skip to Main Content
fashion-feature-april-into

ফিচার I বাই-গিভ-রিপিট

অন্যদের মাঝে খুশি বিলানো যেতে পারে নিজের জন্য শপিং করেও। উপকৃত হতে পারে জনগোষ্ঠী। আদ্যোপান্ত খুঁজেছেন সারাহ্ দীনা

চ্যারিটি শপিং বলতে বোঝায় কেনাকাটার মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে চ্যারিটি শপিংকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথমবারের মতো এই ধারণা আলোয় আসে। রেডক্রসের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় প্রক্রিয়াটি। উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাবস্থায় পোশাকের ঘাটতি পূরণ।
চ্যারিটি শপিং বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এটি নির্ভর করে আয়োজক প্রতিষ্ঠান, ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের স্বভাবের ওপর। চার ধরনের প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে।
বিক্রি থেকে সরাসরি অনুদান
বিক্রি থেকে পাওয়া মূল্যের একটি নির্দিষ্ট অংশ অথবা পুরোটা দাতব্য কাজে ব্যয় করার মাধ্যমে প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড টমস এবং নিউইয়র্কের ব্র্যান্ড চেঞ্জ এই পদ্ধতিতে কাজ করে।
সেকেন্ডহ্যান্ড অথবা আপসাইক্লিং ইনিশিয়েটিভ
কিছু ব্র্যান্ড তাদের ক্রেতাদের আহ্বান জানিয়ে থাকে পোশাক ব্যবহারের পর আবার ফিরিয়ে দিতে। পরে সেগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে পৌঁছে দেওয়া হয় অন্যদের কাছে। আমেরিকান দুই ব্র্যান্ড পাতাগোনিয়া’স ওরন ওয়্যার এবং লিভাইস সেকেন্ডহ্যান্ডের চ্যারিটি প্রোগ্রাম এই পদ্ধতিতে কাজ করে।
এথিক্যাল অ্যান্ড ফেয়ার ট্রেড প্রোডাকশন
কিছু ব্র্যান্ড তাদের পণ্য উৎপাদনকারী দেশের শ্রমিকদের জন্য ফেয়ার ওয়েজ, এথিক্যাল ওয়ার্কিং কন্ডিশন এবং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থা করে চ্যারিটি সম্পন্ন করে। এই তালিকায় আছে কোস্টারিকার হ্যান্ড মেইড ব্র্যান্ড পিউরা ভেদা ব্রেসলেট আর ফাইন জুয়েলারি ব্র্যান্ড মেজুরি।
লিমিটেড এডিশন চ্যারিটি কালেকশন
কোনো ব্র্যান্ড যদি একটি লিমিটেড এডিশন তৈরি করে, সেটিকে বিশেষভাবে একটি নির্দিষ্ট দলের কাছে পৌঁছে দেয়, তাহলে সেটি লিমিটেড এডিশন চ্যারিটি। ডিওরের ‘উই শ্যুড অল বি ফেমিনিস্ট’ কালেকশন তেমনি একটি; যা জেন্ডার ইকুয়ালিটি সেলস সাপোর্টারদের ব্যবহারের জন্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে নিয়মিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোকে দেখা যাচ্ছে এই যাত্রায় অংশ নিতে। আবার ক্রেতাদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে। মূল কারণ খুঁজে পাওয়া যায় চারটি।
 সাশ্রয়ী—তুলনামূলক কম দাম।
 টেকসই তত্ত্ব—পুনর্ব্যবহারের কারণে পরিবেশে ফ্যাশন বর্জ্য তৈরি হয় না।
 সাহায্য করার উপায়—সমাজের একটি সমস্যাকে নির্দিষ্ট করে তাতে ভুক্তভোগীদের সাহায্য করা যায়।
 আনকোরা—রেগুলার পণ্য থেকে আলাদা। ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এমন কিছু হতে পারে; যা নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য নয়, বরং সংগ্রহে রাখার মতো।
দর্শনতত্ত্ব
চ্যারিটি শপিংয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে ব্র্যান্ডগুলো, তাদের দর্শনের খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সামাজিক দায়বদ্ধতা, টেকসই তত্ত্ব এবং নৈতিক ভোগবাদ সেখানে ভূমিকা রাখে। ব্র্যান্ডগুলো এখানে লাভ-ক্ষতি নিয়ে চিন্তাকে এক পাশে সরিয়ে রাখে। ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব তৈরি করাই উদ্দেশ্য।
চ্যারিটি শপিংয়ের প্রভাব বাজার এবং সামাজিক জীবন—দুই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতি, সমাজ, মানুষ ও পরিবেশ—সবেতেই প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়।
সার্কুলার ইকোনমি
চ্যারিটি শপিংয়ের মাধ্যমে সার্কুলার ইকোনমির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। কারণ, এখানে পণ্য পুনঃপুন ব্যবহৃত হয়। একবার ব্যবহারের পরেই বর্জ্যে পরিণত হয় না। ফলে পণ্যটির যথাযথ উপযোগিতা গ্রহণ সম্ভবপর।
টেকসই তত্ত্ব
চ্যারিটি শপিং কার্বন ফুটপ্রিন্টের পরিমাণ কমায়। ফ্যাশন বর্জ্য তৈরি হয় কম। ফাস্ট ফ্যাশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ধরণীকে রক্ষা করে।
সামাজিক প্রভাব
চ্যারিটি শপিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ থেকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, দারিদ্র্যবিমোচন এবং বিপৎকালীন সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। এতে সমাজ এবং সমাজের মানুষ উপকৃত হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করে অনেক ফ্যাশন লেবেল। তাদের মাধ্যমেও পিছিয়ে পড়া মানুষের সহযোগিতা হয়।
নৈতিক ভোগবাদ
ক্রেতাদেরকে সচেতনভাবে কেনাকাটায় আগ্রহী করে। পুনর্ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলে। ফলে প্রি-লাভড আর আপসাইকেলিংয়ের বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়।
ক্রয়ক্ষমতার বাস্তবতা
ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে ভূমিকা রাখতে পারে চ্যারিটি শপিং। আয়ের প্যারামিটারে অবস্থান ভিন্ন হলেও সবার জন্যই সম্ভব হয় পছন্দমতো কেনাকাটা করা। কিছু ব্র্যান্ড ‘পে হোয়াট ইউ ক্যান’ মডেলেও চ্যারিটি শপিং বাস্তবায়ন করে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য পোশাক তৈরি করা হয় এবং তাদের জন্য থাকে এই বিশেষ অফার। চ্যারিটি শপিং মাইন্ডফুল স্পেন্ডিং অর্থাৎ বুঝেশুনে অর্থ খরচের অভ্যাস তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। অসচেতন শপিং থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
বৈশ্বিক বাজারে এনজিও এবং দাতব্য সংস্থাগুলো চ্যারিটেবল শপিং আয়োজন করে ২০২৪ সালে ৩১৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ; এ বছর তা বাড়বে বলে ধারণা করা হয়। এ তো গেল বিশাল বিশ্বের গল্প। আমাদের দেশেও রয়েছে চ্যারিটি শপিংয়ের ব্যবস্থা। ২০১৯ সালে কাজ হচ্ছে এ বিষয়ে। প্রি-লাভড, থ্রিফটিং তরুণদের কাছে জনপ্রিয়। করোনাকালের বিভীষিকা পরিচয়কে দৃঢ় করেছে। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে কমপ্যাশনেট নারায়ণগঞ্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা একটি চ্যারিটি শপ তৈরি করেছিল। মুন্সিগঞ্জের খুরশিদ আলম ফাউন্ডেশন অ্যান্ড চ্যারিটি শপ, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নিয়মিত কাজ করছে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top