skip to Main Content

স্বাদশেকড় I নাচোস

মেক্সিকো থেকে খুব অল্প সময়ে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশেষ খাবার থেকে রূপান্তরিত হয়েছে দৈনন্দিন নাশতায়। আবিষ্কার ‘ইগনাসিও’র হাতে হলেও ব্যবসায়ী ‘ফ্রাঙ্ক লিবার্তো’র বদৌলতে পেয়েছে প্রচার ও প্রসার। ফলে মূল রসুইকরের নাম কিছুটা উপেক্ষিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক নাচোস দিবস থাকায় সেই আফসোস কিছুটা হলেও ঘোচে

মুচমুচে ত্রিকোণ খাবার। মাংসযোগে। সঙ্গে মেয়োনেজ ও পরিমাণমতো মসলা। সম্প্রতি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিদেশি এ পদ। নাশতা হিসেবে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে বেশ জুতসই। ছেলে, বুড়ো—সবার পছন্দের হওয়ায় বাড়িতে হয় এই রেসিপির চর্চা। জনপ্রিয়তার কারণে রেস্তোরাঁগুলোও মেনুতে নাচোস রাখে। যদিও খাবারটি বহুদূর থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তল্লাশি চালালে এর আঁতুড়ঘর বেরোয় মেক্সিকো। সেখান থেকে পদটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে মুখরোচক স্বাদ নিয়ে। এর একজন আবিষ্কারক আছেন। নাম ইগনাসিও আনায়া।
১৯৪৩ সাল। মেক্সিকোর পেদ্রেস নেগ্রেসের ডানকান দুর্গের পাশে মোটামুটি বিকিকিনি নিয়ে চলছিল একটি রেস্তোরাঁ—ভিক্টরি ক্লাব। সেটির রসুইকর ইগনাসিও। সাদামাটা মানুষ। ব্যবসার চেয়ে অতিথিদের সন্তুষ্টিই মুখ্য তার কাছে। কাউকে পেটপূর্তি না করিয়ে ছাড়তে নারাজ। কেউ খালি মুখে ফিরে গেলে নিজেই অসন্তুষ্টিতে ভোগেন। শপিং মলের পাশেই দোকান থাকায় অতিথিদের ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকত। সেখানে মেক্সিকান সৈন্যদের স্ত্রীদের আনাগোনা ছিল। শপিংয়ের জন্যই। অনেকক্ষণ ধরে কেনাকাটা শেষে তারা আশপাশের রেস্তোরাঁয় ঢুকতেন, পেটে কিছু দানাপানির জোগান দেওয়ার জন্য। তেমনই ব্যস্ত একটি দিনে শপিং শেষে তারা ঢুকে পড়েন ইগনাসিওর সরাইয়ে। ততক্ষণে রেস্তোরাঁর হাঁড়ি শূন্য! কিন্তু এতগুলো ক্ষুধাতুর নারীকে শুকনা মুখে ফেরাতে মন সায় দিচ্ছিল না ইগনাসিওর। কী করা যায়, ভাবতে থাকেন। উপায়ও বের করে ফেলেন। রেস্তোরাঁয় বেঁচে যাওয়া উপকরণগুলো দিয়ে কিছু করা যায় কি না, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছিলেন। পুরো রেস্তোরাঁ হাতড়ে মিলল টারটিলা চিপস, জালাপেনো ও পনির। সেগুলো দিয়েই আনমনে তৈরি করে ফেলেন মুচমুচে একটি পদ। তবে পরিবেশনের আগে এর একটা নাম তো দেওয়া চাই। বেছে নিলেন নিজের ডাকনামটিই—‘নাচোস’। পদের নাম হলো ‘নাচোস ইস্পিশিয়ালস’। এ নামেই খাবারটি দেওয়া হলো ক্ষুধা ও ক্লান্তি নিয়ে রেস্তোরাঁয় আসা সৈনিকদের স্ত্রীকুলের সামনে। পৃথিবীতে জন্ম হলো নতুন এক খাবার, যা কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ব মাতাবে। ইগনাসিও কি তা জানতেন?
মার্কেটিংয়ে খুব একটা দক্ষ ছিলেন না নাচোসের আবিষ্কারক ইগনাসিও। তবু খাবারটি ব্যাপক প্রসার পেল। এখানে আরেকজনের নাম চলে আসে খাবারটির ফিরিস্তিতে। ফ্রাঙ্ক লিবার্তো। ইগনাসিওর কাছ থেকে নাচোস তৈরির কায়দা শিখে নেন তিনি। তবে কিছুটা ফিউশন আনেন উপকরণে। ইগনাসিওর মতো ফ্রাঙ্কও নাচোসে পনির ব্যবহার করেছেন ঠিকই, কিন্তু গলিয়ে। ফলে স্বাদটা আরেকটু খোলতাই হলো। তবে ভাগ্য হোক কিংবা কৌশল, আরেকটি উপাত্ত রয়েছে, যা ফ্রাঙ্ককে লাভবান করেছিল। তিনি তার নাচোসের দোকান খুলেছিলেন আরলিংটন স্টেডিয়ামের পাশে। ১৯৭৬ সালে। ফলে বেসবল খেলা দেখতে আসা দর্শকদের মাধ্যমে খাবারটির স্বাদের কথা দূরদূরান্তে ছড়াতে থাকে। পরে অন্যরা থিয়েটারের মতো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে নাচোসের দোকান খুলতে থাকেন। এতে মাত্র ২০ বছরের মধ্যে একটি স্থানীয় খাবার রূপ নেয় আন্তর্জাতিক পদে। আনুষ্ঠানিক খাদ্য থেকে তা হয়ে ওঠে নিত্যদিনের নাশতা। তবে খ্যাতি চলে যায় ফ্রাঙ্কের ভাগ্যে। নাচোসের জনক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ইগনাসিওর হাত দিয়ে শুরু হওয়া নাচোসের যাত্রা পূর্ণতা পায় ফ্রাঙ্কের মাধ্যমে। মুখরোচক এই পদের জনকের মৃত্যু হয় ২০১৭ সালে। ৮৪ বছর বয়সে। বর্তমানে নাচোসের বয়ানে ইগনাসিওর চেয়ে ফ্রাঙ্ক লিবার্তোর নামই বেশি সমাদৃত।
ফ্রাঙ্ক ছাড়াও ইগনাসিওর আবিষ্কৃত পদটি ধরে রাখতে ইগল পাস চার্চের ভূমিকা রয়েছে। এই উপাসনালয়ের রেসিপির বইয়ে নাচোস পদ ও ইগনাসিওর নাম খুঁজে পাওয়া যায়। রান্নার বইটি নিশ্চিত সাক্ষ্য দেয়, ইগনাসিওই পদটির আবিষ্কারক। ১৯৭৫ সালে তিনি মারা গেলে ইগল পাসের পাশে অবস্থিত তার রেস্তোরাঁটির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ছেলে ইগনাসিও আনায়া জুনিয়র। তিনি নাচোসের সঙ্গে তার বাবার নাম পাকাপাকিভাবে জুড়ে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। বাবার আবিষ্কারের স্বীকৃতি এনে দেওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যান। তবে শেষমেশ সফল হননি। আইনজীবীরা তাকে জানিয়ে দেন, এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে আর তেমন কিছু করা সম্ভব নয়। এখন এই খাবার জনসাধারণের সম্পত্তি। লোকজন পদটিকে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে।
বাবার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের পাশাপাশি নাচোস প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনেও থাকেন ইগনাসিও জুনিয়র। তবু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। নাচোসকে ইগনাসিও আবিষ্কৃত পদ হিসেবে সবাই জানলেও কাগজে-কলমে তা প্রতিষ্ঠা পায়নি। ২০০২ সালে সান আন্তোনিয়োর এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছিলেন ইগনাসিও আনায়া জুনিয়র। তবে খুব অল্প সময়েই নাচোসের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। এমনকি এখন তো আন্তর্জাতিক নাচোস দিবসও পালন করা হয়। অক্টোবরের ২১ তারিখে। নাচোস নিয়ে যে একটি আলাদা দিন রয়েছে, তাতেই খুশি ইগনাসিও জুনিয়র।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top