কুন্তলকাহন I বিদিশার নিশার তরে
চুল ঝরে গেলে মন মরে যায়! চুলের নির্বাসন কারও কাম্য নয়। তবু এই অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি যদি আসে, তাহলে বিদায় হোক অল্পতে। ক্ষণিকের দেখা ক্ষণিকেই থাক
চুল এবার ফিলারের দখলে। হেয়ার ফিলার ব্যবহারে পূর্ণতা পাচ্ছে ফাঁকা হয়ে যাওয়া মাথার তালু। গরম, দূষণ, রাসায়নিক, এক্সট্রিম হেয়ারকাট আর ডাইয়ের প্রভাব—সব মিলিয়েই চুলের ওপর দিনরাত অত্যাচার। পরিণামে চুল ছেড়েছে শিকড়। হারিয়েছে দূর দেশে। মাথার তালুর স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন রকম চেষ্টা তো চলছেই; পাশাপাশি সাময়িক সমাধান হিসেবে নতুন অবসেশন হেয়ার ফিলার।
এর কাজ মাথার তালুতে তৈরি হওয়া ফাঁকা স্থান ভরাট। ইনজেকশন সেখানে একমাত্র সমাধান, তা নয়। ঘরে ব্যবহারযোগ্য ট্রপিক্যাল প্রোডাক্ট, স্যালনে করা ট্রিটমেন্ট, এমনকি ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের মাধ্যমেও সম্পন্ন সম্ভব। এই সবকিছুকে এক ছাতার নিচে এনে বলা হয় হেয়ার ফিলার। প্রতিটির কাজ আলাদা। চুলে ভলিউম বাড়ানো থেকে শুরু করে টাক পড়া জায়গা ঢেকে দেওয়া, আবার ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারানো—বহু সমস্যার সমাধান এতে মিলতে পারে।
ট্রপিক্যাল হেয়ার ফাইবার
হেয়ার ফাইবার পাউডার। ব্যবহারে মাথার তালুর ফাঁকা অংশ দ্রুত ঢেকে নেওয়া সম্ভব। টাক হোক কিংবা কম গ্রোথ লাইনের মাথার ত্বক—সব দরকারেই ব্যবহার উপযোগী এই প্রসাধন। এই ফাইবারগুলো ইলেকট্রোস্ট্যাটিক চার্জড; ফলে চুলে লেগে ঘন দেখায় এবং ফাঁপা জায়গা নিখুঁতভাবে ঢেকে দেয়। তবে এটি পুরোপুরি একটি টেম্পরারি ফিক্স; পরেরবার চুল ধুলেই শেষ!
বন্ড ট্রিটমেন্টস
সেমি পারমানেন্ট সল্যুশন। ক্ষতিগ্রস্ত ও রুক্ষ চুলের জন্য উপযোগী। বন্ড রিপেয়ার করে চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালনে সক্ষম। এটি ইন স্যালন ট্রিটমেন্ট। করটেক্সের মধ্যে প্রবেশ করে কার্যকরী হয়। অনেক সময় এই প্রক্রিয়ায় যোগ করা হয় কোলাজেন, কেরাটিনের মতো উপাদান; যা চুলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেখতেও সুন্দর করে তোলে।
পিআরপি ট্রিটমেন্টস
ইনজেকটেবেল। চুলের উৎপাদন পুনরায় বাড়াতে সহায়ক। আবার মান বাড়িয়ে তুলতেও ভূমিকা রাখে। পিআরপি ট্রিটমেন্টস মূলত প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ওই প্লাজমা থেকে লোহিত রক্তকণিকা আলাদা করে, সেই প্লাজমা মাথার তালুতে ইনজেক্ট করাই বিধি। এই ফিলার প্রসেসে চুলের বৃদ্ধি, ভলিউম ও ঘনত্ব—সবখানেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
হেয়ার এক্সটেনশন
ভলিউম বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখে। চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতেও কার্যকরী। একে ট্রিটমেন্ট না বলে টেকনিক বলাই যুক্তিযুক্ত। এক্সটেনশন নতুন কিছু নয়। লম্বা ও ঘন চুলের জন্য ইতিমধ্যে জনপ্রিয়। কিন্তু হেয়ার ফিলার হিসেবে এর ব্যবহার একটু আলাদা। এখানে চুল লম্বা করার জন্য নয়; বরং যেসব জায়গায় ভলিউম দরকার, শুধু সেখানে ছোট ছোট এক্সটেনশন বসানো হয়। এ কারণে চুল দেখায় ঘন, পুষ্ট; কিন্তু লম্বা না হয়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূর্ণ।
হেয়ার ফিলারের জনপ্রিয়তার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ আছে। সার্জারি বা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মতো বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই। ইনজেকশন বা ট্রপিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চুল ঘন করা যায়। এই প্রক্রিয়া সৌন্দর্য বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ রাখে। হেয়ার ফাইবার, ইনজেকটেবল ফিলার বা এক্সটেনশন—সব মিলিয়ে চুলকে দ্রুত ঘন ও পুরু দেখাতে সাহায্য করে। অনেকের জন্য এটি একধরনের ইমিডিয়েট বুস্ট হিসেবে কাজ করে; যা আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। চুল পাতলা হওয়া, টাক পড়া, থিন হেয়ারলাইন কিংবা স্ক্যাল্প ড্যামেজ—এমন সমস্যার জন্য আলাদা ধরনের ফিলার আছে। ফলে একাধিক সমস্যার একসঙ্গে সমাধান পাওয়া যায়। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং বায়োমিমেটিক পেপটাইডস সাধারণত ভালোভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়।
সতর্কবার্তা
হেয়ার ফিলারের গুণগান তো অনেক হলো; এবার খানিকটা বাস্তবতার বয়ান।
এই হেয়ার ট্রিটমেন্টের ফলে ত্বকের যেখানে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়, সেসব জায়গাতে লালচে বা ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে; তবে সাধারণত তা এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সেরে যায়।
কারও কারও স্ক্যাল্পে সামান্য অস্বস্তি, গরম অনুভূত বা চুলে ভারী ভাব তৈরি হতে পারে।
সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে প্রয়োগ না করলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। খুব কম মানুষ ইনজেকশনের জন্য ব্যবহৃত উপাদানে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তবে এই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
হেয়ার ফাইবার বা থিকেনিং স্প্রে শুধু ঘন চুলের ইলিউশন তৈরি করে; মোটেই স্থায়ী সমাধান নয়। চুল ধুয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যায়।
দক্ষ কারও কাছ থেকে এই সেবা নেওয়া জরুরি। কারণ, অদক্ষতায় সমস্যা তৈরির শঙ্কা থাকে। আবার, কিছু ইনজেকটেবল হেয়ার ফিলারে ব্যবহৃত উপাদান অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: শিমলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন
