বিউটি সার্ভিস I ঈদের প্রাক্-প্রস্তুতি
বছরের বিশেষ এ সময়ে সৌন্দর্যচর্চায় বেছে নিন সেরা কিছু ট্রিটমেন্ট। এগুলো চুল, ত্বক থেকে হাত-পায়ের পরিচর্যায় খুব কার্যকর
ওজোন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট
চুলের যত্নে ডাবল ডোজ ট্রিটমেন্ট এটি। প্রোটিনের পরিচর্যা তো থাকছেই, সঙ্গে ওজোন থেরাপির সংযোজন এ ট্রিটমেন্টকে চুলের পরিপূর্ণ চর্চার পারফেক্ট অপশন করে তোলে। প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কমায় আগা ফাটার সমস্যা। বাড়ায় চুলের ঘনত্ব এবং ফোলা ভাব। হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে করে তোলে কোমল ও মসৃণ। চুলে রঙ করার ফলে প্রাকৃতিক প্রোটিনের যে ক্ষতি হয়, এই ট্রিটমেন্ট তা পূরণে সহায়তা করে। যারা চুলে হিট স্টাইলিং টুল বেশি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট খুবই উপকারী। অন্যদিকে ওজোনের দারুণ প্রভাব পড়ে মাথার ত্বকে। স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে এর জুড়ি নেই। ওজোন থেরাপি মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে হেয়ার ফলিকল হয় শক্তপোক্ত। চুল দ্রুত বাড়ে। সেই সঙ্গে নতুন চুলও গজাতে সাহায্য করে এ থেরাপি। মাথার চুল পড়া রোধ করে। রঙ করা চুল সহজে বিবর্ণ হতে দেয় না। তাই এ দুটো ট্রিটমেন্ট যখন একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়, চুল পায় পরিপূর্ণ পরিপুষ্টি। একদম গোড়া থেকে আগা অব্দি।
ওজোন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট শুরু হয় ড্রাই হেয়ার ম্যাসাজ দিয়ে। রাবিং, নিডিং ও বিভিন্ন মাত্রার প্রেসার প্রয়োগ করে চলে ম্যাসাজ। মূল উদ্দেশ্য, মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ানো। এতে সচল হয়ে ওঠে স্ক্যাল্পের প্রতিটি কোষ। সঙ্গে কমায় স্ট্রেস লেভেলের মাত্রা। নির্দিষ্ট সময় ধরে ম্যাসাজ করার পর প্রয়োগ করা হয় একধরনের বিশেষ টোনার। এটা মাথায় মেখেও চলে আরেক দফা ম্যাসাজ। তারপর স্টিম মেশিন দিয়ে স্টিম দেওয়া হয় চুলে। যা টোনারের পুষ্টিগুণ চুলের গোড়ার গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করিয়ে দেয়। এবার পালা প্রোটিন প্যাকের। ম্যাসাজ করে পুরো প্যাক মাখিয়ে নেওয়া হয়। চুলের গোড়া থেকে আগা- পুরোটায়। তারপর আরেক দফা স্টিম দেওয়া হয় মাথায়। প্রোটিন প্যাকটি ২০ থেকে ২৫ মিনিট মাথায় রাখা হয়। তারপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশন করা হয় চুল। শুকিয়ে নেওয়ার পর চলে ওজোনের অ্যাপ্লিকেশন। ওজোন আয়নে তৈরি বিশেষ ব্রাশ দিয়ে ম্যাসাজ করা হয় স্ক্যাল্পের পুরোটা। প্রায় নব্বই মিনিটব্যাপী চলে এ ট্রিটমেন্ট। ছোট থেকে বড়- যেকোনো দৈর্ঘ্যরে চুলেই করা যাবে এটি। তবে দৈর্ঘ্যভেদে পাল্টাবে খরচ। ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে ওজোন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে।
কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়াল
গতে বাঁধা রূপচর্চার রুটিন মেনে চলছেন নিয়ম করে। তবু লাভ বলতে কিছুই হচ্ছে না। মাঝখান থেকে মুখে নাছোড় দাগছোপ। প্রতিদিনকার দূষণ ছিনিয়ে নিচ্ছে লাবণ্য। র্যাশের আড়ালে ঢাকা পড়ছে ত্বকের প্রাকৃতিক সতেজতা। ফলে ত্বক হয়ে উঠছে নির্জীব আর মলিন। এত সমস্যা নিয়ে তো আর বসে থাকা যায় না। দেশের বিউটি সেক্টরও বসে নেই। সব সমস্যা একসঙ্গে উতরে যাওয়ার জন্য ওয়ান স্টপ সলিউশন বের করে এনেছে। সার্ভিস লিস্টে যোগ হয়েছে কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়াল। এটা ত্বকের পুরোনো দীপ্তি ফিরিয়ে আনতে দারুণ কার্যকর। সেই সঙ্গে সারায় শুষ্ক ভাব আর র্যাশ। সূর্যালোকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করে। বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখাকে রোধ করে কমায় অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ভাব। বাড়িয়ে দেয় উজ্জ্বলতা। সাধারণত দুভাবে করা হয় এই ফেসিয়াল। আইস মাস্কসহ আর মাস্ক বাদে। সব ধরনের ত্বকের যত্নে উপযোগী মাস্কসহ কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়াল। যা লোমকূপগুলোকে আঁটসাঁট করে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত যাদের ত্বক, তারা মাস্ক বাদেও ফেশিয়ালটি সেরে নিতে পারবেন। পাঁচটি ফাংশনাল ডায়মন্ড ডার্মাব্রেশন মেশিন ব্যবহার করা হয় কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়ালের পুরো প্রক্রিয়ায়। হাইএন্ড এ ফেশিয়ালের শুরুতেই ক্লায়েন্টকে দেওয়া হয় বিশেষায়িত ম্যাসাজ। মুখ, মাথাসহ শরীরের উপরিভাগের অংশে রিল্যাক্সিং ম্যাসাজ দিয়ে শুরু হয় এটি। গ্লাইডিং, নিডিং আর ফ্রিকশন স্ট্রোকে বিভিন্ন মাত্রার চাপ প্রয়োগ করে চলে প্রক্রিয়াটি। মিনিট পাঁচেকের এই ম্যাসাজ পুরো শরীরের ক্লান্তি দূর করে। সঙ্গে ফেশিয়ালের জন্যও প্রস্তুত করে নেয়। তারপর শুরু হয় ত্বক পরিষ্কারের প্রক্রিয়া। ডাবল ক্লিনজিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এ ফেশিয়ালে। তারপর চলে স্ক্রাবিং। এরপর ত্বকের ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস রিমুভ করা হয় সতর্কতার সঙ্গে। ফলে পরবর্তী বিশেষ ধাপগুলোর জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয় ত্বক। এরপর বিশেষায়িত অক্সি সেরাম পুরো মুখে মাখিয়ে কোল্ড হ্যামার মেশিন দিয়ে ম্যাসাজ করা হয় মিনিটখানেকের জন্য। এর পরপরই ত্বকে দেওয়া হয় অক্সি জেল। কিছুক্ষণ হাত দিয়ে ম্যাসাজ করার পর গ্যালভানিক মেশিনের ম্যাসাজ চলে। তারপর মুখ মুছে পরিষ্কার করা হয়, ফেস মাস্কের জন্য। আইস মাস্ক ছাড়াও আরও দুটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করা হয় কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়ালে। প্রথমটি গোল্ড রেডিয়েন্ট মাস্ক, যা গ্যালভানিক মেশিনের মাধ্যমে ম্যাসাজ করে মাখিয়ে দেওয়া হয় ত্বকে। মুখে থাকা অবস্থাতেই দেওয়া হয় কোল্ড মাস্ক। সব শেষে দেওয়া হয় আইস মাস্ক, যা ত্বকে পঁচিশ মিনিটের জন্য রেখে টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। পানি দিয়ে নয়। কারণ, এ আইস মাস্ক ফেশিয়াল শেষ হয়ে যাবার পরেও অনেকটা সময় ধরে ত্বকে কার্যকর অবস্থায় থাকে। ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে পুরো ফেশিয়ালটি সারতে। মাস্ক বাদে কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়ালের জন্য খরচ পড়বে ৩৫০০ টাকা। আর মাস্কসহ চাইলে গুনতে হবে আরও ৭০০ টাকা।
ডিলাক্স ম্যানিকিউর পেডিকিউর উইথ প্যারাফিন র্যাপ
হাইএন্ড এ প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট আপনার নখের স্বাস্থ্য তো ভালো রাখবেই, সঙ্গে হাত-পা করে তুলবে আকর্ষক। প্রক্রিয়ার পুরোটাই অভিনব। সেই সঙ্গে পরিচর্যায় ব্যবহৃত হয় বিলাসবহুল সব পণ্য। তাই ডিলাক্স এ ট্রিটমেন্টের ফলাফলটাও মেলে আন্তর্জাতিক মানের। হাত-পা ও নখ পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কারের পাশাপাশি ট্রিটমেন্টে প্যারাফিন ব্যবহৃত হয় বলে বাড়তি কোমলতা পাওয়া যায়। ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও উজ্জ্বল। সানবার্ন সারাইয়েও দারুণ উপযোগী এ ডিলাক্স ট্রিটমেন্ট। সঙ্গে গোড়ালির ফাটা ভাবও কার্যকরভাবে সারিয়ে তুলতে সক্ষম। ট্রিটমেন্টের শুরুতেই হাত ও পায়ের নখ সুন্দর শেপে কেটে ফাইল করে নেওয়া হয়। তারপর হাত-পায়ে দেওয়া হয় ফেয়ার পলিশ ট্রিটমেন্ট। ১০ মিনিটব্যাপী। এর পরপরই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হাত-পায়ের ত্বক। এবার বিশেষ ধরনের স্ক্রাব ও দুধ মিশিয়ে ম্যাসাজ করে নেওয়া হয় হাত-পায়ের পুরোটা। আর নখটা পরিষ্কার করে নেওয়া হয় বিশেষ প্রক্রিয়ায়। এ ক্ষেত্রে কিউটিকল কাটার, নেইল পুশারসহ বিভিন্ন প্রফেশনাল যন্ত্রপাতির ব্যবহারে নখ পরিষ্কারের কাজটা যেমন সহজ হয়ে যায়, সে সঙ্গে পাওয়া যায় প্রফেশনাল লেভেলের ফলাফল। তারপর প্যারাফিন হাত-পায়ের পুরোটায় মুড়িয়ে দশ মিনিটের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এবার প্যারাফিন উঠিয়ে বিশেষ লোশন দিয়ে ম্যাসাজ করে নেওয়া হয় হাত-পা। সবশেষে ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুযায়ী নখে পরানো হয় নেইলপলিশ। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে এ ট্রিটমেন্ট। খরচ পড়বে ১৯০০ টাকার মতো।
ু জাহেরা শিরীন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস