এই শহর এই সময় I হেমন্ত আবাহন
এই ধূলিধূসরিত শহরেও হেমন্ত আসে। শিশিরের শব্দে আসে অঘ্রান। হয়তো বাংলার মেট্রো শহরগুলোর আর মনে নেই সোনালি ফসলের সেই ঘ্রাণ। তবু ইতিহাসের ভেতর বসে থাকা শহরের মানুষকেও বোধ হয় তাড়া করে এ মাটির যৌথনির্জ্ঞান! তাই শিশিরের শব্দে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে হেমন্তের ঢাকা শহরে, তখন এ ঋতুর দ্যোতনা টের পায় এর বাসিন্দারা। নতুন ফসলের গন্ধে শুরু হয় অঘ্রানের আবাহন। পিঠাপুলি তৈরি হয়। রসনা ব্যঞ্জনের পাশাপাশি পয়লা অগ্রহায়ণ হেমন্তের ভোরে ফসলের রং-রূপ-লাবণ্যে গোটা বঙ্গদেশের সঙ্গে মেতে ওঠে ঢাকা শহরের মানুষ। নবান্নের কার্নিভালে রঙিন হয়ে ওঠে তাদের মন।
এবারেও পয়লা ও দোসরা অগ্রহায়ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হলো ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব’। এই উৎসবের স্লোগান ছিল ‘এসো মিলি নবান্নের উৎসবে’। বাউল-ফকিরি গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, পালাগান, পটের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, কথন, সঙযাত্রা, লাঠিখেলা ও শিশুদের চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছিল প্রকৃত অর্থেই নবান্ন উৎসব। ১৫ ও ১৬ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে মেতে উঠেছিলেন ঢাকার মানুষ। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকার অন্যত্রও উদযাপিত হয়েছে নবান্ন উৎসব।
হেমন্ত থেকেই প্রকৃতিনিবিড় পার্বণগুলোর পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এই শহর-গ্রাম-মফস্বল। তাই সারা বছর এই হেমন্ত ও শীতের অপেক্ষায় থাকে মানুষ। এই উৎসবগুলোর মধ্যে ঢাকা লিট ফেস্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন উল্লেখযোগ্য ফোক ফেস্ট।
প্রতিবছরের মতোই নভেম্বরের শুরুতে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮। ভাষা, সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতির আলাপ, আলাপন, কথন ও প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমি চত্বরে এই উৎসব হয়ে উঠেছিল আক্ষরিক অর্থে আন্তর্জাতিক।
ঢাকা লিট ফেস্টে এবারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছিলেন। ভারতীয় পরিচালক নন্দিতা দাসের ছবি ‘মান্টো’র প্রদর্শনীতে শহরবাসীর ভিড় উপচে পড়েছিল। বাংলাদেশের সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী ও বিদ্বজ্জনদের উপস্থিতিতে ঢাকা লিট ফেস্ট হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক মিলন-উদ্যান। এই উৎসবে সাহিত্য, প্রকাশনা, সমাজ, মিথ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, নারী অধিকার ও নারীবাদ, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ-আলোচনা-কথন চলেছে তিন দিন ধরে। চলেছে সংগীত, নৃত্য ও কবিতাপাঠ। এবারের লিট ফেস্টে কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা ও হামীম কামালকে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে উৎসবের ব্যাপারে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটা যত না লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়ে উঠেছে এলিট ফেস্ট! লিট ফেস্ট থেকে দিন দিন লিটারেচার হারিয়ে যাচ্ছে বলেও অনেকের আক্ষেপ। তবে এত কিছুর পরেও ঢাকা লিট ফেস্টের জৌলুশ ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ