ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I কলোনিয়াল রোমান্স
আমার বন্ধু স্তেফান। আন্দ্রে স্তেফান জোয়াকিম। জন্ম আর বেড়ে ওঠা কলম্বোয়। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় এক অদ্ভুত লোমহর্ষক সন্ধ্যায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।
অর্থাৎ সেই কুখ্যাত নাইন-ইলেভেন। কলম্বোর গল ফেস হোটেলে আমার অপেক্ষা স্তেফানের জন্য। টুইন টাওয়ার তখন ভেঙে পড়ছে তাসের ঘরের মতো। ও এসে হাজির আমার রুমে। এরপর বছর চারেক বাদে আরও একবার দেখা হয়েছে এই দিনেমার বংশোদ্ভূত ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে। ওরই শহরে। শ্রীলঙ্কায় ওদের বলা হয় বার্গার। ওরা সংখ্যালঘু। মনেপ্রাণে সে দ্বীপদেশের। ওর কাজ দেখে আমি মুগ্ধ।
১৯৮৮ সালে শুরু। কাপড় ক্যানভাসের সৃজনশীলতায় অতিক্রান্ত দীর্ঘ তিন দশক। বিস্তীর্ণ সময়ে নানা বাঁক পেরিয়ে আসা স্তেফান সবাইকে চমকে দেওয়ার মানসে সম্প্রতি উপস্থাপন করেছে তার নতুন সংগ্রহ। কলোনিয়াল রোমান্স। একক শোর পর কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত কলম্বো ফ্যাশন উইকেও কালেকশন উপস্থাপন করেছে সে। আত্মবিমুখ লঙ্কাবাসী ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের ন্যক্কারজনক পশ্চিম-বিলাসিতায় স্তেফানের এই সংগ্রহ যথার্থই চপেটাঘাতের নামান্তর। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আজও যে আমরা পশ্চিমের পূজারি, তারই সমালোচনায় মুখর তার এই কলোনিয়াল রোমান্স।
অথচ ইচ্ছে করলে এই অবসেশন থেকে যে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, স্তেফান তার কাপড়ের গল্পে সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছে তার দেশবাসীকে। বিশেষত কলম্বোর এলিটদের। সম্প্রতি এ নিয়ে কথা হচ্ছিল স্তেফানের সঙ্গে। বললে, দেখো, এত বছর পর আমরা সেই মোহ থেকে মুক্ত হতে পারি না। থেকে বরং আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখে ছদ্ম সাহেবিয়ানা দেখাচ্ছি। অথচ আমরা কি কম সমৃদ্ধ- ঐতিহ্যে, শিল্পে, সংস্কৃতিতে। তাই কেন থাকবে আমাদের শিকড়ে ফেরার অনীহা। এই সংগ্রহ প্রত্যক্ষই তার ক্রিয়েটিভ এক্সপ্রেশন হয়েছে তার প্রতিবাদের ভাষা। আর মূল্যবোধের শক্তিশালী বার্তাকে পোশাকের মধ্য দিয়ে মূর্ত করতে স্তেফান ব্যবহার করেছে হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন সব কাপড়। মোদ্দা কথা হলো ডিকলোনাইজেশন। আর সেটাই তো বলেছেন স্তেফান। এটা কেবল শ্রীলঙ্কার জন্য নয়, আমাদের জন্যও বৈকি। স্তেফানের এই অনবদ্য সংগ্রহের ঝলক আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে চাই আমাদের ইংরেজি নতুন বছরের আয়োজনে। অভিনন্দন স্তেফান। তোমার সৃষ্টিতে এভাবেই জাগাও আমাদের বিবেক।
শেখ সাইফুর রহমান
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: আন্দ্রে স্তেফান জোয়াকিম