এই শহর এই সময় I চিন্তা ও চেতনায় শান
শীতের আগমনী হাওয়ায় নভেম্বরজুড়ে রাজধানীতে ঈষৎ উষ্ণতা ছড়িয়েছিল শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিবিধ আয়োজন। তাতে নগরবাসী পেয়েছে চিন্তা ও চেতনায় শান দেওয়ার নানা উপলক্ষ।

নীরবতার সরবতা
২৪ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর। প্রায় মাসব্যাপী, ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের কামরুল হাসান প্রদর্শনালয়ে প্রদর্শিত হয় ‘নীরবতার সরবতা’ (‘আনরিভেলিং সাইলেন্স’)। ইয়াসমীন জাহান নূপুরের একক বহুশৈল্পিক প্রদর্শনী। চিত্রকর্মের পাশাপাশি ভাস্কর্য ও ত্রিমাত্রিক স্থাপনাশিল্পে সাজানো। তাতে নীরবতার মাঝে মানবিক অনুভূতির উদ্ভাসন। উপকরণ ও প্রক্রিয়ার ভিন্নতায় শিল্পীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ইতিহাস ও সৃষ্টিশীলতার অন্বেষণ। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রকলার জগৎ, বিশেষ করে হাতে বোনা মসলিন ও জামদানি থেকে এসেছে তার ভাস্কর্য বা ত্রিমাত্রিক ফর্মের প্রেরণা। ‘আমার চর্চায় বস্ত্রকে স্বভাবতই রাজনৈতিক ও নারীকেন্দ্রিক দৃষ্টিতে দেখেছি। যুগ যুগ ধরে বস্ত্রকে নারীত্ব, যত্ন-আত্তি, অদৃশ্যতা আর লালিত্যের প্রতিভূ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমার কাজে কোমলতাই শক্তির প্রতীক এবং সেলাইর ফোঁড় বা বুনটই হচ্ছে প্রতিবাদের ভাষা। “হাতের কাজ” বলে যাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, তাকে আমি উপস্থাপন করতে চেয়েছি প্রতিরোধ ও ক্ষমতার নির্মাণ হিসেবে,’ ভাষ্য নূপুরের।

আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর
‘আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর’। আরব্য রজনীর জনপ্রিয় কাহিনি অবলম্বনে পদাতিক নাট্য সংসদের নতুন নাটক। নাট্যদলটির ৪৫তম প্রযোজনা। প্রথমবারের মতো মঞ্চস্থ হলো ৮ ও ৯ নভেম্বর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে। উম্মে হানীর নাট্যরূপে নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। রহস্যময় গুহা ও গুপ্তধন খোঁজার হাস্যরসের পাশাপাশি আলিবাবার সততা ও মরজিনার বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে দুর্ধর্ষ চোরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উত্তেজনা দর্শকেরা দারুণ উপভোগ করেছেন। এই নাটকে আলিবাবা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাবেদ পাটওয়ারী। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আরব্য রজনীর এই চিরন্তন গল্প সাধারণ মানুষের বুদ্ধি, সাহস ও ন্যায়বোধের অসাধারণ জয়গাথা। আমরা চেষ্টা করেছি এই রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো—গোপন গুহা, গুপ্তধন এবং চোরদের সঙ্গে আলিবাবার লড়াইকে নাটকীয়ভাবে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে।’ অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন হাসিনা আক্তার, সৈয়দা শামছি আরা, নূর-ই-আলম, জিনিয়া আজাদ, শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।

দ্য সোল অব জুট
একসময় দেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের তকমা পেয়েছিল পাট। উপমা ‘সোনালি আঁশ’ তারই সাক্ষ্য দেয়। নানা কারণে সেই খ্যাতিতে ভাটা পড়েছে বটে, তবে এর উপযোগিতা ফুরোয়নি। ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর, এই সোনালি আঁশে তৈরি রকমারি পণ্যের প্রদর্শনী হয়ে গেল রাজধানীর ধানমন্ডিতে, আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে। ‘দ্য সোল অব জুট’ শিরোনামে। পাটের নকশা, কারুকার্য এবং টেকসই উদ্ভাবন উদ্যাপনের লক্ষ্যে। বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, আলিয়ঁঁস ফ্রঁসেজ, ট্রাভেল ম্যাগাজিন ভ্রমণ এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার পিএলসির (জেডিপিসি) যৌথ উদ্যোগে। পাটপণ্যে গড়া চেয়ার-টেবিল, সোফা, ফুলদানি, গয়নার বাক্স, ফুলের টব, টেবিল ল্যাম্প, টিস্যু বক্স প্রভৃতি নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ট্রাভেল ব্যাগ থেকে শুরু করে নারীদের ব্যবহার্য নকশাদার ভ্যানিটি ব্যাগ, এমনকি পাটপণ্য আশ্রিত ফ্যাশনেবল ব্লেজারও ঠাঁই পায় এই প্রদর্শনীতে। দেড় শতাধিক বৈচিত্র্যময় পাট ও শিল্পপণ্যের প্রদর্শনীটি নগরবাসীর মনে শৈল্পিক মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি সোনালি আঁশের সোনালি অতীতের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বপ্নও দেখায়।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ
