skip to Main Content

ফিচার I দ্য কাফতান এডিট

দারুণ ভার্সাটাইল এ পিস মাতাচ্ছে রিসোর্ট ওয়্যার কালেকশন থেকে রেড কার্পেট। এমনকি হয়ে উঠেছে লাক্সারি ফ্যাশনের অংশ। স্টাইলিং পুরোটাই ব্যক্তিপছন্দের ভিত্তিতে

কয়েক বছর ধরে ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করলেই স্টাইল ফিডে মিলছে আরামদায়ক কিন্তু স্টাইলিশ এক পোশাক—কাফতানের দেখা। শুরুটা হাজার বছর আগে হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে কাফতান স্টাইল ঘুরে বেড়াচ্ছে বালি, মালদ্বীপ কিংবা ভূমধ্যসাগরের দেশে। সেলিব্রিটিদের ওয়্যারড্রোবে কাফতান যেন স্টেপল আইটেম। ফ্লেক্সিবল এই আউটফিটের সূচনা রাজা-মহারাজাদের সময়ে; নিজেদের ভারী রাজপোশাকের ভেতর আরামদায়ক কাফতান থাকত, ঘুমানোর সময় সেই আরামদায়ক কাফতানেই ঘুমোতেন তারা। যুগ পাল্টেছে; কাফতান হয়ে উঠেছে স্টাইলিশ, ফাঙ্কি আর ক্যাজুয়াল ওয়্যার।
আভিজাত্যে আধুনিকতা
সনাতন স্টাইল থেকেই অনুপ্রাণিত, কিন্তু যুগোপযোগী চাহিদা আর স্টাইল মাথায় রেখে কাফতানকে করা হয়েছে আরও আরামদায়ক, আরও ট্রেন্ডি। ইনডোর, আউটডোর কিংবা অনুষ্ঠান অথবা ছুটির কথা মাথায় রেখে অনন্য এই পোশাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রকম স্টাইলিং এলিমেন্ট; কখনো ফ্যাব্রিকে, কখনোবা ম্যাটেরিয়ালে, কাফতানের রং কিংবা ধরন বারবারই বদলেছে, শুধু বদলায়নি তার মৌলিকতা।
কারিগরি প্রিন্টে বৈশ্বিক ধাঁচ
কাফতান আসলে ভারতীয় উপমহাদেশীয় সাজপোশাক। প্রথম দিককার কাফতানে তাই অধিকাংশ সময় দেখা যায় রাজস্থানের বাগরু প্রিন্টের ছাপ। সেখানের দক্ষ মাস্টারজিরাও এই প্রিন্টে তৈরি করেন কাফতান। হাতের বুনন আর ন্যাচারাল প্রিন্ট—দুইয়ে মিলে কাফতানগুলোতে যেন সত্যিই রাজকীয় ছোঁয়া এনে দেয়। মাঝে মধ্যে এর সঙ্গে যোগ হয় জ্যামিতিক মোটিফ, ফুলেল এমব্রয়ডারি; দেশ ছাপিয়ে এই কাফতানগুলো রপ্তানি হয় বিদেশেও, জায়গা করে নেয় ফ্যাশন রানওয়েগুলোতে।
কাফতানের অসংখ্য স্টাইলে নতুন এক সংযোজন শিবরি; জাপানিজ এই টাই-ডাই টেকনিক নাম কুড়াচ্ছে সবার মাঝে। প্রাচীন শিল্পের সঙ্গে মডার্ন অ্যাসথেটিকের কম্বিনেশনে তৈরি এই টেকনিকে যেমন দেখা যায় আভিজাত্যের ছোঁয়া, তেমনি খুঁজে পাওয়া যায় আরামদায়ক স্পর্শ। টাই-ডাইয়ের রং যেমন হয় মাল্টিকালার, তেমনি হালকা বেগুনির মতো রং নিশ্চিত করে আরামদায়ক আভিজাত্য।
কাফতানের কারিগরেরা বাগরু আর শিবরির খেলায় মাততে ভালোবাসেন। বাগরু প্রিন্ট তৈরি হয় ট্র্যাডিশনাল টাই-ডাই দিয়ে, আর শিবরি তৈরি হয় জাপানিজ টাই-ডাইয়ের কারসাজিতে। শিবরিতে থাকে অনেক রঙিন প্যাটার্ন, আর বাগরুতে ব্লক প্রিন্ট। বাগরু যেমন তৈরি হয় ন্যাচারাল মোটিফে, শিবরিতে ফলো করা হয় ট্রেন্ডি সব কাটিং। তবে দুইয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধবতা মাথায় রেখেই এগিয়ে চলেছেন ডিজাইনাররা।
সোশ্যাল মিডিয়া আর ই-কমার্সের প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলা কাফতানের স্টাইল আর ধাঁচে যোগ করেছে নতুনত্ব। ২০২৫-এ এসে ডিজাইনাররা তাদের আঁকিবুঁকিতেও এনেছেন ভিন্নতা। এ ছাড়া সেলিব্রিটিদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের পোস্টগুলোও এতে এনে দিয়েছে নানা রকম সৌন্দর্য।
অসম হেমলাইন
ট্রেন্ডি কাফতানগুলোতে অনেকটা নাটকীয়তা যোগ করে অসম হেমলাইন। পোশাকে আরাম অনুভূতি জুড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখতেও দারুণ স্টাইলিশ এই প্যাটার্ন।
টেকসই কিন্তু বিলাসবহুল
দেশীয় কারিগর ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই ইদানীং তৈরি হচ্ছে আধুনিক ডিজাইনের কাফতানগুলো। এই পোশাকগুলো পরিবেশপ্রেমীদের কাছেও ভালোবাসা পাচ্ছে প্রচুর।
ফিউশন এলিমেন্ট
শৈল্পিক সব এলিমেন্ট, বাগরুর প্যাটার্ন আর শিবরির টেকনিককে একত্র করে তৈরি হচ্ছে ট্রেন্ডি সব কাফতান। মডার্ন স্টাইলে কাটিং প্যাটার্নের নতুনত্বে ফিউশন দেখা যাচ্ছে কাফতানগুলোতে। হোক বিচ ওয়্যার কিংবা ইভনিং পার্টি—এসব কাফতান মানিয়ে যায় সবখানেই।
এ ছাড়া মডার্ন সব কাফতানকে আরেকটু ট্রেন্ডি করতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে কিছু স্টাইলিং এলিমেন্ট। কার্ভি বডিতে কাফতানের সঙ্গে স্টেটমেন্ট বেল্ট শারীরিক গঠনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। একটা বোহিমিয়ান ভাব তৈরিতে যোগ করা হচ্ছে এথনিক নেকলেস। একটু শহুরে ভাব আনতে সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে স্ট্রাকচারড ব্যাগ।
বহুমুখী স্টাইলিং
ওভারসাইজ সানগ্লাস আর বোহিমিয়ান অ্যাকসেসরিজের সঙ্গে শিবরি প্রিন্টের কাফতানগুলো বেশ মানিয়ে যায় বিচ ভাইবের সঙ্গে। সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে গিয়ে এই স্টাইলে সহজে হয়ে ওঠা যায় অনন্য। লেদার বুট আর বাগরু প্রিন্টের কাফতান—শহুরে স্টাইলের সঙ্গে দারুণ মানানসই। ফরমাল ইভেন্টে শিক প্যাটার্নের কাফতান, যেকোনো পার্টিতে একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট ক্রিয়েট করতে পারে। এ ছাড়া মেটালিক সুতার কাজ, সিকুইন ক্লদিং আর সুতার কাজের কাফতানও পার্টিওয়্যার হিসেবে চলছে দারুণভাবে।

২০২৫-এ এসে কাফতান যেভাবে মাতাবে স্টাইল ওয়ার্ল্ড—
আরামেই হবে ফ্যাশন
একটু লুজ আর এয়ারি ফ্যাব্রিক হওয়ায় গ্রীষ্মের আগমনে কাফতান হতে পারে একটি বেস্ট চয়েজ। স্টাইলের সঙ্গে আপোস না করে ভিন্নতার আলোকে কাফতান বেছে নেওয়া যেতে পারে পার্টি অথবা কম্ফি ওয়্যার হিসেবে। যারা গরমে আরাম কোনোভাবে ছাড় দিতে চান না, এবার না হয় একটা ওয়্যারড্রোব চয়েজে চমকে দিতে পারেন পছন্দের মানুষদের।
সৃষ্টিশীলতা
বুট কিংবা ফ্ল্যাট—কাফতান পেয়ার আপ করে নেওয়া যাবে শখের যেকোনো জুতার সঙ্গেই। ক্যাজুয়াল আউটিং কিংবা ডেট নাইট—নিজের পছন্দের জুয়েলারির সঙ্গে শৈল্পিকও হয়ে ওঠা যাবে ইচ্ছেমতো। লুক ক্রিয়েট করতে কার্পণ্য যেন না নয়; হাতের কাছের চুড়ি, বালা, ব্রেসলেট, বেল্ট দিয়েই স্টাইলিং করে নেওয়া সম্ভব কাফতানকে।
সবার জন্যই
কার্ভি, পিয়ার কিংবা আয়তাকার—ঢিলেঢালা কাফতানকে কাস্টমাইজ করা যাবে যেকোনো গড়নে। একটু মডেস্ট ওয়্যার চাইলে কাফতান রাখতে হবে ঢিলেঢালা। আবার খুব বোল্ড ফিচার রাখতে চাইলে, জুড়ে দেওয়া যাবে কোমরে মোটা একটা বেল্ট।
ইন্ডো-ওয়েস্টার্ন স্টাইল
দেশি অভিজাত এই সাজপোশাকে ওয়েস্টার্ন স্টাইল যোগ করা যাবে স্টাইলিং অ্যাকসেসরিজ জুড়ে দিয়ে। সিকুইন বা ফুলের বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট এতে যোগ করবে আধুনিক ভাইব।
কাফতান কেনার আগে এর ফ্যাব্রিকের বিষয়টা অবশ্যই মাথায় রাখা জরুরি। গরমে সুতি, লিনেন আর শীতে মখমল কিংবা শিফন ফ্যাব্রিকের কাফতান ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া ফরমাল ইভেন্টে সিকুইন কিংবা জর্জেট, বিচে জর্জেট এবং ক্যাজুয়াল আউটিং সুতির আরামদায়ক কাফতান থাকতে পারে পছন্দের শীর্ষে। যদিও কাফতান সাধারণত লুজ ফিটিংয়ের হয়ে থাকে, তারপরও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজের সাইজ ও শেপকে প্রাধান্য দিয়ে কেনা জরুরি। মৌসুমি হাওয়া আর নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী কাফতানের রং স্টাইল স্টেটমেন্টকে আলাদা করে দিতে পারে অন্য সবার থেকে।
যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা কাফতান একই সঙ্গে শিল্প, সংস্কৃতি আর ট্রেন্ডের পরিচিতি বহন করে যাচ্ছে। নতুনত্বের হাত ধরেই বেঁচে থাকুক এই ফ্যাশন ট্রেন্ড—অতীত আর বর্তমানে মেলবন্ধন তৈরি করে।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: বর্ণ ও মাহেলেকা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top