skip to Main Content

তনুরাগ I স্পর্শপ্রিয়তা

একসময় স্কিন কেয়ার মানেই ছিল সাদামাটা ক্রিম। কার্যকরী হলেও যেন একটু একঘেয়ে। মনে দাগ কাটবে, এমন কিছু নয়। সেই সময় এখন অনেকটাই পেছনে পড়ে গেছে। আজকের বিউটি ইন্ডাস্ট্রির গ্রাহকেরা শুধু জানতে চান না একটি প্রোডাক্ট কী করছে; বরং ব্যবহারের সময়ের অনুভবও গুরুত্বপূর্ণ। লিখেছেন শিরীন অন্যা

আধুনিক স্কিন কেয়ারে শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়, টেক্সচার ফরোয়ার্ড ফর্মুলা; যেখানে মুস, জেলি, মিল্ক, এসেন্স কিংবা ফোম থেকে অয়েলে রূপান্তরিত টেক্সচার শুধু ত্বকের যত্ন নিচ্ছে না, তৈরি করছে একটি মাল্টি-সেন্সরি অভিজ্ঞতাও। স্কিন কেয়ার এখন নিছক প্রয়োজন নয়; হয়ে উঠছে নিজের যত্ন নেওয়ার, সময় দেওয়ার আর ভালোবাসার একটি ছোট্ট রিচুয়াল।
সত্যি বলতে, প্রতিদিন বডি লোশন বা স্কিন কেয়ার ব্যবহার করা যতটা দরকারি, একই টেক্সচার, একই অনুভূতি একসময় ততটাই একঘেয়ে মনে হতে পারে। ঠিক এখানেই টেক্সচার-ফরোয়ার্ড স্কিন কেয়ার দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছে। মানুষ এখন এমন প্রোডাক্ট খুঁজছে, যেগুলো কাজ করবে ঠিকই; কিন্তু ব্যবহার যেন একটু আনন্দের হয়। মুসের ফোমি, জেলির শীতল, মিল্কফ্লুইডের অনুভূতি—এসব টেক্সচার স্কিন কেয়ারকে রুটিন থেকে তুলে এনে একধরনের অভিজ্ঞতায় পরিণত করছে। অনেকের কাছেই এটি হয়ে উঠেছে নিজেকে উপহার দেওয়ার মতো ক্ষণিকের যত্ন। সেটা হতে পারে দিনের শুরুতে বা শেষে।
এই পরিবর্তনের শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা বিরাট। টিকটক, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে জেলি টেক্সচারের মুভমেন্ট, মিল্ক পুরিংয়ের আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল কিংবা কে-বিউটি থেকে আসা মর্নিং শেডের মতো ভিজ্যুয়াল মেটাফর শুধু দেখতেই সুন্দর নয়; স্কিন কেয়ারকে রুচিশীল কনটেন্টে রূপান্তরও করেছে। স্কিন কেয়ার এখন শুধু ব্যবহার করার নয়, দেখানোরও বিষয়। অটোনোমাস সেন্সরি মেরিডিয়ান রেসপন্স-ফিল দেওয়া টেক্সচার ভিডিও, গ্লেজড স্কিন, বাউন্সি স্কিন বা ক্লাউড স্কিনের মতো কনসেপ্টগুলো এই ট্রেন্ডকে আরও গতি দিয়েছে। তবে বিষয়টি যে শুধু ফান বা ভাইরাল হওয়ায় পাঁয়তারা, এমনটা নয়। আজকের গ্রাহকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা খুব ভালোভাবে জানেন, টেক্সচার যত আকর্ষণীয় হোক না কেন, দৃশ্যমান ফল না দিলে সেই প্রোডাক্ট তাদের কাছে টিকবে না। এ কারণেই স্কিন কেয়ারে এখন একধরনের ডুয়াল ডিমান্ড দেখা যাচ্ছে। একদিকে মানুষ চাইছে সহজ, ফান, অ্যাপ্রোচেবল প্রোডাক্ট; যেগুলো স্কিন কেয়ারকে জটিল করে তোলে না; অন্যদিকে, একই সঙ্গে বাড়ছে ক্লিনিক্যালি প্রুভড ও হাই-পারফরম্যান্স ফর্মুলার চাহিদা, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই ত্বকে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনে। অর্থাৎ, স্কিন কেয়ার হতে পারে মজাদার ও সহজ; তবে তার ভেতরে থাকা চাই নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞান।
মানসিকতার এই প্রতিফলন সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে ইনগ্রেডিয়েন্ট নির্বাচনে। কেবল আকর্ষণীয় নাম বা ট্রেন্ডি ট্যাগে ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করা এখন কঠিন। গ্রাহকেরা জানতে চান একটি উপাদান ত্বকে ঠিক কীভাবে কাজ করছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কী ফল দিচ্ছে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড এখনো হাইড্রেশনের মূল ভিত্তি হিসেবে জায়গা ধরে রেখেছে। সেরাম থেকে শুরু করে মিল্ক বা এসেন্স—প্রায় সব ফরম্যাটেই এর ব্যবহার চোখে পড়ে। স্কিন ব্যারিয়ার সুস্থ রাখতে সেরামাইডের গুরুত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে; বিশেষ করে সেনসিটিভ বা স্ট্রেসড স্কিনের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি ফারমেন্টেড ইনগ্রেডিয়েন্ট জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ, এগুলো ত্বকে সহজে শোষিত হয় এবং সক্রিয় উপাদানের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। আর পেপটাইড, রেটিনল বা ইজিএফের মতো উপাদানগুলো অ্যান্টি-এজিং ও ফার্মিংয়ের ক্ষেত্রে এখন আর বিলাসিতা নয়; বরং আধুনিক স্কিন কেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। এর পাশাপাশি ইনফ্ল্যামেশন কমানো আলোচনার বিষয়। গ্রিন টি, হলুদ কিংবা সেন্টেলার মতো উপাদানগুলো এখন আর শুধু প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না; বরং স্ট্রেস, জীবনযাপন ও ত্বকের স্বাস্থ্যের মধ্যকার গভীর সম্পর্ককে সামনে আনার কারণেই বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। এভাবেই স্কিন কেয়ার ধীরে ধীরে শুধু বাহ্যিক যত্নের গণ্ডি পেরিয়ে ওয়েলনেসের ধারণার সঙ্গেও যুক্ত হচ্ছে।
এই পুরো টেক্সচার বিপ্লবে কে-বিউটির প্রভাব অস্বীকারের উপায় নেই। কোরিয়ান স্কিন কেয়ার বহু বছর ধরে ওয়াটারি এসেন্স, স্লিপিং মাস্ক, জেল-ক্রিম, লেয়ারেবল মিল্ক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে। তাদের দর্শন একদম স্পষ্ট। স্কিন কেয়ার হালকা হবে, লেয়ার করা যাবে; কিন্তু কাজ করবে গভীরে। আজ যে টেক্সচার-ফরোয়ার্ড ট্রেন্ড গ্লোবাল হয়ে উঠেছে, তার শিকড় অনেকটাই কে-বিউটিতে। এই ট্রেন্ডের একটি বাস্তব ও জোরালো উদাহরণ হলো বিলাসবহুল ত্বকযত্নের প্রসাধন মেইলিস গেট-টট বডি ফার্মিং অ্যান্ড হাইড্রেটিং মুস-টু-অয়েল। এটি দেখলে বোঝা যায়, কীভাবে একটি সাধারণ বডি লোশনকে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতায় রূপ দেওয়া সম্ভব। প্রোডাক্টটি ফোমের মতো বের হয়, হাতে নিতেই ডেজার্টের মতো অনুভূতি তৈরি করে, আর ত্বকে প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে শুকনো, হালকা অয়েলে রূপান্তরিত হয়। ভারী কিংবা চিটচিটে নয়; বরং দ্রুত শোষিত হয়, যা একে অন-দ্য-গো ইউজের জন্যও আদর্শ করে তুলেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি শুধু মজার টেক্সচারে সীমাবদ্ধ নয়; ক্লিনিক্যালি প্রুভেনও। ত্বকের হাইড্রেশন বাড়ায়। রিংকলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে। এই দুই-ই আজকের গ্রাহকের অন্যতম বড় দাবি। ফর্মুলেশনের দিক থেকে এই প্রোডাক্ট সময়ের প্রতিচ্ছবি। স্কুয়ালেন অয়েল, নারকেল তেল ও শিয়া বাটার অয়েল ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়ক। গ্লাইসিন নামের একটি সিনথেটিক মলিকিউল স্কিন স্মুথিং ও ফার্মিংয়ে কাজ করে। পাশাপাশি সাচা ইনচি সিড এক্সট্র্যাক্ট একটি আধুনিক ভেগান পেপটাইড হিসেবে রিংকল সাপোর্ট দেয়। এ ধরনের ট্রান্সফরমেটিভ টেক্সচার তৈরি করা সহজ নয়। ফোম স্ট্রাকচার, হাইড্রেশন আর ফ্লেক্সিবিলিটি একসঙ্গে ব্যালান্স করতে বিউটি ল্যাবের সময় লেগেছে দুই বছরের বেশি।
এ ধরনের ট্রান্সফরমেটিভ অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতায় বাজারে আরও অনেক টেক্সচারের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভ্যাকেশন ক্ল্যাসিক হুইপ এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন মুস, যা হালকা ফোমের মতো, ত্বককে সূর্য থেকে রক্ষা করে এবং ব্যবহারের সময় একদম আনন্দদায়ক অনুভূতি দেয়। রোড গ্লেজিং মিল্ক এবং ইনিসফ্রি চেরি ব্লসম গ্লো জেলি ক্রিম মিল্কি বা জেলি টেক্সচারের মাধ্যমে ত্বক কোমল, আর্দ্র ও ঝকঝকে করে। ঠান্ডা, বাউন্সি ফিলের জন্য আছে মিল্ক মেকআপ কুলিং ওয়াটার জেলি টিন্ট, যা ঠোঁট ও গালে ব্যবহার করলে আনন্দদায়ক বিশেষ সেন্সরি অনুভূতি দেয়। ত্বককে কোমলভাবে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা যায় ভালমন্ট আইসি ফলস জেলি ক্লিনজার, আর হাইড্রেটেড ও প্রিমিয়াম ফিনিশের জন্য আছে এনওয়াইএক্সের বেয়ার উইদ মি হাইড্রেটিং জেলি প্রাইমার এবং প্যাসিফিকা গ্লো জেলি ডিউই রেডিয়েন্স। টেক্সচারের পাশাপাশি ফ্র্যাগরেন্স এখন স্কিন কেয়ার অভিজ্ঞতার একটি অপরিহার্য উপাদান। শুধু সুগন্ধ দেওয়ার জন্য নয়; বরং এটি ব্যবহারকারীর আবেগ ও স্মৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
বর্তমানে প্রায় সব ব্র্যান্ডই চেষ্টা করছে কীভাবে একটি প্রোডাক্ট ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতায় পরিণত করা যায়, কীভাবে তা দিনের ছোট্ট মুহূর্তকে আরও বিশেষ করে তুলতে পারে। কার্যকারিতা, বৈজ্ঞানিক নির্ভরযোগ্যতা এবং সেন্সরি হ্যাপিনেস—এই তিন মিলিত হলে সেটিই হয়ে ওঠে আজকের সৌন্দর্যবিশ্বের জন্য উপযুক্ত।

মডেল: তৌহিদা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top