ফিচার I ক্লাইমেট ক্ল্যাশ
বাইরে গনগনে গরমে গা সেঁকে অফিসে পা রাখতেই চারপাশে মেরুময় পরিবেশ! তাপমাত্রার এমন মুড সুয়িং শুধু আরামের বারোটা বাজায় না; দৈনন্দিন সুস্থতা রক্ষার পাশাপাশি পোশাক নির্বাচন নিয়েও বিস্তর ভাবায়
ফ্যাব্রিক, তাপমাত্রা আর আবহাওয়া—এই তিনের গেমটা ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে। ফ্যাশনও হবে, তাপমানটাও সওয়া যাবে। আবহাওয়া যা-ই হোক, পরনের পোশাক নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে, তবে দিনটাই মাটি হয়ে যায়; প্রভাব পড়ে মনে আর কাজের পারফরম্যান্সেও। পরনের কাপড়ের সঙ্গে কমফোর্ট, ট্রেন্ড ও প্রফেশনালিজমের মেলবন্ধন ঘটাতে পারলেই তাপমাত্রার তারতম্য খুব সহজে এড়িয়ে নিজের স্টাইলকে মেলে ধরা সম্ভব।
লেয়ারিংয়ে পারফেকশন
প্রথমেই প্রয়োজন পরিধেয় কাপড়ের ফ্যাব্রিকে নজর দেওয়া। হিটওয়েভকে মাত দিতে চাইলে বেছে নিতে হবে লাইটওয়েট ফ্যাব্রিকের কাপড়। যেন বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকে। কটন, লিনেন কিংবা মিক্সড কটনের ফ্যাব্রিকে তৈরি কাপড়ে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। বাইরের গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবার পালা হিমঘররূপী অফিসের দিকে নজর দেওয়ার। কুর্তি, কামিজ লেয়ারিং হতে পারে ওয়েস্ট লেন্থের কটি, পাতলা কার্ডিগান কিংবা শ্রাগের সঙ্গে। দেখতে যেমন স্টাইলিশ লাগবে, তেমনি তাপমাত্রাটাও রুখে দেওয়া যাবে। কুর্তির রং হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে সাদা, ধূসর, প্যাস্টেল। লেয়ারিংয়ে এ ক্ষেত্রে কালারফুল কিছু ভালোই দেখাবে।
শখের শালে
উদ্ভট শোনা গেলেও ব্যাপারটা ফ্যাশনেবল। অফিসের ঠান্ডা পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব শাল ব্যবহারে। বাসা থেকে অফিসগামী জার্নিটা ঘর্মাক্ত হলেও অফিসের হিম করা তাপমানে মানিয়ে নিতে সঙ্গে রাখাই যায় স্টাইলিশ মনোক্রোম শাল কিংবা ব্লেজার। আউটফিট ট্র্যাডিশনাল হোক বা ওয়েস্টার্ন—রেগুলার আউটফিটের সঙ্গে সহজে মানানসই এগুলো। তবে অফিসে রাখলে অবশ্যই নিয়ম মেনে ধোয়া বা বদলে নেওয়া জরুরি। রং হিসেবে মনোক্রোম বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
পায়ে বাড়তি মনোযোগ
অফিসে যাওয়ার সময় ঘাম থেকে পা বাঁচাতে মোজা কিংবা পাম্পি শু ব্যবহার করলেই কি রক্ষা মেলে? অফিসের ভেতরকার তাপমান যেহেতু কম, তাই পা থাকা চাই পরিষ্কার ও ময়শ্চারাইজড। এসির টেম্পারেচারে পা যেন না ফাটে। কারণ, কর্মক্ষেত্রে পায়ে ঘামের দুর্গন্ধ কিংবা ফাটা পা—দুই-ই দেখতে বেমানান লাগে। পায়ের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা যায় অ্যাঙ্কেল লেন্থের হালকা মোজা, স্টকিং, পাম্পি শুজ কিংবা পেনসিল হিল। অফিসকালীন আলাদা জুতার ব্যবহার দেবে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য।
দূরে থাকুক একঘেয়েমি
প্রতিদিনের একই ধরনের পোশাক শুধু যে দেখতে একঘেয়ে লাগে এমন নয়, বরং মনের ওপরও এর প্রভাব বিরূপ। সামার স্ট্যাপলে অফিস কিংবা বাইরে প্রাধান্য দেওয়া যায় ম্যাক্সি বা মিডি ড্রেসকে। এগুলো দেখতে স্টাইলিশ এবং পরতেও আরামদায়ক। হিপ লেন্থ শার্টের সঙ্গে কোটির ব্যবহারে লুক হয়ে ওঠে প্রফেশনাল, আবার স্টাইলিশও। কর্মক্ষেত্রের শীত শীত আবহাওয়ার জন্য ডেনিম জ্যাকেটও জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।
অনুষঙ্গ বুঝেশুনে
প্রফেশনাল কনটেক্সটে অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার কখনোই অতিরিক্ত করা উচিত নয়। বেছে নেওয়া যেতে পারে ছোট পার্ল, ডায়মন্ড কিংবা স্টোনের কানের দুল; গোল্ড অথবা হোয়াইট গোল্ডের স্লিম রিংয়ের ব্যবহারে দেখাবে ক্লাসি। ঘড়ির ব্যবহার সেকেলে হয় না কখনো। তাই নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট হিসেবে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে একটা ক্লাসি ওয়াচ। ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা চাই প্রয়োজনকে। টোট কিংবা স্লিক—ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় এমন ব্যাগ বেছে নেওয়া ভালো।
কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আর বাইরের আবহাওয়ার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলেই স্টাইলিংয়ে হওয়া যাবে গেম চেঞ্জার। ব্লেজার, কার্ডিগান, স্কার্ফ লেয়ারিংয়ে যদি বাজিমাত করা যায়, তবে কটন কিংবা লিনেনে রুখে দেওয়া যাবে বাইরের গরমকেও। স্টাইলিংয়ে নজর দিতে হবে ফ্যাব্রিকের দিকেও। মনে রাখা জরুরি, ফ্যাশন স্টেটমেন্ট সাময়িক কিছু নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরার একটা লং টার্ম উপায়।
বিদিশা শরাফ
মডেল: সিনথিয়া
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল
