ইভেন্ট I প্যারিস মাতিয়েছে জুরহেমের সোলারিস
জুরহেমের শরৎ/শীতকালীন ২০২৫ সংগ্রহ ‘সোলারিস’-এর অনবদ্য আত্মপ্রকাশ ঘটেছে প্যারিসের মনোমুগ্ধকর স্থাপনা চ্যাপেল সেন্ট জন দ্য’আর্কে। ঐতিহাসিক চ্যাপেলটির নান্দনিকতা নিঃসন্দেহে এই আয়োজনে ছিল যথার্থ। কারণ, মনোমুগ্ধকর পটভূমিতে উপস্থাপিত জুরহেমের এই সংগ্রহে অনন্য সমন্বয় ঘটেছে জমকালো বিলাসবহুল আমেজ, স্ট্রাকচার আর বহমানতার, যা সবাইকে সম্মোহিত করেছে রীতিমতো।
জুরহেমের সৃজনশীল ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনির তার এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘ফ্যাশনের সূতিকাগার বলে পরিচিত প্যারিসের মতো শহরে জুরহেম ফল/উইন্টার ২৫ সংগ্রহ প্রদর্শন করেছে। এই সুযোগ সত্যিই অসাধারণ। তা-ও আবার প্যারিস ফ্যাশন উইক চলাকালীন আমি এই সংগ্রহ উপস্থাপন করতে পেরেছি। এই স্থানের পুরো আবহে যে উচ্ছ্বাস অনুভূত হচ্ছে, তা আসলেই কল্পনার অতীত। ফ্যাশন, সৃজনশীলতা আর শিল্পনৈপুণ্য প্রকাশে যেন ডুবে আছে গোটা প্যারিস শহর। অন্যদিকে এই ঐতিহাসিক চ্যাপেলে জুরহেমকে উপস্থাপিত হতে দেখার অনুভূতির আসলে কোনো ব্যাখ্যা হয় না। উপরন্তু দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল অভূতপূর্ব। সবাই আমাদের কাজকে ভালোবেসেছে এবং প্রশংসা করেছে। অসাধারণ সব ফ্যাশন-ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে সীমাহীন অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
‘জুরহেম প্যারিসে দারুণভাবে আদৃত হয়েছে। আর এটাই সবচেয়ে বেশি আপ্লুত করেছে। সব সময় আমাদের সৃজনশীল শৈল্পিকতার মধ্যে একধরনের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছি আমরা। আর তার প্রতিফলন এমন এক জায়গায় এত জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছি, যেখানে ফ্যাশনের প্রকাশে যেমন সাহসিকতা, তেমনি পরিশীলিত আমেজের দেখা মেলে। সত্যিই মনে হচ্ছে, আমরা আরও বড় কিছুর খুব কাছাকাছি আছি। এই অভিযাত্রা, এই যে বৈশ্বিক ফ্যাশনের জগতে নিজেদের উত্তরণই সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত করছে আমাদেরকে। আমার কাছে প্যারিস এক স্বপ্নের শহর; তবে এ-ও আমি জানি, এটা কেবলই শুরু,’ যোগ করেন তিনি।
‘সোলারিস’ সংগ্রহটি সবার সামনে এসেছে ক্রমশ এক রং থেকে আরেক রঙে রূপান্তরের সম্মোহন আর সেই সঙ্গে টেক্সচার ও অলংকরণের এক মনোমুগ্ধকর মেলবন্ধনে। নির্মল সাদা থেকে গাঢ় সোনালি, গভীর সবুজ আর আধিপত্যের আমেজ দেওয়া কালোয় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণতা পেয়েছে পুরো কালেকশন।
শো শুরু হয় সাদা পোশাক দিয়ে, যা প্রশান্তি ও কমনীয়তার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। প্রথম মডেল মুক্তার রূপরেখায় সজ্জিত একটি লম্বা কেপ পরে আসেন, যা শুরুতেই সংগ্রহের সূক্ষ্ম কারুনৈপুণ্যের বার্তাটি সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। পুরুষদের পোশাকের সাজসজ্জায় মুক্তা ফুটে উঠতে থাকে, যা এতে সূক্ষ্ম অথচ জাঁকজমকপূর্ণ সৌন্দর্য যোগ করে।
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পুঁতির কাজ, পাথর আর সিকুইনের মাধ্যমে সোনালির দেখা মেলে সাদা পোশাকে। এরপর ধীরে ধীরে রানওয়ে ভেসে যায় সম্পূর্ণ সোনালির পোশাকে স্বর্ণালি আভায়। সেই আভায় বিকিরিত হয় শক্তি ও ঐশ্বর্য। নজরকাড়া এই লুকগুলো শোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্ত রচনা করেছে।
পুরো সংগ্রহে স্তরবিন্যাস বা লেয়ারিংয়ের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। টেইলর করা স্যুটের ওপর পরানো ছিল কোট আর পার্কা।
ক্রপড জ্যাকেটের ব্যবহার স্ট্রাকচার্ড সিলুয়েটে দিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সবুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এখানে। এই রঙে পুরুষদের জন্য বন্ধ গলা ও করসেট পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে।
শো এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালোই স্থান করে নেয় এই সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। গতিশীল স্তরবিন্যাস বা লেয়ারিং এবং আভিজাত্যপূর্ণ কাপড়ের তৈরি পোশাক দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। শেষ লুকটি ছিল সাহসী সৃজনশীলতার মূর্ত প্রতীক। একজন মডেল পরেছিলেন একটি ভারী কাজের পুঁতি বসানো জ্যাকেট, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল এক দীর্ঘ, নাটকীয় ট্রেন।
‘এই অনুষ্ঠান হাউস অব ভেন্ডোম নিখুঁতভাবে আয়োজন করেছে। চ্যাপেল সেন্ট জন দ্য’আর্কের মতো স্থাপনার প্রাঙ্গণে এই আয়োজন আমাদের জন্য ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার শামিল’, বলেন মেহরুজ মুনির।
জুরহেমের স্বতন্ত্র নান্দনিকতা আর সৃজনশীলতা প্যারিসে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। আর পুরো বিষয়টি বাস্তবে রূপ দিয়েছে ‘সোলারিস’। এই সংগ্রহ ব্র্যান্ড জুরহেমকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিতে সহায়ক হয়েছে।
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: জুরহেম