সেলুলয়েড I ভূতের ভবিষ্যৎ
মুক্তি: ২০১২
কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: অনীক দত্ত
অভিনয়ে: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, মীর আফসার আলি, সমদর্শী দত্ত, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, মনামি ঘোষ প্রমুখ।
সংগীত: রাজনারায়ণ দেব
প্রযোজনা: জয় গাঙ্গুলি
দৃশ্যায়ন: অভীক মুখোপাধ্যায়
সম্পাদনা: অর্ঘ্যকমল মিত্র
সাউন্ড ডিজাইন: মৈনাক বসু ও অন্যান্য
মেকআপ: অনুপ বিশ্বাস, জয়ন্ত চক্রবর্তী, হেনা মুন্সি, মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও মুহাম্মদ ইউনুস
কস্টিউম: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য, সান্ধি দত্ত ও শুভ সিনহা মৈত্র
শিল্প নির্দেশনা: ইন্দ্রনীল ঘোষ
আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রির মেলবন্ধন করতে পারে- বাংলা চলচ্চিত্রের ধারাবাহিকতায় এমন বহু ছবির উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু ঢাকা ও কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা সিনেমার আজকাল এমন ছবি আমাদের চোখে তেমন পড়েনি। হয় আর্ট হাউজের সমান্তরাল ধারার সিনেমা অথবা বাজার ধরতে গিয়ে সস্তা, চটুল জগতের সঙ্গে মিলিয়ে বাজারি ছবি আর্ট ও কমার্শিয়াল এই বিভাজনকে স্পষ্ট করে রেখেছে। অথবা এ দুয়ের মাঝামাঝি মধ্য মেধার কিছু ছবিও আমরা দেখেছি। ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। যেমন- ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’।
এই ছবি একদিকে যেমন মনোরঞ্জনধর্মী বা এন্টারটেইনিং, তেমনই শিল্পসম্মত। চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে কস্টিউম, মেকআপ ইত্যাদি বিষয়ে এক্সপেরিমেন্টালও। এই নয়া উদার অর্থনীতির যুগে প্রতিটি মেট্রো শহরে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, টাওয়ার আর ভাঙা পড়ছে শহরের পুরোনো স্থাপত্য, ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, প্রমোটারের থাবায় নিজের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে মানুষ- এই বাস্তবতাকে খুব জনপ্রিয় ও এন্টারটেইনিং কায়দায় পরিচালক অনীক দত্ত তার চলচ্চিত্র ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ প্রকাশ করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, কলকাতার একটি পুরোনো জমিদার বাড়িকে প্রমোটিং করার চেষ্টা চালাচ্ছে এক মাড়োয়ারি প্রমোটার। এদিকে ওই জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিন গুজরান করছেন নানাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ভূত বা মৃত মানুষের আত্মারা। তো এই বাড়ি ভেঙে শপিং মল হলে ভূতেরা যাবে কোথায়, এই ভূতেরা কীভাবে প্রমোটারকে তাড়ায়, সেই গল্প রয়েছে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ। ছবিতে দেখানো হয়েছে ওই জমিদার বাড়িতে সিনেমার শুটিংয়ের জন্য এক তরুণ পরিচালক আসেন। তখন তার সঙ্গে এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। তিনি হাউজ বিল্ডার্স প্রমোটারের বিরুদ্ধে ভূতেদের প্রতিরোধের ওই গল্প বলেন তরুণ পরিচালককে। শেষে জানা যায়, গল্পটি যিনি বলছেন তিনিও একজন ভূত। ওই জমিদার বাড়ি তার মামাবাড়ি, সত্তর দশকে নকশালবাড়ির রাজনীতি করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছিল। তিনিই তরুণ পরিচালককে প্লটের সন্ধান দেওয়ার পাশাপাশি ছবির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থেরও ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে উদ্ভট, আজগুবি, ভুতুড়ে ন্যারেটিভের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে পরিচালক অনীক দত্ত তুলে ধরেছিলেন তার ছবিতে। ছবিতে ভূতেদের সংলাপ ছন্দে লেখা। নানা ধরনের ও নানা সময়ের ভূত চরিত্রকে দেখা গেছে। কেউ সবাক বাংলা সিনেমার প্রথম যুগের অভিনেত্রী, কেউ ব্রিটিশ আমলের জমিদার, কেউ নিরীহ ব্রিটিশ, কেউ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈনিক ও বাবুর্চি, কেউ আবার পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা উদ্বাস্তু বাঙালি, বিহারি রিকশাওয়ালা, একটি চরিত্র কার্গিল যুদ্ধে নিহত ভারতীয় মেজর জেনারেল, মাড়োয়ারি প্রমোটারের বউ, যাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, অন্য দুটি চরিত্র হলো আজকের প্রজন্মের এক তরুণ, যিনি গিটার হাতে গান করেন, অন্য আরেকটি চরিত্র এক হালফ্যাশন সচেতন তরুণী।
এভাবে নানা ধরনের চরিত্রকে একটি টাইম স্পেসে নিয়ে এসে এই ছবির চিত্রনাট্য এগিয়ে নিয়ে গেছেন ছবির পরিচালক। চরিত্রগুলো যেহেতু নানা যুগের, তাই তাদের কস্টিউম ও মেকআপের মধ্যেও সময়ের ছাপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সবাক বাংলা সিনেমার প্রথম যুগের চরিত্র কদলীবালাকে (অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) খোঁপা, ভারী গয়না, বেনারসি শাড়িতে যেমন তুলে আনা হয়েছে, তেমনই আজকের প্রজন্মের তরুণী কোয়েল ধর স্ট্রেইট হেয়ার, জিনস আর টপে আজকের সময়ের চিহ্ন বহন করছেন। আবার মেজর জেনারেল কিংবা জমিদার কিংবা সিরাজউদ্দৌলার বাবুর্চি ও সত্তর দশকের নকশালপন্থী কমিউনিস্ট ইত্যাদি চরিত্রগুলোও পোশাক ও মেকআপে বিশ্বস্ত। আর এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ড ডিজাইন, এডিটিং- সবই মানোত্তীর্ণ।
অতনু সিংহ
কুইজ
১। পরিচালকের চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক. সব্যসাচী চক্রবর্তী খ. পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় গ. পরান বন্দ্যোপাধ্যায়
২। সিনেমাটির পরিচালকের নাম কী?
ক. অঞ্জন দত্ত খ. অনীক দত্ত গ. মীর
৩। রায় বাহাদুরের চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক. পরান বন্দ্যোপাধ্যায় খ. প্রাণ রায় গ. মিঠুন চক্রবর্তী
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. আফসানা আহমেদ, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
২. ইশরাত জাহান, উত্তরা, ঢাকা।
৩. সাজেদুল ইসলাম, কলাতলী, কক্সবাজার।