কুন্তলকাহন I ঝলমলে চুলের রহস্য
উজ্জ্বলতা থাকতে হয় চুলে। সে জন্য রয়েছে নানা উপায় আর উপাদান। নিয়ম মেনে প্রয়োগ করলেই ধরা দেবে ঝলমলে চুল
বাতাসের আর্দ্রতাহীনতা, ধুলাবালি, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, ঠান্ডা আবহাওয়া- নানা কারণেই প্রাণহীন, নিষ্প্রভ ও অনুজ্জ্বল হয়ে পড়তে পারে চুল। এমনকি শীতকালে গোসলে গরম পানি ব্যবহারের কারণেও তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুক্ষতা ও শুষ্কতার মাত্রা বেড়ে যায়। চুলের রেশমি কোমলতা বজায় রাখার জন্য সব সময়ই পরিষ্কার ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা শ্রেয়। পাশাপাশি প্রয়োজন শ্যাম্পু করার পর নিয়মিত ডিপ কন্ডিশনিং করা। তাতে চুলের প্রাণহীনতা কাটে। এটি কঠিন কাজ নয়। বরং খুব সহজ উপায়েই করা যায়। দুই টেবিল চামচ কন্ডিশনারের সঙ্গে মেলাতে হবে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল। তারপর আলতোভাবে সারা চুলে লাগিয়ে পনেরো থেকে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। হট অয়েল ম্যাসাজেও বাড়ে চুলের উজ্জ্বলতা। মাথার ত্বক নরম রাখতেও এটি কাজ করে। নিয়ম হলো, পছন্দমতো যেকোনো তেল হালকা গরম করে নিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে হবে। এক ঘণ্টা রেখে তারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখতে হবে দশ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। পাশাপাশি বাইরে বের হবার সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুল রক্ষার জন্য ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার করা জরুরি। অর্থাৎ যেকোনো উপায়ে চুল ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সতেজতা বজায় থাকে।
তবে চুল ভালো রাখা আর শাইনি করে তোলার ব্যাপারটা ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন এক্সট্রা কেয়ার। সহজ কিছু কৌশলেও সেটি সম্ভব। যেমন, একটি স্প্রে বোতলে আধা কাপ ঠান্ডা দুধে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুলে স্প্রে করে রেখে দিতে হবে দশ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা পানি দিয়ে। মুহূর্তেই নরম, কোমল, ঝলমলে হয়ে উঠবে চুল। তা ছাড়া যেকোনো শ্যাম্পুর সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে লাগালেও চুল শাইনি হবে। আরেকটি মজার পদ্ধতি হলো, শ্যাম্পু করার পর বিয়ার দিয়ে চুল ধুয়ে নেয়া। মাসে একবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার হিসেবে বিয়ার ব্যবহার করলে চুল স্বাভাবিকভাবে সিল্কি হয়ে ওঠে। করা যেতে পারে আরেকটি কাজও। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ও পানি সমান অনুপাতে মিশিয়ে নিতে হবে। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার হিসেবে এ মিশ্রণ ব্যবহার করলেও চকচকে হবে চুল। তবে যাদের চুল অতিমাত্রায় নিষ্প্রভ হয়ে গেছে, এক্সট্রা কেয়ার হিসেবে তাদের জন্য জরুরি সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করা। বেশ কিছু হেয়ার প্যাক রয়েছে, যা শুধু চুল উজ্জ্বল করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। তেমন কিছু প্যাক রেসিপি:
দুই টেবিল চামচ টকদই, একটা লেবুর রস ও একটা ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে গোসলের আগে পুরো চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। আধঘণ্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে ভালোভাবে। অথবা যেকোনো অয়েল ম্যাসাজের পর দুই টেবিল চামচ আমলকীর রস, এক চা চামচ মেথি গুঁড়া, তিন চা চামচ মেহেদির রস, একটা ডিম মিশিয়ে তৈরি করে নিতে হবে হেয়ার প্যাক। পুরো চুলে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে ১ ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে যেকোনো ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু দিয়ে। এর ফলে চুল রেশমের মতো নরম হবে, পাশাপাশি গোড়াও শক্ত হবে।
তিনটি ডিম, দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল এবং এক টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। চুলে ভালো করে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
তিন টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলে মেশাতে হবে দুই চা চামচ টকদই। তারপর মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে পরে নিতে হবে একটি শাওয়ার ক্যাপ। সারা রাত এভাবে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে পরের দিন। ঝলমলে হওয়ার পাশাপাশি এতে সুস্থ থাকবে চুল।
আরেকটি প্যাক তৈরির জন্য দুধের সঙ্গে মেশানো যেতে পারে লেবুর রস। লাগবে দুই কাপ দুধ এবং একটি লেবুর রস। দুটোকে একসঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে লাগাতে হবে গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুলে। আধা ঘণ্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা পানি দিয়ে।
তবে সবচেয়ে সহজ ট্রিটমেন্ট হলো সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখা জবা ফুলের পাপড়ি। বেটে পেস্ট তৈরি করে পুরো চুলে তা ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে ধুয়ে ফেলা। অথবা সর্ষের তেল, লেবু ও দই একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগালেও কাজ হবে। তবে নিয়ম হচ্ছে ধোয়ার আগে রাখতে হবে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট।
তেল মাথার ত্বকের পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি চুল পরিপুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। মাঝে মাঝে চুল খুব ফ্রিজি বা নির্জীব হয়ে গেলে সেই তেলই চুলের জন্য হয়ে উঠতে পারে জাদুকরী। তেল দিয়ে তৈরি করা যায় চমৎকার হেয়ার শাইন মেডিসিন। এতে লাগবে বিভিন্ন রকম তেল। পিনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল ও নারকেল তেল সমান অনুপাতে নিয়ে একটি পাত্রে গরম করে নিতে হবে। তারপর নামিয়ে ঠান্ডা করে রেখে দেয়া যেতে পারে। প্রতিবার ব্যবহারের আগে হালকা গরম করে ম্যাসাজ করতে হবে চুলে। গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললেই চুল ফিরে পাবে তার হারানো উজ্জ্বলতা।
রত্না রহিমা
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান