skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I পূজার পরের প্রভাতে

পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল হপিং থেকে জমাটি মিডনাইট আড্ডা সেশন—দুর্গাপূজার রাত মানেই যেন পিওর ম্যাজিক। কিন্তু পরদিন সকালে যে চেহারার জেল্লা উবে যাচ্ছে, তা ধরে রাখা হবে কোন জাদুমন্ত্রে

শারদীয় উৎসব মানেই সীমাহীন আনন্দ। ঢাকের তাল আর রাতভর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দর্শন। অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে শুরু করে নবমীর রাতের জমজমাট আড্ডা—সবকিছু মিলিয়ে পূজার এই দিনগুলো যেন এক স্বপ্নের মতো কেটে যায়। কিন্তু রাতভর জেগে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তো আছে। পরদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই ফুটে ওঠে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত এক মুখ। চোখের নিচে কালি, ফোলা ভাব প্রকট হয়ে ওঠে; আর ত্বকের উজ্জ্বলতা যেন এক রাতেই হারিয়ে যায়।
তবে উৎসবের আনন্দ কি আর ক্লান্তির ভয়ে থেমে থাকে? তাই রাতভর পূজার ঘোরাঘুরির পরেও পরদিন সকালে যেন সতেজ ও প্রাণবন্ত দেখায়, তার জন্য প্রয়োজন কিছু সহজ কৌশল এবং সামান্য প্রস্তুতি। কয়েকটি ধাপে ফিরে পাওয়া যাবে হারানো উজ্জ্বলতা।
প্রথম ধাপ
রাতে বাড়ি ফিরে যতই ক্লান্ত লাগুক, মেকআপ না তুলে ঘুমানো ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সারা দিনের ধুলোবালি, ঘাম ও মেকআপ লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমে একটি অয়েল-বেসড ক্লিনজার বা মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করা চাই। এই ধাপ ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ তুলতেও সহায়ক। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ডাবল ক্লিনজিংয়ের এই প্রক্রিয়ায় ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হবে।
ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃত কোষ সরিয়ে ফেলতে সপ্তাহে দু-তিন দিন হালকা স্ক্রাব ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে থাকা কফি বা চালের গুঁড়ার সঙ্গে মধু বা টক দই মিশিয়ে প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি করা যায়। এটি ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের ফোলা ভাব কমানোর জন্য বরফ একটি চমৎকার উপায়। নরম কাপড়ে কয়েক টুকরা বরফ নিয়ে মুখে আলতো করে বুলিয়ে নিতে হবে। এটি শুধু ফোলা ভাবই কমাবে না, বরং লোমকূপ সংকুচিত করে ত্বক টান টান করবে। সরাসরি বরফ ব্যবহার করতে না চাইলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুলেও সেটি সমান উপকারী।
ত্বক পরিষ্কারের পর এর পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে একটি হাইড্রেটিং টোনার ব্যবহার করা যায়। গোলাপজল প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এরপর একটি ভালো মানের ময়শ্চারাইজার মাখা চাই; যাতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিনের মতো উপাদান রয়েছে, ত্বক দীর্ঘক্ষণ আর্দ্র রাখতে।
চোখের যত্নে
সারা রাত না ঘুমানোর সবচেয়ে স্পষ্ট ছাপ পড়ে চোখের চারপাশে। চোখের নিচের কালি আর ফোলা ভাব নিমেষে মুখের সতেজ ভাব কেড়ে নিতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রান্নাঘরে থাকা হাতের কাছের কিছু জিনিসই যথেষ্ট। ব্যবহৃত ঠান্ডা টি-ব্যাগ, গোল করে কাটা শসার টুকরা কিংবা আলুর রস চোখের ওপর ১০-১৫ মিনিট রেখে দিলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। আলুতে থাকা এনজাইম চোখের ফোলা ভাব ও কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া একটি চামচ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে চোখের ওপর কিছুক্ষণ রাখলেও ফোলা ভাব কমে আসে।
চোখের চারপাশের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। তাই এর জন্য বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। একটি ভালো মানের আন্ডার-আই ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে ভিটামিন সি, ই বা ক্যাফেইনের মতো উপাদান রয়েছে। এগুলো রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।
সাজগোজের সময়
ক্লান্ত মুখে ভারী মেকআপ করলে চেহারাকে আরও বেশি অবসন্ন দেখাতে পারে। তাই পূজার পরদিন সকালে সাজসজ্জা হওয়া চাই খুব হালকা ও স্বাভাবিক।
 ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে ব্যবহার করা যায় বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম বা টিন্টেড ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বকের ছোটখাটো দাগছোপ ঢেকে দিয়ে একটি মসৃণ ও স্বাভাবিক লুক দেবে।
 চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকতে স্কিনটোনের সঙ্গে মিলিয়ে একটি কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়; শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করা ভালো।
 গালের উঁচু অংশে হালকা গোলাপি বা পিচ রঙের ব্লাশ ব্যবহার করা যায়। এটি চেহারায় একটি সতেজ ও স্বাস্থ্যকর আভা নিয়ে আসবে।
 চোখ দুটি উজ্জ্বল দেখাতে ওয়াটারলাইনে সাদা বা ন্যুড কাজল ব্যবহার করা যেতে পারে। আর পাপড়িতে এক বা দুই কোট মাসকারা লাগিয়ে নিলেই চোখ জোড়া দেখাবে বড় ও আকর্ষণীয়।
 ঠোঁটে একটি হালকা রঙের লিপস্টিক বা রঙিন লিপবামই যথেষ্ট। এটি লুকে এনে দেবে স্নিগ্ধতা।
ভেতর থেকে সতেজ
শুধু বাইরের পরিচর্যাই যথেষ্ট নয়; ভেতর থেকে সতেজ অনুভব করাও জরুরি। এর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা এর মধ্যে অন্যতম। রাত জাগার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। তাই সকাল শুরু হতে পারে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার মাধ্যমে। সারা দিন ধরে পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস বা ডাবের পানি পান করা চাই। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে মনকে ঝরঝরে থাকতে সাহায্য করবে।
ক্লান্তি দূর করতে সঠিক নাশতাও খুব জরুরি। তৈলাক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা চাই। কারণ, এগুলো শরীরকে আরও ক্লান্ত করে তুলতে পারে। মিষ্টি খাবারের পরিপূরক হতে পারে ওটস, দই, বাদাম এবং তাজা ফল। একটি কলা বা আপেল শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে পারে।
ক্লান্তি কাটাতে অনেকে চা বা কফির ওপর নির্ভর করেন। এক কাপ কফি শরীর চাঙা করতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরকে আরও ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। তাই পরিমিত পান করাই শ্রেয়।
সার্বিক সুস্থতায়
সতেজ স্নান
সকালে ঠান্ডা বা হালকা গরম পানিতে গোসল তাৎক্ষণিকভাবে সতেজতা দিতে সক্ষম। পছন্দের কোনো সুগন্ধি শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যায়, যা মানসিকভাবেও ফুরফুরে করে তুলবে।
হালকা ব্যায়াম
জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের হালকা স্ট্রেচিং কিংবা একটু হেঁটে আসা শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেবে এবং জড়তা কাটাতে সাহায্য করবে।
পাওয়ার ন্যাপ
যদি সম্ভব হয়, দিনের বেলা ২০-৩০ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ এনার্জি লেভেলকে আশ্চর্যজনকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: তানজিদা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মাহমুদা শাড়ী হাউজ
জুয়েলারি: ক্যানভাস বাই তন্বী কবির
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top