skip to Main Content

টেকসহি I ট্র্যাশ টু ট্রেজার

শুধু বর্জ্য হ্রাসই নয়; সময় এখন সৃজনশীল উপায়ে সাসটেইনেবিলিটির সংস্কৃতিকে উসকে দেওয়ার। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর প্রচারে তারই পষ্টতা

প্রতিবছর ফ্যাশন শিল্পে যোগ হয় নতুনত্ব। মডেল আর স্টাইলিস্টদের হাতছানিতে মার্কেট ছেয়ে যায় নতুন রঙে। তবে মুদ্রার অপর পিঠ অতটা সুন্দর নয়। সাম্প্রতিক সার্ভেতে জানা গেছে, প্রতিবছর শুধু ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকেই ৯২ মিলিয়ন বর্জ্য অপসারিত হয়, যার বেশির ভাগ পরিণত হয় ল্যান্ডফিলে! এটি শুধু পরিবেশগত চ্যালেঞ্জে আর সীমাবদ্ধ নেই; বরং ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দূরদর্শিতার অভাবে। পরিত্যক্ত কাপড় রিসাইকেল কিংবা সম্পদে রূপান্তর করার মাধ্যমে রুখে দেওয়া সম্ভব গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিংবা পরিবেশদূষণের মতো বিষয়গুলো। প্রয়োজন শুধু সচেতন ব্যবহারের।
টেক্সটাইল ওয়েস্ট পচতে কয়েক দশক সময় লেগে যায়, অর্থাৎ পচনের আগ পর্যন্ত টেক্সটাইল ওয়েস্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে, সাকল্যে পৃথিবীর বোঝা বাড়ায়। এই পচন প্রক্রিয়ায় নির্গত মিথেন গ্যাস জলবায়ুর পরিবর্তনেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।
ফ্যাশনের উত্থানপতন সে তো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট থিতু হবার আগেই চলে আসে নতুন আরেক ট্রেন্ড। ফলাফল—টেক্সটাইল রিসাইক্লিং হবার ক্ষীণ সম্ভাবনা। সম্প্রতি এক সার্ভে করে জানা যায়, শুধু ইউরোপেই বছরে জনপ্রতি টেক্সটাইল ওয়েস্টের পরিমাণ ১১ কেজি, যার ৮৭ শতাংশ পরিণত হয় ল্যান্ডফিলে। পুরো বিশ্বের হিসাব করতে গেলে শুধু ল্যান্ডফিলটাই পাওয়া যাবে হয়তো। এ ছাড়া গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে পানির প্রয়োজন হয় অনেক বেশি, তাই এর ওপর চাপটাও যায় অতিরিক্ত।
টেক্সটাইল রিসাইকেল করা যায় সাধারণত দুই ভাগে। পুরোনো টেক্সটাইলকে রিসাইকেল করে সিনথেটিক বা নাইলন টাইপ কাঁচামাল নতুন তৈরি করার মাধ্যমে। কিংবা ফাইবারকে ছোট ছোট করে টুকরা করে নতুন ফ্যাব্রিক তৈরি করার মাধ্যমে। টেক্সটাইল এর লাইফস্প্যান দীর্ঘ করার মাধ্যমে একই ফাইবারকে বারবার ব্যবহার করা হয়, একদিকে যেমন এর রিসাইকেল পাওয়ার বেশি হয়, তেমনি পচনেও সময় লাগে বেশি।
তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও বর্জ্যরে কারণে টেক্সটাইল সঠিকভাবে রিসাইকেল করা এখন সময়ের চাহিদা। বারবার ব্যবহারযোগ্য করার পাশাপাশি টেক্সটাইল পুনর্ব্যবহারের সুবিধাও কম নয়।
পরিবেশগত প্রভাব
কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্যগুলোতে থাকা নানা রাসায়নিক মাটি ও পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী। এর প্রভাব দূর করতে টেক্সটাইল ওয়েস্টের ক্রমাগত পুনর্ব্যবহার হতে পারে সুন্দর সমাধান। ল্যান্ডফিল থেকে টেক্সটাইল সরিয়ে দূষণ কমানো ছাড়াও ল্যান্ডফিল সংরক্ষণ করতে হলে টেক্সটাইল রিসাইকেল প্রসেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিসাইকেলিং তুলা ও সিনথেটিক ফাইবারের মতো কাঁচামালের চাহিদা কমায়। ফলে পানি ও জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভার্জিন পলিয়েস্টারের বদলে রিসাইকেলড পলিয়েস্টার তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্তত ৭০ শতাংশ শক্তি সাশ্রয় সম্ভব। টেক্সটাইল রিসাইকেল করার মাধ্যমে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনা সম্ভব। কার্বন নিঃসরণ যত কম হবে, পরিবেশের জন্য তা ততটা কম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থনৈতিক সুবিধা
নতুন নতুন পোশাক কিনে আলমারি ভর্তি করার পর সেই পোশাক পরিণত হয় ল্যান্ডফিলে। রিসাইকেল করার মাধ্যমে কাঁচামালের খরচ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি এটি পরিবেশবান্ধব শিল্প সাশ্রয়েও ভূমিকা রাখে। যার মাধ্যমে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী কম খরচে আরও অধিক পরিমাণে ফ্যাব্রিক সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এখন তো অনেক নামীদামি ব্র্যান্ড পোশাক রিসাইকেলের মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ আরও আপগ্রেড করার কাজ করে যাচ্ছে।
সামাজিক সুবিধা
জনস্বার্থে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে পোশাক রিসাইকেল করার মাধ্যমে সম্ভব সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন। একের পর এক কাপড় কিনে ওয়্যারড্রোব বোঝাই না করে, সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তার মাধ্যমে করা যেতে পারে ওয়্যারড্রোব রিসাইকেল। এ ছাড়া এনজিওগুলো যদি নিজ নিজ উদ্যোগে বর্জ্য অপসারণ এবং পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে পারে, তবে সহজেই রিসাইকেলিংয়ের এই প্রক্রিয়াকে একটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
রিসাইকেলের যাত্রা শুরু হয় পরিত্যক্ত ফ্যাব্রিক সংগ্রহের মাধ্যমে। পুরোনো কাপড় দেওয়া-নেওয়া, পৌর বর্জ্য ব্যবস্থা অপসারণ এবং ল্যান্ডফিল থেকে ব্যবহারযোগ্য কাপড়গুলোকে বাছাই করে শুরু হয় রিসাইকেলিং। কাপড়ের ধরন, মান এবং পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় ডোনেট করার মাধ্যমেও রিসাইকেলিং প্রক্রিয়ার শুরু হতে পারে। এতে সুবিধাবঞ্চিতরা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ থেকে বাঁচে, তেমনি কাপড়ের শেলফ লাইফও বেড়ে যায়।
এ ছাড়া অপরিধানযোগ্য কাপড়কে অনেক সময় টুকরো টুকরো করে কেটে রাসায়নিকভাবেও প্রক্রিয়াজাত করা হয়; যা পরে কাঁচামালে রূপান্তরিত হয়। রিসাইকেলের প্রসেস সম্পূর্ণ হলেই শুধু কাপড়কে বাজারজাত করা যায়।
বৈশ্বিকভাবে কাপড়ের চাহিদা দূর করতে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্টকে নিয়ন্ত্রণে রেখে পরিবেশে সবুজের প্রভাব আরও বাড়াতে টেক্সটাইল রিসাইকেলের চাহিদা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে একে আরও সাসটেইনেবল করতে হলে সস্তা-দামি সব ফ্যাব্রিকের সঠিক লাইফস্প্যান জরুরি। দিতে হবে যথাযথ রিসাইকেল ভ্যালু। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের কাপড়ের গুণগত মান ধরে রাখার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যরে দিকেও মনোনিবেশ করা জরুরি। এতে করে টেক্সটাইল ওয়েস্টের পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। রিসাইকেল শুধু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নয়; বরং হওয়া চাই সবুজ ভবিষ্যৎ, সাসটেইনেবল ফ্যাশন এবং আর্থিক উন্নয়নের পরিচায়ক।

 বিদিশা শরাফ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top