skip to Main Content

অর্গানিক I পত্রসুন্দর

ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় পাতা। এর রস যেমন, অন্যান্য উপাদানের মিশেলে তৈরি প্যাক ও মাস্ক সৌন্দর্যচর্চায় তুলনারচিত

পাতা শুধু সুস্থ থাকতে কিংবা রোগ সারাতেই নয়, ত্বকের সৌন্দর্যের জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
নিমপাতা
ত্বকের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। টোনার হিসেবে নিমপাতার রস একনে, মুখের দাগ, ব্ল্যাকহেডস এবং পিগমেন্টেশন দূর করে। আধা লিটার পানির মধ্যে ২০ থেকে ২২টা তাজা নিমপাতা ফুটিয়ে নিন। যখন পানি সবুজ হয়ে যাবে, তখন তা ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন এবং বোতলে সংরক্ষণ করুন। কটন বলের সাহায্যে প্রতিদিন এই টোনার ব্যবহার করুন। একনের পাশাপাশি ত্বকের শুষ্কতাও দূর করে এই টোনার। নিমপাতার প্যাক হোয়াইট হেডস কিংবা পোরস দূর করার জন্যও ভালো। নিমপাতার সঙ্গে পরিমাণমতো কমলার খোসা সেদ্ধ করে বেটে নিতে হবে। তাতে খানিকটা টক দই, মধু আর দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যবহার করুন এই পেস্ট। নিমপাতার তেল নখের বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করে। কাঁচা হলুদে মেশানো নিমপাতার পেস্ট র‌্যাশ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার জন্য নিমপাতার তেলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ থেকে ১০০ মিলি নিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে তাতে গোসল করলে স্কিন ইরিটেশন দূর হয়।
চুলের যত্নেও নিমের ব্যবহার কার্যকর। যাদের খুশকি ও শুষ্কতার সমস্যা রয়েছে, তারা এতে ফোটানো পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন শ্যাম্পু করার পরে। এ ছাড়া নারকেল তেলের সঙ্গে ২-৩ ফোঁটা নিমের তেল মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগানো যেতে পারে। সারা রাত চুল এভাবেই রেখে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করলে পাবেন সুস্থ স্ক্যাল্প। হবে খুশকি সমস্যার সমাধান। নিমের তেলের সঙ্গে শিয়া বাটারের ব্যবহার চুলের শুষ্কতা কমিয়ে স্পিট এন্ডে পুষ্টি জোগায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি থাকায় নিমের তেল চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। দুশ্চিন্তা, ওষুধের ব্যবহার কিংবা বিভিন্ন টক্সিনের কারণে চুল পড়ার সমস্যা দূর করে গোড়া থেকে পুষ্টি জুগিয়ে।
মরিঙ্গা
মরিঙ্গা পাউডার হোক বা মরিঙ্গা তেল- দুটোই সৌন্দর্যচর্চায় কার্যকর। মরিঙ্গা তেলের প্রাকৃতিক ভিটামিন সি ত্বকের ফাইন লাইন, বলিরেখা আর কুঁচকে যাওয়া রোধ করে। মরিঙ্গায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর পুষ্টিদায়ক গুণাগুণ রয়েছে, যেকোনো বিউটি প্রডাক্টের জন্য এগুলো আদর্শ উপাদান। এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করে। ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং স্কিন টোন ঠিক রাখতে মরিঙ্গা পাতার জুড়ি নেই। এতে তৈরি হয় মরিঙ্গা পাউডার, যা পাতার চেয়ে বেশি সহজলভ্য। উপকারিতা একই। এই পাউডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন মরিঙ্গা ফেসপ্যাক। একটি সম্পূর্ণ অ্যাভোকাডোর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে ১ চা-চামচ করে লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে তা ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে যেকোনো প্যাকে লেবু ব্যবহার করলে অবশ্যই পরবর্তী ২ ঘণ্টা রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই এই প্যাক রাতে লাগানোই শ্রেয়।
ত্বকের দাগ দূর করতে মরিঙ্গা পাউডারের সঙ্গে কলা মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে দিতে হবে এক টেবিল চামচ মধু আর এক টেবিল টি ট্রি অয়েল। এই প্যাক ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে নিতে হবে কুসুম গরম পানি দিয়ে। ত্বকের শুষ্কতা রোধ হবে। মরিঙ্গা পাউডারের সাহায্যে তৈরি করা যেতে পারে বডি স্ক্রাবও। এক কাপ ওট ব্লেন্ড করে এক কাপ চিনি, আধা কাপ নারকেল তেল আর ২ টেবিল চামচ মরিঙ্গা পাউডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন এই বডি স্ক্রাব। এটা ফেসটোনের সঙ্গে বডিটোনের সামঞ্জস্য ধরে রাখবে।
চুল সুন্দর রাখতেও এই পাতার ব্যবহার রয়েছে। মরিঙ্গা স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুলের আগা ফাটা রোধ করতে সহায়ক এই পাতা মাথা ঠান্ডা রাখতেও বেশ কার্যকর।
সিল্যান্ট্রো
ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে সিল্যান্ট্রো। রুক্ষ ও প্রাণহীন ত্বকের জন্য এটা খুব উপকারী। কয়েকটা সিল্যান্ট্রো পাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একটু একটু করে পানি মিশিয়ে করতে হবে ব্লেন্ড। সঙ্গে এক টেবিল চামচ ব্রাউন রাইস ফ্লাওয়ার আর আধা টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। তারপর অন্য যেকোনো ক্লিনজারের মতোই ব্যবহার করা যাবে। পরিষ্কার করার পাশাপাশি এর ব্যবহার ত্বকের মরা কোষ দূর করে। ত্বক নরমও করে। একনে-প্রবণ ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে সিল্যান্ট্রো আর টক দইয়ের মাস্ক। ১ টেবিল চামচ টক দই, ২ টেবিল চামচ ওট ফ্লাওয়ার, ১/৪ কাপ সিল্যান্ট্রো পেস্ট, ১/৮ কাপ শসার পেস্ট একসঙ্গে ব্লেন্ডারে মিশিয়ে একটা মাস্ক তৈরি করতে হবে। এটি মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। সিল্যান্ট্রো, শসা আর ওটের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান একনে রোধ করে। আর টক দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহার করা যেতে পারে সিল্যান্ট্রো আর লেবুর বডি স্ক্রাব। ১/৪ কাপ সিল্যান্ট্রো পেস্ট, ১/৪ কাপ নারকেল তেল আর ১টা সম্পূর্ণ লেবুর রস একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণের সঙ্গে ১/২ কাপ সি সল্ট মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে বডি স্ক্রাব। অন্য যেকোনো বডি স্ক্রাবের মতোই ব্যবহার করা যাবে এটা। সিল্যান্ট্রো আর নারকেল তেলের অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ত্বকের পোর বন্ধ করে রাখে।
সিল্যান্ট্রো চুলের বৃদ্ধিতেও অনেক সহায়তা করে। একটি মাঝারি রসুন নিয়ে তার রস বের করে নিতে হবে। অন্যদিকে সিল্যান্ট্রো পাতা আর গোলাপের পাপড়ি ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড করার সময় তাতে একটু একটু করে রসুনের রস মেশাতে হবে। এই প্যাক স্ক্যাল্পে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পরে তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
পুদিনা
পুদিনা পাতা মেনথলের উৎস। পাশাপাশি এতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। তাই পুদিনা পাতা ক্লিঞ্জার, অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, টোনার কিংবা ময়শ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একনে সমস্যা দূর করতে এটিও পিছিয়ে নেই। কয়েকটা পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে তাতে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। ওই পেস্ট একনের ওপর লাগিয়ে রেখে দিন সারা রাত। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এটি একনে নির্মূল ও প্রতিরোধ দুটোই করে থাকে। ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কমাতেও পুদিনা পাতার রস ব্যবহার করা হয়। এক্সফোলিয়েশনের জন্য পুদিনা দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন স্ক্রাব। গরমকালে এই স্ক্রাবের উপকারিতা বেশি। পুদিনা ব্লেন্ড করে রস আলাদা করে নিন। সঙ্গে এক টেবিল চামচ পরিমাণ ওটমিল মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্ক্রাব। ত্বকের মরা কোষ সরিয়ে নিয়ে পোর কমিয়ে আনবে এই স্ক্রাব। যাদের ফেসপ্যাকের গন্ধ সহ্য হয় না, তাদের জন্য পুদিনার তৈরি যেকোনো ফেসপ্যাক বা মাস্ক আশীর্বাদস্বরূপ। রোদে পোড়া দাগের জন্য পুদিনার তৈরি স্ক্রাব খুব কার্যকর। পুদিনার রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন টমেটোর রস আর একটুখানি মুলতানি মাটি দিয়ে তৈরি পেস্ট ত্বকে বসে যাওয়া ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তবে এই প্যাক মুখ থেকে ধুয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে, কারণ মুলতানি মাটিতে ত্বক খানিকটা শুকিয়ে যায়।
তৈলাক্ত স্ক্যাল্পে পুদিনার রসের ব্যবহার চুলের গোড়ায় ময়লা জমতে দেয় না। ফলে চুল সুস্থ থাকে গোড়া থেকেই। চুলে প্রাণবন্ত সুবাস বজায় থাকে। পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে তাতে একটা লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে শ্যাম্পু দিয়ে। অথবা সারা রাতও লাগিয়ে রাখতে পারেন এই মিশ্রণ। সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যবহারেই পার্থক্যটা বোঝা যাবে।
তেজপাতা
শুধু রান্নার জন্য নয়, তেজপাতা কাজে লাগাতে পারেন ত্বক আর চুলের যত্নেও। স্কিন টোনিংয়ের জন্য হাতের কাছে পাওয়া এই পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কিছু তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। খুব ভালোভাবে ফোটানো হলে পাতা ফেলে দিয়ে পানি ঠান্ডা করে তা সংরক্ষণ করুন স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। তারপর প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন এই টোনার।
তেজপাতার উপকারিতা ত্বকের চেয়ে চুলের যত্নে বেশি। বেশ কিছু তেজপাতা একটি মাঝারি পাতিলে পানি ভরে ২০ মিনিট ধরে ফোটাতে হবে। ২০ মিনিট পর গন্ধ ছড়াতে থাকলে চুলা বন্ধ করে পানি ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। সম্পূর্ণ ঠান্ডা হলে তা ফ্রিজে রাখতে হবে। এই পানি দিয়ে চুল ধুলে পাবেন একাধিক সুফল। প্রথমত এটি চুলকে রেশমি ও চকচকে করে তুলবে। সে জন্য চুল ধোয়ার এক ঘণ্টা আগে এই পানি দিয়ে চুল একটু ভিজিয়ে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাথার খুশকি সমস্যা আর ইচি স্ক্যাল্পের সমাধান হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই পানি। এ ছাড়া চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য কয়েকটা তেজপাতা গুঁড়া করে তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া তেজপাতার পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরে আরাম পাওয়া যায়।
রোজমেরি
রোজমেরির প্রাকৃতিক গুণাগুণ ত্বকের সেলগুলোকে রোদ কিংবা ধূলিকণা থেকে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি রোজমেরির ব্যবহার ত্বকে সহজে বয়সের ছাপও পড়তে দেয় না। ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এর তেল। মুখ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তুলা দিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। ত্বক তেল পুরোপুরি শুষে নিলে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এই তেল প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবেও কাজ করে। একটি কটন বল রোজমেরি তেল আর অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে ভিজিয়ে সরাসরি আন্ডারমার্সে লাগিয়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে শরীরে কোনো দুর্গন্ধ হবে না, শরীর যতই ঘামুক।
রোজমেরি তেল জট ছাড়িয়ে চুলের ময়শ্চার ফিরিয়ে আনতে বেশ কার্যকর। ১ ভাগ এই অয়েলের সঙ্গে ১ ভাগ ল্যাভেন্ডার অয়েল এবং তার সঙ্গে ২ ভাগ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল পাবে নতুন প্রাণ। ক্যাস্টর অয়েল চুল শক্ত ও মজবুত করে সুন্দর একটা গন্ধ ছড়িয়ে চুলকে মসৃণ করে ল্যাভেন্ডার আর রোজমেরি।
থাইম
একনের দাগের জন্য থাইম পাতা বেশি উপকারী- এমনটাই মনে করে থাকেন অনেক বিউটি এক্সপার্ট। থাইমের তেল মুখে লাগানো হতে পারে প্রায় সব ধরনের ত্বক সমস্যার ‘ওয়ান স্টপ সলিউশন’। ত্বকের যেকোনো দাগ কিংবা স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে থাইম অয়েলের সঙ্গে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে দাগের ওপর লাগান। থাইম অয়েল খুব ভালো ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। কয়েক ফোঁটা তালুতে নিয়ে পুরো মুখে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে ব্যবহারের আগে ত্বকের কোনো একটা ছোট অংশে লাগিয়ে দেখুন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় কি না। যদি না হয়, তাহলেই এটি ব্যবহার করুন।

 শিরীন অন্যা
মডেল: নিকি ও এ্যানি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top