ফিচার I ব্যক্তিত্বসম্মত
বিয়ের একেকটি অনুষ্ঠানে ছেলেদের সাজও বদলে যায়। দিন-রাতের পার্থক্যও মানতে হয়। তবে যা-ই পরা হোক না কেন, তাতে ভারসাম্য চাই। টোটালিটিও। আর ব্যক্তিত্বসম্মত হওয়া তো বেশি জরুরি
সব প্রস্তুতির মাঝেও বিয়ের উৎসবে সবাই চায় নিজেদের আকর্ষণীয়ভাবে হাজির করতে। এতে প্রয়োজন হয় সুন্দর পোশাক-আশাক। কাজের পারিপাট্য ও অনন্যতা। বর-কনে ছাড়া অন্যরাও নিজেদের তুলে ধরতে চায় নান্দনিক সাজসজ্জায়। একসময় এই প্রতিযোগিতায় শুধু মেয়েদের উপস্থিতি বেশি টের পাওয়া যেত। ছেলেদের বেশভূষা থাকতো তুলনামূলক সাদামাটা। কিন্তু হালের বিভিন্ন ট্রেন্ড, নিত্যনতুন পোশাক-আশাক, ফ্যাশন-সচেতনতা নিয়ে পুরুষদের চিন্তাভাবনা প্রবল হয়ে উঠছে দিনে দিনে। বিয়ের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় নানা বেশে নিজেদের উপস্থাপন করতে প্রস্তুত তারাও।
বাঙালি সংস্কৃতির বিয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত গায়েহলুদ, বিয়ে এবং বউভাত বা জয়েন্ট রিসেপশন- এই তিনটি অনুষ্ঠানই মুখ্য। সময়ভেদে এগুলোর জন্য সাজসজ্জা বিভিন্ন রকম।
গায়েহলুদে ছেলেদের পোশাক মানেই পাঞ্জাবি। এটি যেমন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, তেমনি উৎসবের পোশাক হিসেবেও যথেষ্ট মানানসই। তাই হলুদে পাঞ্জাবির কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বর অথবা আমন্ত্রিত অতিথি যে কারও জন্য একটু উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি হওয়া উচিত প্রথম পছন্দ। যেমন- হলুদ, কমলা, সবুজ, বেগুনি, আকাশি- এ ধরনের রঙগুলো দিনের বেলার অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পায়। অনুষ্ঠান আউটডোরে হলে উজ্জ্বল রঙগুলো আরও চমৎকার দেখায়। অন্যদিকে রাতের জন্য প্রাধান্য পায় লাল, মেরুন, নীল অথবা বিভিন্ন মেটালিক কালার। নিজের সাজে অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে চাইলে পাঞ্জাবির স্টাইলে ভিন্নতা দরকার। পরা যেতে পারে অ্যাসিমেট্রিক, ম্যান্ডারিন, সাইড স্লিট ইত্যাদি কাটের পাঞ্জাবি। তবে হলুদের জন্য কালো অথবা বিষণ্ন কোনো রঙ এড়িয়ে যাওয়াই সম্মত।
যেকোনো রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে চাই মানানসই ও আরামদায়ক পাজামা। স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী চুড়িদার, সালোয়ার, রেগুলার ফিট- যেকোনোটিই বেছে নেওয়া যায়। কেউ চাইলে প্যান্টও পরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাদা চিনোস অথবা রেগুলার ফিট জিনসই উপযুক্ত।
একটু বেশি শীতে পাঞ্জাবি-পাজামার সঙ্গে পরা যেতে পারে কোটি বা নেহরু জ্যাকেট। খেয়াল রাখতে হবে, কোটির রঙ যেন পাঞ্জাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে না যায়। আলাদা শেড বা পছন্দমতো কন্ট্রাস্ট রঙও পরতে পারেন।
পাঞ্জাবির সঙ্গে একজোড়া ভালো মানের ব্রাউন, চকলেট কিংবা কালো রঙের স্যান্ডেল, চটি বা কোলাপুরি, মোজারি যেমন মানায়, তেমনি হাল ফ্যাশনের পেনি লোফার, টাসেল লোফার ইত্যাদিও জুতসই হতে পারে।
বিয়েতে বরের পোশাক নির্ধারণে সবারই প্রথম পছন্দ শেরওয়ানি। তা হওয়া উচিত যুগোপযোগী এবং অবশ্যই আকর্ষক। ফলে বাছাইয়ের সময় কাজ করা সিল্ক অথবা ব্রোকেড কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি করা শেরওয়ানির প্রাধান্য থাকে সবচেয়ে বেশি। কারও পছন্দ যদি হয় ছিমছাম, তাহলে হালকা কাজের অথবা গলায় ও হাতে হালকা ডিজাইনের এমব্রয়ডারি করা শেরওয়ানিও যথেষ্ট মানানসই। ডিজাইনারকে দিয়ে আমাদের দেশি তাঁতের কাপড় যেমন জামদানি, সিল্ক বা বেনারসি দিয়েও এটি তৈরি করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বাজারি শেরওয়ানির চেয়ে তা একেবারেই আলাদা হবে। নজরকাড়াও।
শেরওয়ানির সঙ্গে অ্যাকসেসরিজের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে পাগড়ি। এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের শেরওয়ানির সঙ্গে ম্যাচিং অথবা কন্ট্রাস্ট পাগড়ি বরের সাজকে পূর্ণতা দেবে। এ ছাড়া গলায় পরা যেতে পারে মতির কণ্ঠিমালা অথবা বুকে থাকতে পারে একটি মাঝারি আকারের ব্রোচ। পায়ে অবশ্যই নাগরা থাকতে হবে। কিংবা মুলতানি স্যান্ডেল শু। স্যান্ডেল বা লোফার বরের জন্য নয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে বরযাত্রী আর কনেপক্ষের অতিথিরা। সেখানে পুরুষদের পোশাকও হওয়া উচিত আকর্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন করা যেতে পারে একটি সিল্কের কাজ করা অথবা সুতি কাপড়ে গলায় ও হাতে হালকা কাজের পাঞ্জাবি। কিংবা পরা যেতে পারে একরঙা ‘বন্ধগলা’ নয়তো একটি হালকা রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে উজ্জ্বল একরঙা প্লেইন অথবা হালকা কাজের নেহরু জ্যাকেট বা কোটি। সঙ্গে লোফার বা স্যান্ডেল।
বউভাত বা রিসেপশনে ছেলেদের জন্য ফরমাল পোশাকই ভালো। তা বরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একসময় ফরমাল পোশাক বলতে স্যুট-ব্লেজার বোঝালেও নতুন ফ্যাশন ও ট্রেন্ডের আবির্ভাবে এখন রিসেপশনের পোশাকে অনেক অপশনই রয়েছে।
স্যুটের বিভিন্ন অপশন রয়েছে। যেমন সিঙ্গেল ব্রেস্টেড, ডাবল ব্রেস্টেড, ওয়েডিং স্যুট, টাক্সেডো ইত্যাদি। যে কেউ নিজের পছন্দ অনুযায়ী স্যুট বাছাই করে নিতে পারেন। স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সঙ্গে থাকতে পারে ওয়েস্টকোট। শার্টের কালারের ক্ষেত্রে ম্যাচিং অথবা কন্ট্রাস্ট রঙ পছন্দমতো বাছাই করে নেওয়া যায়। তবে টাইয়ের রঙ একটু আলাদা হলে তা সম্পূর্ণ পোশাককে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। শার্ট-স্যুট-টাইয়ের ধরন এবং রঙ যে যার পছন্দমতো নির্বাচন করলেও মিলিয়ে খেয়াল রাখতে হবে, সব যেন মানানসই এবং ওয়েল ফিটেড হয়। অতিরিক্ত ঢিলা বা টাইট ফিট একটি সুন্দর পোশাককেও বেখাপ্পা করে তুলতে পারে। তাই স্যুট কিংবা শার্টের জন্য স্লিম ফিট বা রেগুলার ফিট নির্বাচন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এ ছাড়া রিসেপশনের জন্য আরও বাছাই করা যায় ‘বন্ধগলা’ বা প্রিন্স স্যুট অথবা স্যুটের বদলে শার্ট এবং নেহরু জ্যাকেট। খেয়াল রাখতে হবে, জ্যাকেটের রঙ যেন শার্টের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে না যায় এবং তা প্লেইন ও সিম্পল হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন একটি সাদা ব্যান্ড কলার বা ‘বাটন ডাউন’ কলারের শার্টের সঙ্গে পরা যেতে পারে একটি মেরুন বা গাঢ় নীল অথবা ছাইরঙা নেহরু জ্যাকেট। বুকের কাছে থাকতে পারে একটি ছোট মানানসই ব্রোচ। আরামদায়ক পোশাক পরতে ইচ্ছুক হলে পরা যেতে পারে রেগুলার ফিট বা স্লিম ফিট চিনোর সঙ্গে চেক বা একরঙা শার্ট।
জুতার ক্ষেত্রে অনেক অপশন রয়েছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী অক্সফোর্ড, ডার্বি, সিঙ্গেল স্ট্র্যাপ বা ডাবল স্ট্র্যাপ মঙ্ক কিংবা ড্রেস বুট পরা যেতে পারে। অন্যদিকে সেমি ফরমাল লুক বা নেহরু জ্যাকেটের সঙ্গে পেনি, টাসেল, বিট ইত্যাদি ধরনের লোফারও মানানসই।
এ ছাড়া উৎসবের এই সাজে ব্যবহৃত হতে পারে বিভিন্ন অ্যাকসেসরিজ। যেমন- কাফলিং, টাই পিন, কলার পিন, বিডস বা অ্যাংকর ব্রেসলেট। এসব অ্যাকসেসরিজ সাজকে পূর্ণতা দেবে।
ভালো পোশাকের আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ একটি মনকাড়া সুগন্ধি, কোলন বা পারফিউম। বেছে নেওয়া উচিত ভালো ব্র্যান্ডের সুগন্ধি।
একটা ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, পোশাকের সঙ্গে জুতা, বেল্ট ও ঘড়ির (যদি তা বেল্টের হয়) ধরন নিজের পছন্দমতো হলেও এই তিনটি জিনিসের রঙ যাতে একই থাকে।
বিয়ের এই যজ্ঞে পোশাক নির্বাচন যেমনই হোক না কেন, সব সময় মাথায় রাখতে হবে, আপনি যা পরছেন তাতে যেন পরিপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং তা যেন আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই হয়। এতেই উৎসবে আপনি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবেন। থাকবেন অন্যের প্রশংসিত দৃষ্টিতে।
সাকিব শাহমাত
মডেল: রাজ, কায়জার
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস