skip to Main Content

ফিচার I প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ

কামড় দিয়ে প্রেম নিবেদনের রীতিও আছে! ফুলের পাশাপাশি কারুকাজ করা চামচ, আগুনে ঝলসানো পাখি কিংবা সেদ্ধ ভুট্টা- এসবও প্রিয়জনকে পাওয়ার জন্য। দেশে দেশে। লিখেছেন শিবলী আহমেদ

গ্রিক দেবী আফ্রোদিতি। তার প্রেমিক অ্যাডোনিস। ভালোবাসার মানুষটির বিরহে নিজের বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছিল আফ্রোদিতির। সেই রক্তেই গোলাপের রং হয়েছে লাল। ফুলটির সঙ্গে ভালোবাসার যোগ এই পৌরাণিক কাহিনি থেকেই। বিষয়টিকে আরও পোক্ত করেন সুইডেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লস। সাংকেতিক ভাষার প্রবর্তনের লক্ষ্যে গভীর প্রেমের প্রতীক হিসেবে তিনি লাল গোলাপকে নির্দিষ্ট করে দেন। তবে বিশ্বের সব দেশেই যে এই ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন হয়, তা নয়। হল্যান্ডের প্রেমপ্রত্যাশী মেয়েরা গোলাপ রেখে দেয় প্রেমিকের চলার পথের পাশে থাকা জানালায়। ছেলেরা তা দেখে বুঝতে পারে যে এ বাড়ির কোনো একটি মেয়ে তার প্রেমে মজেছে।
ফুলই প্রেম নিবেদনের একমাত্র অনুষঙ্গ নয়। বিশেষ রঙের পোশাক পরলেও তা ব্যক্ত হয়। যেমন ব্রিটেন। প্রেমে সম্মত মেয়েরা সবুজ পোশাক পরে। যারা প্রণয় নিয়ে দ্বিধায় ভোগে, তারা গায়ে নেয় হলুদ জামা। তবে ছেলেদের সতর্ক থাকতে হয় লাল পোশাক পরিহিতাদের কাছ থেকে। সেই মেয়েরা মূলত প্রেম থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে চায়।
হল্যান্ডের প্রেম নিবেদন রীতির প্রায় সমকক্ষ একটি পদ্ধতি দেখা যায় মেক্সিকোতে। তবে তারা জানালার পাশে ফুল রাখে না। তাদের প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ ‘মিউজিক’। সুর তোলে ছেলেরা। কাক্সিক্ষত মেয়ের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাজায় বাদ্যযন্ত্র। সেই সুরে কাজ হলে মেয়েটি জানালার ধারে আসে। প্রেম হয়। কাজ না হলে রাতভর চলে বাজনা। তাতেও লাভ না হলে কী হয়, তা অজানা। সেই দেশের কিকাপু আদিবাসী ছেলেরা প্রেম নিবেদন করে শিস বাজিয়ে। এটির মাধ্যমে পছন্দের মেয়েকে কাছে ডাকে প্রেমিক। সাড়া পেলেই শুরু হয় প্রেম। স্প্যানিশ দরিদ্র প্রেমিকেরাও মিউজিক করে প্রেমিকা খুঁজে বেড়ায়। তারা অবশ্য বাদ্যের সঙ্গে গানও গায়। গিটার হাতে ঘোরে পথে পথে। মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়ে পানশালায়। প্রেমিকা মিললে মেলে, নইলে আবারও গিটার হাতে ছোটে অজানা গন্তব্যে। গান গেয়ে প্রেম নিবেদনের রীতি দেখা যায় থাইল্যান্ডেও। প্রেমিক গিয়ে প্রেমিকার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ায়। তারপর ধরে গান। এতে মেয়ে সন্তুষ্ট হলে তবেই প্রেম। প্রেমিকার পরিবার সন্তুষ্ট হলে তা বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত গড়ায়। প্রেম নিবেদনে অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে গোলাগুলিও হয়। আফগানিস্তানের এক আদিবাসী গোত্রে এই রীতির দেখা মেলে। কাক্সিক্ষত মেয়ের বাড়ির সামনে গিয়ে আকাশে ফাঁকা ফায়ার করতে থাকে প্রেমিক। সায় না পেলে চলতেই থাকে গোলাগুলি। তাতে অবশ্য কারও কোনো ক্ষতি হয় না। গুলি ছোড়ার শব্দ কিছুটা কানে লাগে, এ-ই যা। তবে ট্রোবিয়্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ছেলেদেরকে প্রেম গ্রহণে কিছুটা শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কারণ, প্রেমিকারা প্রেম নিবেদনকালে ছেলেদের হাতে কষে কামড় বসায়। ক্ষত যত গভীর হয়, সেই মেয়ের প্রেমও তত তীব্র।
প্রেম প্রস্তাব কখনো কখনো নিয়ে আসে ভোজনসুখ। কঙ্গোর ছেলেরা একটি ঝলসানো পাখি মেয়ের হাতে দিয়ে প্রেম নিবেদন করে। বলে, পাখিটি সে নিজেই শিকার করেছে। কেউ কেউ সেদ্ধ ভুট্টা দিয়ে কাজটি করে এবং জানায় যে এটি তার চাষের ভুট্টা। অর্থাৎ প্রেমিক হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ছেলেরা নিজেকে পাকা শিকারি কিংবা দক্ষ কৃষক হিসেবে পরিচয় দেয়। তাঞ্জানিয়ার কিছু আদিবাসী ছেলেকেও প্রেম নিবেদনে নিজেকে শিকারি প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু তারা নিরীহ একটা ঝলসানো পাখি দিয়ে প্রেমের সম্মতি পায় না। তাদেরকে শিকার করতে হয় সিংহ কিংবা অন্য কোনো হিংস্র পশু। সাহস পরখ করেই মন দেয় সে জাতির মেয়েরা।
প্রেম নিবেদনের যেসব খাবার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর সব কটিতে ছেলেদের রুচি না-ও থাকতে পারে। অস্ট্রিয়ান মেয়েরা নাচের সময় এক টুকরা আপেল তাদের বগলের নিচে রেখে দেয়। তারপর সেটি উপহার দেয় প্রত্যাশিত প্রেমিককে। ছেলেটি যদি সেই আপেল খায়, তাহলে বুঝতে হবে যে তার সম্মতি আছে। এভাবেই পরস্পর প্রেমে আবদ্ধ হয়।
পর্তুগালের রীতি অনুযায়ী প্রেমপ্রত্যাশী মেয়েরা বেশ পরিশ্রম করে রুমালে নকশা আঁকে। তারপর তা কাক্সিক্ষত ছেলেটির কাছে পাঠায়। রুমাল প্রেরণের পরের রোববার যদি সেই ছেলে তা নিজের গলায় ঝোলায়, তাহলে বোঝা যায় যে সে সম্মত আছে। অন্যথায় রুমালটি মেয়েটির কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ানদের প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ হচ্ছে চকলেট। প্রথমে নারীরা প্রেমিকদের কাছে তা পাঠায়। পরে পুরুষেরা প্রেমিকার কাছে প্রেরণ করে। জাপানি নারীরাও চকলেট পায় প্রেমিকের কাছ থেকে। ডেনমার্কে প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ হিসেবে স্নোড্রপ ফুলটি গোলাপের মতোই বহুল প্রচলিত। অবশ্য সেই দেশের প্রেমপ্রত্যাশী পুরুষের কেউ কেউ প্রেমিকার মন জোগাতে কবিতা লিখেও পাঠায়। পেরুর প্রেমিকেরা প্রেম প্রস্তাবকালে সঙ্গে নেয় সাধারণ অর্কিড। জার্মানিতে প্রেম নিবেদনের উদ্দেশ্যে প্রেমিকার বাড়ির উঠানে মস্ত এক বার্চ গাছ পোঁতা হয়।

সেই বৃক্ষের আগায় রঙিন ফিতা বেঁধে রাখে প্রেমপ্রত্যাশী। ওয়েলসের প্রেমিকেরা কাঠের চামচের ওপর নকশা খোদাই করে। আগে সে দেশের পুরুষেরা যখন সমুদ্রযাত্রায় বেরোত, তখন কাজের অবসরে তারা চামচের ওপর কারুকাজ করত। ফিরে এসে সেটি পছন্দের মেয়েকে উপহার দিত। তারপর চামচটিকে প্রেমিকার অভিভাবকেরা সূক্ষ্মভাবে পরখ করত। প্রেমিকের শৈল্পিক দক্ষতা দেখে তবেই মিলত প্রেমের সুযোগ। এখন অবশ্য কারুকাজ করা রেডিমেড চামচই কিনতে পাওয়া যায় ওয়েলসের দোকানে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষে এসব রীতির অনেকগুলোই বদলে গেছে। যেমন অনেকের মধ্যেই এফএম রেডিও শোনার ঝোঁক আছে। বিশেষ প্রোগ্রামে কোনো এক প্রেমিক এসএমএস করে তার কাক্সিক্ষত প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করেছে, এমন নজিরও আছে। তা ছাড়া আজকাল সামনাসামনি প্রস্তাব না দিয়েও প্রেম হচ্ছে-ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাতে।
ছোট ছোট শোপিস মোড়কে পুরে প্রস্তাব দেওয়ার চল আছে। ভালো কোনো লাইটার প্রেমিককে দিয়ে চিরকুটে লিখে দেওয়া হয় ‘অনলি ফর ক্যান্ডেল, নট ফর স্মোকিং’। প্রেমের প্রস্তাবে এসব অনুষঙ্গের দেখা মেলে জনসাধারণের মধ্যে। কিন্তু তারকাদের অনুষঙ্গ এসব ছোট ছোট জিনিসকে ছাড়িয়ে যায়। গাড়ি, ফ্ল্যাট, হীরার গয়নার মতো অতিমূল্যবান বস্তু দিয়েও প্রেমের প্রস্তাব দিতে দেখা যায় সেলিব্রিটি ও ধনাঢ্য সমাজে। আবার পড়–য়া প্রেমিক-প্রেমিকেরা প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে বই। এমন প্রিয়জন থাকলে তাকে বই উপহার দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top