গত বছর এশিয়া প্যাসিফিক (এপিএসি) অঞ্চলে বিনামূল্যে যোগাযোগের জন্য অ্যাপ রাকুতেন ভাইবারের ব্যবহার বেড়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৪২১ শতাংশ ব্যবহারকারী বৃদ্ধির মাধ্যমে বছর শেষ করে অ্যাপ্লিকেশনটি। একই সময়ে ভাইবার থেকে পাঠানো বার্তার হার ৫০৯ শতাংশ বেড়েছে এবং গ্রুপে পাঠানো বার্তার হারও বহুগুণ বেড়েছে। এছাড়া কমিউনিটি মেসেজ পাঠানোর ক্ষেত্রে ভাইবারের কমিউনিটি ফিচারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২০ এর এই প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির বিষয়টি ২০১৯ সালের একই সময়ে সময় রেকর্ডকৃত তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারী এবং ডিসেম্বরের তথ্যের তুলনা করলে বাংলাদেশের মতো এপিএসি অঞ্চলের নির্দিষ্ট বাজারে অ্যাপটির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষণীয় হয়েছে, যা বিগত দশ বছরের মধ্যে গত বছরটিই ভাইবারের অন্যতম সাফল্যময় বছরে পরিণত করেছে। ২০১৯ এর তুলনায় বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে ভাইবার ব্যবহারের পরিমাণ ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাইবারে লগ ইন করা সংখ্যার উপর ভিত্তি করে দেখা গেছে, বাংলাদেশিরা ভাইবার কমিউনিটিতে বেশি সময় ব্যয় করেছে। ব্যবহারকারীদের কমিউনিটিতে অংশগ্রহণের হার ১৪৯ শতাংশ বেড়েছে এবং কমিউনিটিতে বার্তা প্রেরণের হার ১১৬ শতাংশ বেড়েছে। তারা আরও অধিক পরিমাণে টেক্সটিং, অডিও কল, ভিডিও কল করেছে এবং চ্যাট এক্সটেনশান ব্যবহার করেছে। ভাইবারে ভিডিও কল ৪০ শতাংশ এবং চ্যাট এক্সটেনশান ব্যবহার ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবহারকারীদের উন্নতমানের সেবা প্রদানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং তাদের অ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সুখকর করার লক্ষ্যে ভাইবার ২০২০ সালে মাই নোটস-এর মতো নতুন ফিচার চালু করে। এটি ব্যবহারকারীদের করণীয় কাজের তালিকা এবং তাদের সকল ডিভাইসের মিডিয়াকে সুসংগত করতে সহায়তা করে। বার্থডে রিমাইন্ডার ব্যবহারকারীদের তাদের কন্টাক্ট লিস্টের মানুষদের বিশেষ দিন উদযাপনের তারিখ মনে করিয়ে দেয়। ডিসঅ্যাপেয়ারিং মেসেজ ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল বার্তার সময়কাল সীমাবদ্ধ করার সক্ষমতা প্রদান করে, আর অন্যদিকে জিআইএফ ক্রিয়েটর প্রত্যেক ব্যবহারকারীর সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে মানুষ অনলাইনে যোগাযোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ভাইবার গত বছর গ্রুপ কল ও অডিও কলে একসাথে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২০ জন করে। এছাড়াও অ্যাপটি পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কোভিড-১৯ হতে সুরক্ষিত থাকার তথ্য সরবরাহ করে।
আরও জানানো হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইবার চ্যাটবট চালু করেছে, যা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মানুষের জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং আইসিটি বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহের জন্য তাদের নিজস্ব ভাইবার চ্যাটবট এবং কমিউনিটি তৈরি করেছে। ব্যবহারকারীদের সকল কার্যক্রমে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা এবং অ্যাপে তাদেরকে সুরক্ষিত রাখতে, ভাইবার ২০২০ সালে ফেসবুকের সাথে তাদের সকল ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর কারণ ফেসবুক তাদের লাভের জন্য ব্যবহারকারীদের তথ্যের অপব্যবহার করছিল। সুরক্ষাকে অন্যতম ভিত্তি বিবেচনা করা মেসেজিং অ্যাপটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তার সমস্ত বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে এবং ফেসবুক কানেক্ট ও গিফি ফিচার সরিয়ে দেয়।
রাকুতেন ভাইবারের ভাইবারের চিফ গ্রোথ অফিসার আনা জামেনস্কায়া বলেন, ‘২০২০ সালে সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের কাজের ধরনে, যোগাযোগ, ব্যবসা পরিচালনায় এবং আরও বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। মহামারী অসংখ্য মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং অভিনব উদ্ভাবনের দিকে পরিচালিত করেছে। আমরা দেখেছি সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ করোনা মোকাবিলায় তৎপর ছিল। তারা বেঁচে থাকার জন্য এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বেড়িয়েছে। আমরা তাদের এই উদ্যমী মানসিকতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। এটি আমাদের কাজে মূল্য যোগ করে এবং আমাদের কাজ যে আমাদের ব্যবহারকারীদের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে এমন সংকটকালীন সময়ে, সে কথা মনে করিয়ে দেয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতে সকল ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এর পাশাপাশি, আমরা আমাদের কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাব এবং আরও উদ্ভাবনী ফিচার নিয়ে আসব, যা ভাইবার ব্যবহারকারীদের জীবনকে আরও বেশি সহজ করে তুলবে এবং তাদেরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে যুক্ত করবে’।
রাকুতেন ভাইবার ২০২০ সালে দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে এবং মেসেজিং প্ল্যাটফর্মকে ‘একের ভেতর সব’ বা ‘লাইফটাইম’ অ্যাপে রূপান্তরের পরিকল্পনার কথা জানায়। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি সামনে নতুন নতুন ফিচার নিয়ে আসবে এবং তারা ইতিমধ্যে চ্যাটবট পেমেন্ট সেবা চালু করার মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিরাপদভাবে পণ্য ও সেবা কিনতে পারে এবং অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ প্রদান করা যায়।