অর্গানিক I নারিশিং নিম
সৌন্দর্যচর্চায় নিম দারুণ ফলপ্রদ। জানা চাই প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি
প্রাচীন ভারতে নিমকে বলা হতো জাদুকরী বৃক্ষ, ম্যাজিক্যাল ট্রি। একটা অদ্ভুত নিয়মও ছিল সে সময়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর শেষ চিকিৎসা হিসেবে তাকে শুইয়ে রাখা হতো নিমগাছের তলায়। ধারণা করা হতো, নিমের বাতাস এত বিশুদ্ধ, সব অসুখ শুষে নিয়ে শরীরকে সতেজ করে তুলবে। বাড়িতে নিমগাছ থাকলে সে বাড়ির লোকজন সহজে অসুস্থ হয় না- এমন বিশ্বাস পোষণ করে এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় আজও। প্রচুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে চিকিৎসাকাজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নিম। সৌন্দর্যচর্চাতেও রয়েছে এর নানা ব্যবহার। বিউটি প্রডাক্ট তৈরিতে সারা বিশ্বেই নিমের কদর আছে। ত্বকসংক্রান্ত যেকোনো ইনফেকশন কমাতে এর জুড়ি নেই। বলা হয়, ত্বকের ক্ষতি সারাইয়ে সমপরিমাণ নিম ও হলুদবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা শতভাগ কার্যকর। সৌন্দর্যসচেতন নারীদের কাছে প্রাকৃতিক রূপচর্চার উপাদান হিসেবে সারা বিশ্বে নিম জনপ্রিয়। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ন্যাচারাল অ্যান্টিসেপটিক। আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বক কোমল ও পেলব করে তোলার জন্য নিয়মিত শুধু নিমের পেস্ট বা বাটা ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
কমাতেও কার্যকর। বলা হয়, নিম অ্যান্টি-একনে প্রপার্টিজ সমৃদ্ধ। খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি ব্রণ কমানোর জন্য এক কাপ নিমপাতা তিন কাপ পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেদ্ধ করতে হবে। পাতা নরম হয়ে পানি সবুজ হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে ভরে রাখতে হবে বোতলে। তারপর প্রতিদিনকার গোসলের পানিতে মেশাতে হবে বোতলে থাকা কিছুটা নিম সেদ্ধ পানি। এটি যে কেবল ব্রণ কমাবে এমন নয়, কমাবে গায়ের দুর্গন্ধও। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ন্যাচারাল টোনার হচ্ছে এই নিম সেদ্ধ পানি। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এতে একটি কটন বল চুবিয়ে সারা মুখে ছোপ ছোপ করে লাগিয়ে মুছে নিলেই হলো। রাতভর এটি কাজ করবে ত্বকে থাকা ব্রণ, মেছতা এবং ব্ল্যাক হেডসের বিরুদ্ধে। খুশকি এবং অতিমাত্রায় চুল ঝরে পড়া কমাতেও এ মিশ্রণ রীতিমতো ম্যাজিক্যাল। সে জন্য শ্যাম্পু করার পর মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে এ পানি দিয়ে।
আসলে, নিমে থাকা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ত্বক সুরক্ষায় সহায়তা করে। এতে ত্বকের মৃত ভাব কাটে, সূক্ষ্ম দাগ, বলিরেখা ইত্যাদি কমে গিয়ে হয়ে ওঠে তারুণ্যময়। আর অ্যান্টিসেপটিক উপাদানগুলো যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল ত্বকেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার আশঙ্কা থাকে না।
শুষ্ক ত্বক এমনিতেই সমস্যাবহুল, কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেই শুষ্কতার পরিমাণ থাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। এ ধরনের ত্বকের নাম এক্সেসিভলি ড্রাই স্কিন। শুষ্কতার কারণে ত্বক চুলকানিপ্রবণ হয়ে ওঠে, বলিরেখা পড়ে তাড়াতাড়ি, প্রাণহীন হয়ে যায়। জন্মগতভাবে অতিমাত্রায় শুষ্ক হয় কারও কারও ত্বক। তাদের জন্য নিম মহৌষধ। সুফল পাওয়ার জন্য বানিয়ে নিতে হবে নিমপ্যাক। দুই টেবিল চামচ নিমপাতা গুঁড়ার সঙ্গে মেশাতে হবে কয়েক ফোঁটা গ্রেপ সিড অয়েল। নরম পেস্টের মতো হয়ে এলে সেটি মুখত্বকে সমানভাবে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে পনেরো মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে বরফঠান্ডা পানি দিয়ে। সপ্তাহে একবার বা দুবার করলেই যথেষ্ট। পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে এক সপ্তাহের মধ্যে। ত্বকে উজ্জ্বলতা আসবে, যা নামিদামি বিউটি প্রডাক্টেও পাওয়া অসম্ভব বটে।
ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং রোমকূপ অতিমাত্রায় বড় হয়ে গেলে
এ-সংক্রান্ত সমস্যা কমানোর জন্য নিম দিয়ে তৈরি হতে পারে চমৎকার একটি মাস্ক। নিমপাতা বাটা, কমলালেবুর খোসা বাটা, কয়েক ফোঁটা মধু, সয়া মিল্ক এবং পরিমাণমতো দই। সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি সারা মুখে হালকা ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাখতে হবে পনেরো মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে ত্বক। ত্বকে কেবল ব্ল্যাকহেডস থাকলে আক্রান্ত স্থানে সামান্য নিম তেল লাগিয়ে রাখলেই হবে।
চুলের যত্নেও এটি কোনো অংশে কম নয়। চুল ঝরে পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে, চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধে নিম কাজ করে। এর অ্যান্টিসেপটিক উপাদান খুশকি রোধে সহায়তা করে, পাশাপাশি মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কল্যাণে কমে যায় চুলের আগা ফেটে যাওয়া। সবচেয়ে সহজ ব্যবহার হচ্ছে সপ্তাহে তিন দিন পরিষ্কার চুলে নিম তেল ব্যবহার করা। এর ফলে সুস্থ থাকবে মাথার ত্বক। পাশাপাশি রুক্ষতা কেটে গিয়ে চুল হয়ে উঠবে নরম। ঝরে পড়ার হার কমবে। মাথার ত্বকের যেকোনো ইনফেকশন কমাতে বা অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা এড়াতে আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে, সেটি হলো নিমের গুঁড়া এবং পানির মিশ্রণ মাথায় ম্যাসাজ করা। পুরো চুলে সুন্দর করে এ প্যাক লাগিয়ে রাখতে হবে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। তারপর হালকা কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে নিতে হবে। যেকোনো আয়ুর্বেদিক স্টোরে পাওয়া যাবে নিমের গুঁড়া। নিমপাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাতা বাটা বা সেদ্ধ করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
রত্না রহিমা
মডেল: মাহি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান