ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ম্যাটারনিটি মান্ত্রা ২.০
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জন্ম যাদের, তাদেরকে জেনারেশন জেডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ২৮ ছুঁয়েছেন তাদের অনেকে। হয়েছেন বাবা-মা। আবার অনেকে হতে যাচ্ছেন। তাদের চাওয়া-পাওয়ার ভিন্নতা আমলে নিলে এটা সহজে অনুমেয় যে প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে তাদের চাহিদা আনকোরা। বিষয়টি নিশ্চিতে করতে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। সেগুলো থেকে জানা যায় চাহিদার বিস্তরণ ঠিক কত দূর
জেনারেশন জেড। ফ্যাশনের ধারা বদলে দিতে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তাদের। অফিস ওয়্যার থেকে ম্যাটারনিটি—সবেতেই পছন্দ খানিকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। শুধু পোশাকের সৌন্দর্যে আত্মহারা হওয়ার মানুষ তারা নন। জার্নাল অব ফ্যাশন মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে প্রকাশিত গবেষণা পরিপত্র ‘দ্য ফিউচার অব ম্যাটারনিটি ওয়ার্ল্ড: জেনারেশন জেড’স এক্সপেকটেশন অব ড্রেসিং ফর প্রেগন্যান্সি’তে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জানা যায়, এই প্রজন্ম দেহের পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে পোশাক চায়। দেহের প্রতিটি অঙ্গের আলাদা করে গুরুত্ব তাদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত। গর্ভকালীন শুধু ঢিলে জামা নয়, কার্যকরী নকশা চাই-ই চাই। সেখানে বোঝাপড়ার কোনো সুযোগ নেই। আরাম আর ফ্যাশনের পাল্লা মাপে হতে হবে সমান।
জেনারেশন জেড দিনের একটি বড় অংশ কাটায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সাবলীলতার সঙ্গে বাস্তব জীবনকে সোশ্যাল হ্যান্ডলে তুলে আনতে তারা পারদর্শী। বেবি শাওয়ার, জেন্ডার রিভিলিং, বেবি বাম্প ফটোশুট তাদের প্রেগন্যান্সি জার্নি উপভোগের অংশ। মমি ব্লগিংয়েও দেখা যায় হবু মায়ের প্রস্তুতি। অনলাইন দুনিয়াতে এমন নানা অভিনব উপায়ে মাতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা এখন অনেকটাই সাধারণ বিষয়। ফলাফলে তৈরি হচ্ছে বডি পজিটিভিটি। হবু মায়ের ন্যাচারাল অ্যাপিয়ারেন্সকে সহজভাবে নিতে শিখছে বিশ্ব।
যত্নআত্তি
এই বিশেষ সময়ে হবু মায়ের শরীর গঠনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে। এমন নতুনত্বের সঙ্গে আগে থেকে কারও পরিচয় থাকে না। তাই প্রয়োজন হয় নতুন পোশাকের। জেনারেশন জেডরা এই পরিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরতে পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে স্ট্রেচেবল ফ্যাব্রিক তাদের প্রথম পছন্দ।
ব্রিদেবল ফ্যাব্রিক ব্যবহার করলে তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয়। হরমোনের পরিবর্তনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করে এই প্রজন্ম। বাতাস চলাচলের উপযোগী ফ্যাব্রিকে তাই আগ্রহ তাদের।
যেহেতু শারীরিক পরিবর্তন আনকোরা। তাই এই গঠনের সঙ্গে মিল রেখে সরল নকশার পোশাক প্রয়োজন পড়ে। অতিরঞ্জন নয়। বাড়াবাড়ির বদলে ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকু আড়ম্বর।
ইতিবাচক ভাবনা
এই প্রজন্ম ব্যক্তির চাহিদাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। সব ধরনের দৈহিক গঠনের জন্য ম্যাটারনিটি ওয়্যার তাই প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী মায়ের ওজন বাড়ুক অথবা একই থাকুক, যেমনই হোক না কেন, সব অবস্থাতেই যেন আরামদায়ক পোশাক পাওয়া যায়, সেই বিষয় জেনজিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ধরনের বডি শেমিং নয়, বরং বডি পজিটিভিটিতে বিশ্বাসী তারা।
টেকসই হলে সই
জেনারেশন জেড যেহেতু পরিবেশ নিয়ে সচেতন, তাই তারা এমন ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতে চায়, যেটি টেকসই, মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। ধরণীতে আবর্জনা তৈরি করবে এমন উপাদান জেনজিদের কম টানে।
দেখব এবার জগৎটাকে
জেনারেশন জেড যে ফ্যাশন-সচেতন, সে বিষয়ে দ্বিমত নেই বললেই চলে। ম্যাটারনিটি ড্রেসের বিষয়েও তারা কেতাদুরস্ত। যেকোনো একটি লুজ ড্রেস পরলেই চলবে ধরনের নয়। তারা সন্তানের আগমন ধ্বনিকে উদ্যাপন করেন। আপ্লুত হন আবেগে। ঘরে বন্দী থাকার পক্ষপাতী তারা নন; বরং কর্মক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াতে যেমন চান, তেমনি চায় উৎসবেও উপস্থিত থাকতেন। তাই তাদের পছন্দের তালিকায় থাকে এমন পোশাক, যা একদিকে যেমন ক্যাজুয়াল আয়োজনে পরা যাবে, তেমনি ফরমাল অকেশনেও যথাযথ।
দামে লাগাম
এই প্রজন্ম আর্থিক বিষয়ে সচেতন। তারা ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টে সিদ্ধহস্ত। অপচয়ে ভীষণ অনাগ্রহী। তাই ফ্যাশন-সচেতন মানেই ব্যাগভর্তি কাপড়ে হাতভর্তি, বিষয়টা এমন নয়। পোশাক অনুযায়ী দাম হলে তবেই কেনাকাটার আগ্রহী হতে দেখা যায় তাদের। তাই মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলোর মনে রাখতে হবে, পোশাক অনুযায়ী বিনিময় মূল্য না হলে আগ্রহ হারাতে পারেন জেন জি মমিরা।
প্রযুক্তিপ্রেম
এই ডিজিটাল নেটিভ জেনারেশন প্রযুক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। আধুনিকায়নের প্রতি তাদের আগ্রহ বিদ্যমান। ম্যাটারনিটি ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও এই একই সূত্র কার্যকরী। তাই ফ্যাশন আর প্রযুক্তির মিশেলে উদ্ভাবন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম, এমন অভিনব ফ্যাব্রিক তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে বলে ধারণা করা যায়।
সাহসে শান্তিতে
জেনারেশন জেড বডি পুলিশিংয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে গর্ভের সময়কে বিবেচনা করেন। আর এই সময়ে তারা কোনো ধরনের নেতিবাচকতা থেকে দূরে অবস্থানের পক্ষপাতী। তারা প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের সব পরিবর্তনকে উপভোগ করতে চান। তারা নিজেকে মনের মতো সাজিয়ে তুলতে চান। এমনকি অনেকের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস দেখা যাওয়ার মতো ঘটনার কথাও জানা যায় বিভিন্ন গবেষকের বরাতে। পেটের মেদ, বুকের মাপের বিষয়ে নিয়ে অস্বস্তি থেকে বের হয়ে আসেন অনেকে। নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করেন নতুন করে। নিজ দেহ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হওয়ার কারণে তারা প্রতিটি পরিবর্তনকে অনুভব করতে পারেন। ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল অবধি একাধিক গবেষণায় এ বিষয়ে চমৎকার তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায় নতুন ধারণা সম্পর্কে; যাকে গবেষণার পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে ফিজিক্যাল সেলফ কনসেপ্ট নামে। এই টার্মের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে নিজ দেহ সম্পর্কে ধারণাকে।
গবেষকেরা ধারণা করেন, যে ব্যক্তি নিজের দেহ সম্পর্কে যত বিশদভাবে জানেন, তার জন্য গর্ভকালীন পরিবর্তন মেনে নেওয়া তত বেশি সহজ হয়। যার প্রভাব দেখা যায় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রেও। নিজের দেহ সম্পর্কে জানা থাকলে গর্ভকাল-পরবর্তী অবসাদ আঁকড়ে ধরতে পারে কম। আরও জানা যায় জেনারেশন জেডরা নিজের দেহ সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে অবগত। পুরো গর্ভকালীন কী কী পরিবর্তন হতে পারে, তা-ও তাদের জানা। তাই তারা অবসাদে কম ভুগে থাকেন। পরিবর্তনকে তারা ইতিবাচকতার সঙ্গে গ্রহণ করতে জানেন। এমনকি এই জেনারেশন শপিং বিহেভিয়ারেও পাওয়া যায় বিশেষত্ব। তারা জানেন, ঠিক কোন সময় কেমন পোশাক কিনতে হবে। দেহের প্রয়োজন কেমন। আগের দুই জেনারেশন ওয়াই এবং এক্সের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রথম তিন মাসে দেহের পরিবর্তন না হওয়ার বিষয়ে জেনারেশন জেডের ধারণা তুলনামূলক বেশি বাস্তব। ফার্স্ট ট্রাই মিস্টারে জেনারেশন জেড খুব কমই ম্যাটারনিটি ওয়্যার শপিংয়ে আগ্রহী হয়; বরং এর পরের সময়ে বেশি কেনাকাটা করে থাকে। ৫ থেকে ২৫টি পর্যন্ত পোশাক একেকজন হবু মা কিনে থাকেন বলে জানা যায়। বিজনেস রিসার্চ ইনসাইটসের মতে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক ম্যাটারনিটি ওয়্যারের বাজারের আকার ছিল ২৪ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা ২০৩৪ সালে ৫০ দশমিক ৫১ মার্কিন ডলার হবে বলে ফোরকাস্ট করেছে সংস্থাটি।
দায় স্বীকার: জার্নাল অব ফ্যাশন মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রকাশিত গবেষণা দ্য ফিউচার অব ম্যাটারনিটি ওয়্যার: জেনারেশন জেড’স এক্সপেকটেশন অব ড্রেসিং ফর প্রেগন্যান্সি
সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট