skip to Main Content

কুন্তলকাহন I নির্যাসে পরিচর্যা

সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি জুসে চুল ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার দাওয়াই। রাসায়নিকে তৈরি প্রসাধনীজনিত ক্ষতি এড়ানোর সহজ উপায়

সুন্দর, উজ্জ্বল চুল সবাই চায়। কিন্তু এমনটা পাওয়া একেবারে সহজ নয়। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, হার্ড ওয়াটার, ধুলা, দূষণ ও রাসায়নিকের সংস্পর্শ- এগুলো চুলের গুণগত মান নষ্ট করার জন্য দায়ী। সুন্দর চুল পেতে অনেকেই হেয়ার প্রডাক্ট কেনার পেছনে হাজার টাকা ব্যয় করেন। এসবের দু-একটি মোটামুটি কাজ করে। তবে আমাদের রান্নাঘর প্রাকৃতিক প্রতিকারের ভান্ডার, যা সুন্দর চুল পেতে সহায়ক এবং খরচ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া ব্যস্ত জীবনে বেশির ভাগ সময় পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় না। এতে চুল দুর্বল ও ম্লান হয়ে পড়ে। তাজা ফল, সবজি ও মসলা- যেগুলো রান্নাঘরেই থাকে, এসব উপকরণে তৈরি জুস হতে পারে পুষ্টি, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার সহজ উপায়। এগুলো চুলকে ভালো রাখে, বাড়তেও সহায়তা করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহার চুলের জন্য ক্ষতিকর। কেননা এগুলোর বেশির ভাগে কেমিক্যাল থাকে।
অতি পরিচিত সবজি আলু। সারা বছর এটি সুলভ বলে চুলচর্চায় এর ব্যবহার করা যায় সহজে। চুলের বৃদ্ধির জন্য এই সবজির নির্যাস একটি কার্যকর উপকরণ। এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, যেগুলো অক্সিজেন লেভেল বাড়ায়, কোলাজেন মেরামত ও পুনরুদ্ধারে কাজ করে। কোলাজেন হলো ত্বক ও অন্যান্য সংযোজক টিস্যুতে পাওয়া প্রোটিন। উন্নত কোলাজেন চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আলুর রস দিয়ে হালকা ম্যাসাজ স্ক্যাল্প সেলের সক্রিয়তায় সহায়ক, যা চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতায় উৎসাহ দেয়।
তৈলাক্ততার অভাবে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। আলুর স্টার্চ মাথার ত্বকে ও গ্রন্থি কোষে থাকা তেলের পরিমাণ বাড়াতে কাজ করে। এর নির্যাস চুল ঝরা কমাতে সহায়ক। এই সবজির রস আঙুলের ডগার সাহায্যে মাথার ত্বকে পনেরো মিনিট আলতো ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এরপর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে ফেলতে হয়। মাসে তিন দিন এই প্রক্রিয়ায় চুল ম্যাসাজ করতে হবে।
চুল স্বাস্থ্যকর, লম্বা এবং ঝলমলে করার কাজে সিলিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ এবং চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে। খনিজ উপকরণের অভাব হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী, এটি চুল পড়ার একটি কারণ।
দুটি শসা, দুটি গাজর, একটি টমেটো, এক টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। শসাতে থাকা খনিজ সিলিকা মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন দ্রুত করে এবং চুল বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেয়। ভিটামিন এ এবং বিটা যৌগের সংমিশ্রণে সিলিকা চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে। ঝরে পড়া, ভঙ্গুরতা ও ফেটে যাওয়া রোধ এবং চুলের মানের উন্নতি ঘটায়।
হেঁসেলে থাকা মধু, পালংশাক, ডালিমের জুস চুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করতে পারে। জুস থেকে সবচেয়ে ভালো উপকার পেতে প্রতিদিন সকালে খাবারের আগে এটি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পালংশাক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ। এসব পুষ্টিগুণ চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। জুস তৈরিতে প্রয়োজন এক মুঠো পালংশাক। এর সঙ্গে সিয়া সিড ও সূর্যমুখী বীজ ছাড়াও মিষ্টিকুমড়ার বীজ যোগ করা যেতে পারে। আগেই বীজের এই মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে। জুস তৈরির সময় এক টেবিল চামচ মিশিয়ে নিলেই চলবে। এটি ফাইবার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ। বীজগুলো পানীয়টির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স লোড কমাতে পারে। তা ছাড়া সরবরাহ করবে নন-ডেইরি ক্যালসিয়াম।
কলা, পালংশাক ও লেবু- এগুলো ভালো মানের ভিটামিন সমৃদ্ধ। এক মুঠো পালং, তিনটি কলা এবং অর্ধেকটা লেবুর রস ও পরিমাণমতো পানি ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
ব্লুবেরি, ক্যানবেরি, আমলা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দিতে পারে, যা চুল পাকাতে বিলম্ব ঘটায় এবং প্রাকৃতিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। এসব ফল এক মুঠো নিয়ে তার সঙ্গে একটা ডালিমের অর্ধেকটার দানা মিশিয়ে জুস তৈরি করতে হবে। এগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পিউনিক অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সব জুসের জন্যই এক টেবিল চামচ মধু প্রয়োজন। শুধু পানীয় মিষ্টি করতেই নয়, এটি হজম সহায়ক এবং এর কিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ভূমিকা চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকর।
গাজরের ভিটামিন এ চুলের জন্য দুর্দান্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনসহ ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজে পরিপূর্ণ এই সবজি। দুই কাপ গাজর, একটি আপেল, এক কাপ কমলার রস, এক ইঞ্চি কিউব তাজা হলুদ, এক ইঞ্চি কিউব তাজা আদা, পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এই জুসে এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে হয়। এতে পাওয়া যাবে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। এটি খুশকি এবং মাথার ত্বকের জ্বলুনি হ্রাস করে। এ ছাড়া ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়তা করে।
লেটুস, শসা, মধু ও লেবু দিয়ে তৈরি পানীয় টক, মিষ্টি এবং সুস্বাদু। লেটুস ভিটামিন ই সরবরাহ করে, যখন শসা শরীরকে ডিটক্সিফাই করবে। একগুচ্ছ লেটুস, একটি লেবুর অর্ধেকটার রস, এক চা-চামচ মধু এবং খোসা ছাড়ানো একটি ছোট শসা ব্লেন্ড করে একটি মসৃণ পানীয় তৈরি করতে হবে। ন্যাচারালি গ্লোয়িং ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে এই জুস পান করতে হবে নিয়মিত। তৈরির পরপরই পান করা ভালো। নতুবা এর খাদ্যগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। এই গরমে জুস তৃষ্ণা ও পানীয়ের অভাব পূরণ করবে, চুলও ভালো রাখবে।

 তাসমিন আহমেদ
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top