skip to Main Content

কভারস্টোরি I দ্য রিবিল্ড জার্নি

আত্মপরিচয় নিয়ে যেন তীব্র সংকটে পরিপূর্ণ সময়। দিনরাত বাচ্চা সামলে আবার নিজের স্টাইলিং—অনেকের কাছেই আদিখ্যেতা। অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন তো অবশ্যম্ভাবী, বাহ্যিক গঠনেও বদল সুস্পষ্ট। ডেনিমের বোতাম আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা থেকে ফুল সাপোর্ট ম্যাটারনিটি ওয়্যারের মাঝে নিজেকে হারিয়ে খোঁজার অভিনব যাত্রা। এ সময় স্বচ্ছন্দই শেষ কথা বটে; কিন্তু স্টাইল কোশেন্টও যদি মিলে যায় ষোলো আনা, ক্ষতি কি? লিখেছেন রত্না রহিমা

একসময় বলা হতো, কুড়িতেই বুড়ি। অনেকের হয়তো মনে হবে; আরে, এই সেকেলে চিন্তা তো সেই অতীতের। সত্যি কথা। তবে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে মনে হবে, খুব দূরে কি আসা গেছে? প্রেক্ষাপট পাল্টেছে শুধু। কুড়ির বদলে এখন ব্যাপারটা হয়তো চিন্তা করা হয় মা হওয়ার ক্ষেত্রে। অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারীর বাস্তবতা হচ্ছে, মা হওয়ার পরই তারা নিজেকে বুড়ো ভাবতে শুরু করেন। ৫ শতাংশ অন্য রকম চিন্তা করলেও করতে পারেন, কিন্তু বাকিরা এভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত। মা হওয়ার পরই তাদের মনে হয়, সবকিছু বাচ্চার জন্য; নিজের জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই। চিন্তা-চেতনা, পোশাক-আশাক—সবকিছুতে তখন তার শিশুটিই প্রাধান্য পায়। তাতেও সমস্যা নেই। মাতৃত্ব খুব সুন্দর ও ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা; যাতে প্রত্যেক নারীই এক ধরনের পূর্ণতা পান।
তবে মা হওয়ার অর্থ এই নয়, নিজের সবকিছুর সঙ্গে আপোস করতে হবে; বিশেষ করে স্টাইল ও ফ্যাশনের সঙ্গে। অনেকের হয়তো জানা ফ্যাশন নিয়ে বিখ্যাত সেই প্রবাদ; যা অনেকটা এ রকম, ‘ফ্যাশন বিশেষ কিছু নয়, এটি আসলে দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতাকে টিকিয়ে রাখার বর্ম।’ মাতৃত্ব হচ্ছে জীবনের বাস্তবতা। আর সেই সুন্দর ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রায় নিজেকে ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশ রাখার মানে হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে এক নতুন, গতিশীল জীবনকে আলিঙ্গন করা। কে বলে জীবন শেষ? বরং শুরু। শিশু জন্মের পর ফ্যাশনকে কীভাবে কার্যকরী কিন্তু স্টাইলিশ উপায়ে লাইফস্টাইলে যোগ করা হবে, তা আবিষ্কারের চেষ্টা করা চাই! মানানসই পোশাক, আনকোরা স্টেটমেন্ট পিস এবং শরীরের নতুন পরিবর্তনগুলোর সম্মিলনে। সর্বোপরি একজন নতুন মা হিসেবে স্টাইলিশ ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে সব সময়। মনে হতে পারে, এসব উপদেশ বইয়ের পাতায় পড়তেই ভালো লাগে, বাস্তবে করাটা কঠিন। সে ক্ষেত্রে তাহলে একজন মায়ের গল্প শোনা যাক।
নাম রেনে অরডিন। লন্ডনের একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মা হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পর অনুভব করলাম, আবেগের মাত্রাতিরিক্ততা আমাকে গ্রাস করছে। এটি ছিল আমার পরিচয়ের হারিয়ে যাওয়া সত্তার একটি অংশ পুনরুদ্ধার করার অভিযান; যা প্রসবকালীন এবং পরবর্তী নিদ্রাহীন রাতের মধ্যে ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছিল। আমার পুরো মনোজগতের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নবজাতক; কিন্তু আয়নায় প্রতিচ্ছবি যেন ভিন্ন গল্প বলছিল। যেখানে দেখা যাচ্ছিল বিশ্রামের জন্য আকুল এক চেহারা। প্রসবোত্তর সময় সামলে ওঠার সময়টা অনেকটা গোলকধাঁধা পেরিয়ে যাওয়ার মতো। এ সময় শারীরিক রূপান্তর প্রায়শই তীব্র ও অপ্রত্যাশিত হয়; যা নতুন মায়েদের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপারই বটে। একটা সময় পছন্দসই কিছুই যখন শরীরের উপযোগী মনে হচ্ছিল না, তখন এক আলমারি কাপড়ের মাঝে, আমি জিনস আর একটি হালকা নীল ব্লাউজ খুঁজে পেয়েছিলাম। পরে দেখলাম, আমাকে দারুণ লাগছে। তখন মনে হলো, রূপান্তরের এই যাত্রা আসলে কোনো দৌড় নয়; বরং ধৈর্যের সঙ্গে অতিক্রম করার একটি পথ। উপলব্ধিটি মনে জাগাল যে, এটি অতীতকে পুনরুদ্ধার করার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়; বরং বর্তমানকে আলিঙ্গনের। পরে আর সমস্যা হয়নি। বিষণ্নতা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।’
রেনের গল্প থেকে আসলে অনেক কিছু জানা যায়। নানাভাবে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যারা সন্তান প্রসবের অলৌকিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের নিজেদের স্পেশাল ভাবা উচিত। আলাদা করে নিজের জন্য সময় বের করা জরুরি। ভাবতে হবে, পাল্টে যাওয়া শরীরকে নিজের কাছে পুনরায় ভালোবাসার যোগ্য করে তুলতে কোন পোশাক মানানসই হবে। কারণ, প্রথম শিশুর জন্মের পর প্রসবোত্তর বিষণ্নতার ছায়া বেশির ভাগ মায়েকেই আত্ম-অবহেলার পথে নিয়ে যায়। অথচ গবেষকদের মতে, ফ্যাশন ও স্টাইল মাতৃত্বের জন্য নেতিবাচক কিছু নয়; বরং আরামদায়ক ও মার্জিত পোশাকের সঙ্গে শরীরের নতুন এ রূপকে খাপ খাইয়ে নেওয়া আত্মার জন্য ঔষধি বটে। সঠিক পোশাক একটি পাল্টে যাওয়া শরীরে কেবল পোশাকের কাজই করে না, নিজেকে ফিরে যেতে সহায়তা করে। মনকে সান্ত¡না দেয় এবং আশ্বস্ত করে। প্রসবোত্তর পরিবর্তনের কঠিন সময়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সংগ্রামরত প্রত্যেক নতুন মায়ের জন্য যা জরুরি। মনে রাখা চাই, মায়ের শরীর একটি নতুন জীবন তৈরি করেছে, যা পুরো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। সুতরাং সেই শরীরকে আলিঙ্গন করা, ভালোবাসা এবং তার প্রাপ্য সৌন্দর্য দিয়ে সেটি সাজানো জরুরি। তাই মা বা সংসারের চাপে মুষড়ে পড়া নারী—যে-ই হোন না কেন, নিজেকে এমনভাবে সাজিয়ে তোলা চাই, যা কেবল অতীত নয়, সামনের নতুন যাত্রাকে প্রতিফলিত করবে।
অনেক মায়ের মতে, সন্তান জন্মের পরের দিনগুলোতে আয়না তাদের কাছে প্রতিপক্ষের মতো হয়ে ওঠে। নিজেকে সেখানে দেখতে ইচ্ছা করে না। তখনই আসলে প্রয়োজন পড়ে সঠিক পোশাক। এমন কিছু; যা আরাম ও স্টাইলের একটি নিখুঁত মিশ্রণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সুনির্বাচিত পোশাকের মানসিক প্রভাব বহুমুখী; বিশেষ করে প্রসবোত্তর পর্যায়ে আমরা যা পরি, তার মানসিক প্রভাবকে অবমূল্যায়ন করার উপায় নেই। কারণ, পোশাক নিজের সম্পর্কে ধারণা ও মেজাজ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। যে পোশাকে নিজেকে সুন্দর মনে হয় বা যা পরে ভালো বোধ হয়, সে পোশাকে আচরণ এবং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিফলিত হয়। এটি অনেকটা আত্মবিশ্বাসের বর্ম পরার মতো একটি স্পষ্ট অনুস্মারক। ফ্যাশন গবেষকেরা মনে করেন, স্টাইলিশ পোশাক একজন মায়ের কাছে এমন বার্তা দেয় যে, মাতৃত্বের জন্য তিনি তার স্টাইলের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেননি; বরং জীবনের এই সুন্দর অধ্যায় পুরোপুরি উপভোগের জন্য নিজেকে নতুনভাবে বিকশিত করার সুযোগ পেয়েছেন। এখানে পোশাক মুখ্য নয়; মায়ের নতুন পরিচয়কে সৌন্দর্যচর্চা ও স্টাইলিংয়ের সম্মিলনে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলাই প্রধান। যেমন একটি সুন্দর ফিটেড জিনস কিংবা একটি আকর্ষণীয় টপ বা চমৎকার সালোয়ার-কামিজ যে আনন্দ দেবে, তা রীতিমতো ম্যাজিক্যাল। কোকো শ্যানেলের একটি উক্তি আছে—ফ্যাশন এমন কিছু নয়, যা কেবল পোশাকের মধ্যেই বিদ্যমান। আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি বা চারপাশে সব সময় যা ঘটে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই মাতৃত্ব-পরবর্তী দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ এই পর্বে এমন পোশাক পরা উচিত, যা নতুন জীবন ও নারীত্বকে বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করে। তার জন্য ফ্যাশন বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই; সহজেই তা সম্ভব।
কালো জিনস ও লেগিংসে স্লিমিং সিলুয়েট
কালো। চিরন্তন সৌন্দর্যে যা সব সময় বলীয়ান। এটি এমন একটি কৌশল, যা প্রসব-পরবর্তী সময় শরীরকে আকর্ষণীয় দেখানোর উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পোশাকে কালো রং এমন সিলুয়েট তৈরি করে, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। নিখুঁত কালো জিনস বা লেগিংস, সঙ্গে ঢিলেঢালা ম্যাচিং টপ; যাতে আরামের সঙ্গে স্টাইলের প্রকাশ ঘটে; পাশাপাশি যা কার্বগুলোকে আড়াল করে দেয় সচেতনভাবে।
ব্যক্তিগত স্পর্শের সঙ্গে ট্রেন্ডের আলিঙ্গন
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ট্রেন্ডের আবির্ভাব ঘটে। মাতৃত্বের এই কঠিন সময়ে ট্রেন্ড থেকে ছিটকে পড়া কাজের কথা নয়। তবে সেখানে সতর্কতাও জরুরি। এমন ট্রেন্ড নির্বাচন করা যাবে না, যা নতুন পরিচয়ের সঙ্গে সংঘাত ঘটায়। যেমন অনেকে সাদা জিনস এবং অফ-শোল্ডার টপের আকর্ষণ এড়াতে পারেন না। অথচ এ সময় হয়তো সেগুলো তার শরীর ও প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই নয়। সুতরাং সে লোভ সামলাতেই হবে। আসলে, ট্রেন্ডি জিনিসপত্র অন্তর্ভুক্ত করা মানে অন্যদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা নয়; বরং এটি জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে ব্যক্তিপরিচয় প্রকাশের বিষয়ে নিবেদিত।
স্টেটমেন্টে অভিনব ফ্যাশন ফ্লেয়ার
প্রসবোত্তর দিনগুলোতে নতুন নতুন গল্পের সৃষ্টি হয়। সেখানে ফ্যাশন হতে পারে হৃদয়ের ছন্দময় সুর প্রকাশের নিজস্ব পদ্ধতি। স্টেটমেন্ট গয়নার দারুণ সব বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; সাধারণ টি-শার্ট ও লেগিংসের মতো পোশাককেও পাল্টে আত্মপ্রকাশের ক্যানভাসে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে। অনেকটা জাদুর কাঠির মতো, যা কেবল স্টাইলকেই উন্নত করে না; বরং করে তোলে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। একটি মোটা নেকলেস বা চুড়ির এক গোছাও শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে; যা লুককে আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি বোল্ড স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারে। যা বলে, ‘হ্যাঁ, আমি একজন মা, কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়; সেই সঙ্গে আমি আরও অনেক কিছু।’
আয়নায় আবার আবিষ্কার
মনোবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান জন্মের পর পরিবর্তনের এই সময়ে বেশির ভাগ তরুণী নারীতে রূপান্তরিত হন। তাদের প্রতিটি দিনই হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত বিকাশের দিকে একেক ধাপ, আর পোশাকগুলোর নিজস্ব স্টাইল বিবর্তনের প্রমাণ। পরিবর্তনগুলো কেবল আয়নায় সীমাবদ্ধ থাকে না; সেগুলো রীতিমতো আত্মার গভীরে প্রতিধ্বনিত হয়। এ সময় জরুরি হলো, মাতৃত্বের বিশৃঙ্খলায় নিজেকে হারিয়ে না ফেলা। ঘুমপাড়ানি গানগুলোর সুরে যেন নিজের হৃদয়ের গানগুলো পুরোপুরি ডুবে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা।
স্টাইল + সেলফ
সাহিত্যের ভাষায় স্টাইল হচ্ছে নিজস্বতার নির্যাসে তৈরি। মা হওয়ার পর প্রতিনিয়ত ডায়াপার পরিবর্তন এবং নিদ্রাহীন রাত যাপনের মধ্যে, নিজের সেই বিশেষত্ব ধরে রাখা কঠিনই বটে। মনে রাখা চাই, যে পোশাক পরা হয়, তা কেবল ফ্যাব্রিক নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু। এগুলো যেন পুরো যাত্রার আখ্যান, রূপান্তরের একটি ঘটনাক্রম। কেবল শরীরকেই নয়, আত্মাকেও এমন রং ও টেক্সচারে সজ্জিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মপ্রকাশের ক্যানভাস
নতুন মায়েদের কাছে ফ্যাশন হতে পারে ক্যানভাস বা তার পছন্দ ও পরিচয়ের ব্রাশস্ট্রোক। তাই তখন নিজস্ব ফ্যাশন বোধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। একসময় তিনি নিজেই আবিষ্কার করবেন কী তাকে উজ্জ্বল, আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। স্টাইলকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার এই সুযোগ গ্রহণ করে নারীত্ব আর মাতৃত্বের মিশ্রণ ঘটানো আবশ্যক। মাতৃত্বের এই সিম্ফনিতে, মা যে একজন নারীও, তা প্রাণবন্ততার সঙ্গে ধ্বনিত হওয়া জরুরি। কেবল পোশাক দিয়ে নয়; বরং ধারণায়, স্বপ্নে, নারীত্বের অদম্য চেতনায় নিজেকে সাজাতে হবে। ফ্যাশন হচ্ছে গল্পের মতো—গর্বের সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে সেটি পরিধান করা চাই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবার তো আর ফ্যাশন নিয়ে এত চিন্তাভাবনার সময় নেই। কেউ কীভাবে বুঝবেন, কোনটি তার জন্য মানানসই? সমস্যা নেই, এই লেখা তো সে জন্যই। মূল বিষয় একটাই—এমন পোশাক বেছে নেওয়া; যা একই সঙ্গে আরামদায়ক এবং আত্মবিশ্বাসী বোধ করায়।
বেসিকে বিনিয়োগ
ক্ল্যাসিক ফিটেড জিনস, সাদা টি-শার্ট এবং ক্ল্যাসিক কার্ডিগানের মতো মানসম্পন্ন পোশাকে বিনিয়োগ হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। এগুলো মাল্টিপারপাস। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করা যেতে পারে। অনায়াসে বিভিন্ন ধরনের লুক তৈরি করা সম্ভব হয়; যা স্টাইলিশ দেখাতে সাহায্য করবে।
কার্যকরী কিন্তু স্টাইলিশ জুতা
মায়েদের অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ক্ষণে ক্ষণে দৌড়াতে হয়, তাই তাদের আরামদায়ক ও স্টাইলিশ জুতা বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে স্নিকার, স্টাইলিশ কিন্তু আরামদায়ক ফ্ল্যাট আর অ্যাঙ্কেল ক্লোজড বুট বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এই বিকল্পগুলো আরাম ও ফ্লেয়ার—দুটোই দেয়, যা মায়েদের জন্য একেবারে উপযুক্ত।
মিনিমাল অ্যাকসেসরি
অতিরিক্ত গয়না এড়িয়ে যাওয়াই ভালো এ সময়। পরিবর্তে স্কার্ফ, বেল্ট বা টুপির মতো স্টেটমেন্ট পিস বেছে নেওয়া যেতে পারে। আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র অনায়াসে সহজ পোশাককেও উন্নত করতে পারে; পাশাপাশি স্টাইলিশ আর সুরক্ষিত রাখে।
লেয়ারিং
ব্যস্ত মায়েদের জন্য দুর্দান্ত কৌশল। একটি আরামদায়ক ট্যাঙ্ক টপ, ঢিলেঢালা কুর্তি এবং স্টাইলিশ তবে আরামদায়ক কার্ডিগান এমন একটি লেয়ারড লুক তৈরি করতে সক্ষম, যা কার্যকরী ও ফ্যাশনবেল। তাই লেয়ারিংয়ের পছন্দসই সব কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
ওয়্যারড্রোব-বান্ধব নার্সিং ড্রেস
স্টাইলিশ নার্সিং পোশাক থাকা চাই ওয়্যারড্রোবে। ইদানীং এ ধরনের পোশাকে এমন অনেক বিকল্প রয়েছে, যা পরলেই স্টাইলিশ দেখায়। পাশাপাশি শিশুকে সাবধানে ও স্বচ্ছন্দে লালন-পালনেও বাধা সৃষ্টি হয় না।
বিয়ন্ড হ্যান্ডব্যাগ
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা এমন হ্যান্ডব্যাগ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন, যা কেবল দুর্দান্ত দেখায় না; বরং মাতৃত্বকালীন ক্যারি করাও সুবিধাজনক। টোট ব্যাগ বা ক্রসবডি ব্যাগগুলো সে ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হতে পারে। হাত দিয়ে ধরে রাখার প্রয়োজন পড়ে না; পাশাপাশি শিশুদের আগলে রাখাও সহজ হয়। আর এগুলোতে মায়েদের যে কী সুন্দর আর মার্জিত দেখায়, সেটি বলাই বাহুল্য।
রিঙ্কেলমুক্ত ফ্যাব্রিক
মায়েদের জন্য রীতিমতো জীবন রক্ষাকারী। এত ইস্ত্রি করার সময় কোথায়! এই ফ্যাব্রিকের উপকরণগুলো প্রতিদিন নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার পরেও সুন্দর দেখাতে সাহায্য করে। তাই মার্কেটে গিয়ে রিঙ্কেল-প্রতিরোধী পোশাক খুঁজে নেওয়া চাই।
প্যাটার্ন ও রঙের মিশ্রণ
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পিছিয়ে পড়া চলবে না। মিক্সিং ও ম্যাচিং দৃশ্যত আকর্ষণীয় লুক তৈরি করতে পারে, যা স্টাইলিশ ও মজাদার। শুধু এর কল্যাণেই অন্যদের কাছে নিজেকে ফ্যাশন-ফরওয়ার্ড মা হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারবেন।
হাই-ওয়েস্টেড জিনস
সেরা মম লুকের জন্য। এগুলো পেটের বাড়তি অংশ ঢাকতে সহায়তা করে; ফলে মাতৃত্বকালীন দাগ আড়াল করা যায়। পাশাপাশি এগুলো অবিশ্বাস্যভাবে আরামদায়ক এবং ফিগারকেও আকর্ষণীয় দেখাতে সহায়ক।
বিশেষ পোশাকে বিনিয়োগ
একটি স্টাইলিশ কোট বা জ্যাকেট তাৎক্ষণিকভাবে চেহারা বদলে দিতে পারে। এমনকি যদি এর নিচে একটি সাধারণ পোশাকও পরে থাকা হয়। আরামদায়ক এবং সেই সঙ্গে ট্রেন্ডি থাকার জন্য লুক নির্বাচনে ট্রেঞ্চ কোট, মোটো জ্যাকেট বা স্টাইলিশ কার্ডিগান যোগ করা যেতে পারে।
অনেক কিছু না বলেই আত্মপ্রকাশের একটি উপায় হচ্ছে স্টাইল। শিশুর জন্মের পর পোশাক হয়ে উঠুক মায়েদের পরিচায়ক। নতুন পরিবর্তনগুলোকে আলিঙ্গন করা চাই আনন্দের সঙ্গে। নতুন নারী হয়ে ওঠার এ যাত্রা উদ্‌যাপন করার উপায় খুঁজে নিতে হবে। কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। আপনি সেই আগের মানুষটিই আছেন। নতুন ট্রেন্ডগুলোকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এ সময়। মাতৃত্বের শিল্পে একেকজন হচ্ছেন শিল্পী এবং ফ্যাশন হলো শিল্প। একজন নতুন মা হিসেবে এটি নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করার মতো এমন এক উদ্যোগ; যা যতটা কঠিন, ততটাই আনন্দদায়ক।

মডেল: সাবিলা নূর ও তৌসিফ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: টুয়েলভ
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top