম জিনিস, যা প্রথমে লক্ষ করা হয়। অন্তত ফ্যাশন সাইকোলজি তা-ই বলে। চুলকে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়, যা বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। কাউকে যদি বলা হয়, তার চুল যথেষ্ট ভালো নয়—এই বক্তব্যের প্রভাবে তার আত্মসম্মান পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিকভাবে বেশির ভাগ শ্বেতাঙ্গ নারীর চুল স্ট্রেট হয়, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের হয় কোঁকড়া। এর কারণে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পান না কিংবা পেলেও চাকরির সম্ভাবনা কম। ব্যাপারটি শুনতে হাস্যকর হলেও দেখা গেছে, সোজা চুলের কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা প্রফেশনালি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সফল। এ পরিসংখ্যান কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে, যার প্রভাব তারা কিছুতে এড়াতে পারেন না। এক গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা অন্য যেকোনো গ্রাহকের তুলনায় হেয়ার প্রোডাক্টের ওপর ৯ গুণ বেশি ব্যয় করেন। ব্যবহারের দিক থেকে হেয়ার-কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে রাখতে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তাদের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়; বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্যে চাপ ফেলে। তবে সুখবর হচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ডগুলোর উত্থান ঘটছে; পাশাপাশি তাদের প্রাকৃতিক চুল নিয়ে কম জটিলতা তৈরি হচ্ছে। চুল নিয়ে নিজেদের ছোটখাটো কষ্টের গল্পগুলো ভাগ করে অন্যদেরকে নিয়ে সহায়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কোঁকড়া চুলের আখ্যান পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন।
চুল নিয়ে কম-বেশি অভিযোগ সবার থাকে। তবে কীভাবে বোঝা যায়, চুল নিয়ে বিষণ্নতা তৈরি হচ্ছে? প্রথমত চুল বিষয়ে অযথা উদ্বেগ বা বিরক্তি বোধ করা। নিজের মধ্যে একধরনের হতাশা, মূল্যহীনতা বা অসহায়ত্বের অনুভূতি জাগবে। নানাভাবে চুলের স্টাইল বা হেয়ার কাটের ব্যাপারে শখ, আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে যাবে। এতে শরীরে ক্লান্তি, শক্তির অভাব, ধীরগতি অনুভূত হবে।
চুল পাতলা, স্ট্রেট বা সুন্দর নয়, ক্রমাগত ঝরে যাচ্ছে, খুব বেশি বড় হয় না—এ ধরনের অভিযোগ প্রায় সবার আছে। তবে ব্যাপারটি বিষণ্নতায় গড়ালে তা মোকাবিলা জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, বিষণ্নতা একেকজনকে একেকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত চুল ভালো রাখতে চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত মদ্যপান না করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা, চুলের যত্নে একটি রুটিন তৈরি করে নেওয়ার কথা বলেন। এত যত্ন নেওয়া বেশ পরিশ্রমের কাজ; সময় ও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছু করার পরও কখনো কখনো চুল মনমতো না-ও হতে পারে। তাতে বিষণ্ন হয়ে পড়া কাজের কথা নয়। দুঃখবোধ চুলের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুললে তো সমস্যা বাড়বে। তাই চুল সুন্দর রাখার জন্য নিজেকে ঠিক রাখা জরুরি।

 রত্না রহিমা
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top