ফিচার I মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯
স্বপ্ন সত্যি হলো শিরিন আক্তার শিলার। হলেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি
‘আজ রাতেই আমাদের দশজনের মধ্যে যেকোনো একজনের ভাগ্য বদলে যাবে’, পারসোনার মেকআপ রুমে চুল সাজানোর সময় এ কথা বলছিলেন ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯’-এ অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের একজন। সত্যিই তো। আগের ৬৭টি ‘মিস ইউনিভার্স’ আসরে প্রতিযোগিতার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। এবারই প্রথম। দেশ থেকে জয়ী হতে পারলে সোজা দক্ষিণ কোরিয়ার মূল আসরে। তা ছাড়া ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ খেতাব জুটবে। মাথায় উঠবে ৭২০টি হীরাখচিত মুকুট। যার আর্থিক মূল্য ২০ লাখ টাকা। সেটা পরিয়ে দেবেন সুস্মিতা সেন। যিনি ১৯৯৪ সালের মিস ইউনিভার্স এবং বলিউড তারকা। মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতার মেকআপ পার্টনার ছিল পারসোনা। ম্যাগাজিন পার্টনার ক্যানভাস। টাইটেল স্পন্সর সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লোরা ব্যাংক’। অন্যান্য স্পন্সর ও পার্টনার- ইংলট, স্পø্যাশ, ইয়েলো, সহজ, মিসফিট টেকনোলজিস, বাঘের বাচ্চা ডিজিটাল, বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্রাফট ফাউন্ডেশন। পিআর পার্টনার নর্থব্রুক কনসালট্যান্টস।
‘আমার আত্মবিশ্বাস, আমার সৌন্দর্য’- স্লোগান নিয়ে শুরু হয় মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯ প্রতিযোগিতা। জুলাইয়ের শেষের দিকে শুরু হয় আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। মুকুট জয়ের আশায় তাতে নাম লিখিয়েছিলেন ১২ হাজার তরুণী। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৮-এর মধ্যে। নিবন্ধন শেষে হয়েছে অডিশন রাউন্ড। গ্রুমিং ও ফিল্মিং। তারপর মূল প্রতিযোগিতা।
যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় ১২ হাজার প্রতিযোগী থেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন এক হাজার। সেখান থেকে এক শ এবং পরিশেষে দশজন। চূড়ান্ত প্রতিযোগী ছিলেন মারিয়া মুমু, সানোবার তাইফা, স্মৃতি আক্তার, আফলা আমরার, জেসিয়া ইসলাম, তামান্না ইসরাত সোহানি, ঈরানা ইশরাত, তৌসিবা ইসলাম আনিতা, আলিশা ইসলাম ও শিরিন আক্তার শিলা। গ্রুমিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ। চলে ২৩ দিন। তা ছাড়া ক্যাম্প কাউন্সেলরও ছিলেন তিনি।
গ্রুমিংয়ের চারটি সেশনের দায়িত্ব ছিল পারসোনার। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার, হেয়ার ডু এবং মেকআপ। সেশনগুলো করিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নুজহাত খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এবার মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় কেউ অংশগ্রহণ করবে, এটা শুনেই এক্সাইটেড লেগেছে। যিনি বিজয়ী হবেন, তার সঙ্গে হয়তো সব সময় কোনো মেকআপ আর্টিস্ট থাকবেন না। তাই খুব কম পরিশ্রমে কীভাবে নিজের চুল ও ত্বক সুন্দর রাখা যায়, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য যে শুধু বাইরের বিষয় নয়, বরং এটা তাদের খাওয়া, ঘুম ও যাপিত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত; তাতেও জোর দিয়েছি। সেশনে প্রতিটি ক্লাসে প্রতিযোগীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের স্কিন ও চুলের নানা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে। আমাদের পারসোনা হেলথে প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেছেন তারা। তাদের নিউট্রিশনের দেখভালও করেছে পারসোনা।’
২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবরাত্রি হলে অনুষ্ঠিত হয় গ্র্যান্ড ফিনালে। পাঁচটি কিউর মাধ্যমে দর্শক মাতিয়েছেন প্রতিযোগীরা। শোতে তারা বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা, সারা করিম, এনিগমাজ, শাহরুখ আমিন ও আনজারা-এর কাপড় পরে হেঁটেছেন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন পারসোনার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান, গ্রিন ডেলটার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারজানা চৌধুরী, বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফটের প্রেসিডেন্ট তুতলী রহমান, ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী খান, ফ্লোরা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুস্তাফা রফিকুল ইসলাম, সুস্মিতা সেন, গায়ক ও উপস্থাপক তাহসান খান, ইনভিকটা হেলথকেয়ার লিমিটেডের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. জারিন দেলাওয়ার হুসাইন, পালস হেলথকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা রুবাবা দৌলা, ফরমার মিস ভেনচুরা কান্ট্রি অ্যান্ড জনসন কান্ট্রি ইউএসএ স্টার ফারুক।
দশজন প্রতিযোগীকে সহজ ও কঠিনের মিশেলে কিছু প্রশ্ন করেন বিচারকেরা। উত্তরের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে সুন্দরীদের। বিচারকদের দেওয়া নম্বর অডিট করে ফল নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল আ ওয়াহাব অ্যান্ড কোম্পানির। ফলাফলের ভিত্তিতে পাঁচজন প্রতিযোগী বাদ পড়েন। সেরা পাঁচে উঠে আসেন শিরিন আক্তার শিলা, আলিশা ইসলাম, জেসিয়া ইসলাম, মারিয়া মুমু ও আফলা আমরার। এর আগে দশ প্রতিযোগীর মধ্যে ছয়জনকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে বেস্ট হেয়ার অ্যাওয়ার্ড, এটি লাভ করেন শিরিন আক্তার শিলা। সেটি তার হাতে তুলে দেন নুজহাত খান। বেস্ট স্মাইল অ্যাওয়ার্ড পান সানোবার তাইফা, বেস্ট স্কিনে তামান্না ইসরাত সোহানি, পিপল চয়েজ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন আফলা আমরার, বেস্ট টিথে মারিয়া মুমু এবং মিস কনজেনিয়ালিটি অ্যাওয়ার্ড পান জেসিয়া ইসলাম। শেষের জনের হাতে তা তুলে দেন নুজহাত খান।
সেরা পাঁচজনকে দুটি করে প্রশ্ন করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সুস্মিতা সেন। এরপর প্রদত্ত নম্বরের ভিত্তিতে যথাক্রমে দ্বিতীয় রানার্সআপ, প্রথম রানার্সআপ ও বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ব্যাকুল নীরবতার মধ্য দিয়ে রানার্সআপ ও বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় রানার্সআপ হন জেসিয়া ইসলাম। প্রথম রানার্সআপ আলিশা ইসলাম। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হন শিরিন আক্তার শিলা। বিজয়ীর মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন সুস্মিতা সেন। এ সময় করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো হল। শিলা বলেন, ‘আজ থেকে আমিই বাংলাদেশ। আমার বাবা বিজিবির একজন সদস্য। তার মতো আমিও দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আমাকে দোয়া করবেন।’
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতা যৌথভাবে আয়োজন করে রিজ ইভেন্ট, অফ ট্র্যাক ও ট্রিলজি। ফলাফল ঘোষণার আগে মঞ্চে উঠেছিলেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ আয়োজন এবং রিজ ইভেন্টের চেয়ারম্যান রিজওয়ান বিন ফারুক, ট্রিলজির ডিরেক্টর সোহেল এ চাকলাদার, অফ ট্র্যাকের ডিরেক্টর মিথুন জামান ও শফিক ইসলাম। ইভেন্ট শেষে রিজওয়ান বিন ফারুক জানান, চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় হবে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার ৬৮তম আসর। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন শিলা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন কাজী সাবির।
শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট