skip to Main Content

মনোযতন I দুর্ঘটনার ট্রমা

দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে মনোজগতে। সেই ট্রমা ঠিকঠাক কাটিয়ে উঠতে নেওয়া চাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

দুর্ঘটনা-পরবর্তী ট্রমার কারণে প্রতিবছর অনেকের মৃত্যু ঘটে। শুধু তা-ই নয়, সারা জীবনের জন্য শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষমও হয়ে যান অনেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১২ লাখ মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হন। আহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বাংলাদেশে বিষয়টি আরও ভয়াবহ! পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ৫ মিনিটে একটি করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সব ট্রমার মধ্যে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ ঘটে এসব দুর্ঘটনার কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে মৃত্যু এবং শারীরিক-মানসিক অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ ট্রমা। শুধু সতর্কতামূলক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেই এসব দুর্ঘটনার প্রায় ৫০ শতাংশ এড়ানো যায়। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পর ট্রমার শিকার হলে আক্রান্তের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। কীভাবে ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসবেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন নিজেকে নির্ভার রাখা।
চলুন, ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রধান সাইকোথেরাপিস্ট ডা. মোহিত কামালের কথায় ভর দিয়ে।
পারিবারিক সম্পর্কে সজাগ
ট্রমা থেকে বাঁচতে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পারিবারিক সম্পর্কের প্রতি। পরিবারের লোকদের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটান। দেখবেন, নিজেকে অনেকটা চাপমুক্ত লাগছে। কোনো পুরোনো শোক বা মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেও পরিবারের সঙ্গ বেশ কাজে দেয়।
দায়িত্বের ভার
যেকোনো সংকট ও সমস্যায় মাথা ঠান্ডা রাখুন। সব দায়িত্ব একা পালন করতে যাবেন না। যতটুকু দায়িত্ব পালন করা সম্ভব, ততটুকুই নিজের ঘাড়ে নিন। এতে আপনার ওপর ভর করা মানসিক চাপ অনেকটাই কমবে।
শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্ভার
ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। এক থেকে চার পর্যন্ত গুনুন। তারপর চার পর্যন্ত গুনে ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন। কয়েকবার এভাবে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করুন। এতে অনেকটাই নির্ভার ও চাপমুক্ত মনে হবে নিজেকে।
পুরোনো অ্যালবামে স্বস্তি
সবারই এমন কিছু স্মৃতি থাকে অ্যালবামে কিংবা মোবাইল ফোনের ফটো গ্যালারিতে, যা বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। এমন অ্যালবাম থাকলে তা বের করুন আর আনন্দের স্মৃতিবিজড়িত ছবিগুলো দেখুন। এতে আনন্দ আর সুখের দিনগুলো থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।
চোখ থাক বন্ধ
খুব বেশি স্ট্র্রেস লাগলে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখুন। এতে একাগ্রতা বাড়বে, সেই সঙ্গে নেতিবাচক অনুভূতি থেকেও পাবেন মুক্তি।
কারণের সন্ধান
মোবাইল নোটসে অথবা খাতাকলমে আপনার স্ট্রেসের সম্ভাব্য কারণগুলো লিখতে থাকুন। একে একে বেশ কিছু কারণ বেরিয়ে আসবে। সেগুলো থেকে নিজেই মোটাদাগের কারণ খুঁজে নিন। আর ধীরে ধীরে সেসব কারণের সমাধানের পথে বাড়ান পা।
বৃত্তের কেন্দ্রে দৃষ্টি
খুব বেশি খারাপ কিংবা অস্থিরতা অনুভব করলে সাদা কাগজে ছোট্ট একটি বৃত্ত এঁকে তার মাঝের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রায় ৩০ সেকেন্ড চেষ্টা করুন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার। এ ছাড়া ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারেন। আবার অল্প সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে নাম্বার কাউন্টিং করলেও অনেক সময় স্ট্রেস কমে যায়। তাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
উপযুক্ত যোগব্যায়াম
যোগব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে অ্যান্ডোর্ফিনের নিঃসরণ বাড়ে, যা মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। তা ছাড়া যোগব্যায়াম মেদবহুলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমায়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনার শরীরের উপযোগী যোগব্যায়ামের ধরন বেছে নিন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ট্রমার মধ্যে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নেবেন। মনে রাখবেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ট্রমা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন।
সতর্কতা
খুব বেশি ক্লান্তি লাগলে সেই অবস্থায় কখনোই গাড়ি চালানোর দরকার নেই। খুব বেশি ব্যস্ততা থাকলেও গাড়ি চালানো নিরাপদ নয়। বাড়িতে কিংবা নিজের গাড়িতে অবশ্যই প্রাথমিক চিকিৎসার সামান্য কয়েকটি জিনিস রেখে দিন। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর কিংবা রাস্তাঘাটে চলার সময় অত্যন্ত সতর্কভাবেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করুন। আর চেষ্টা করুন বাসায় বদ্ধ ঘরে না থাকার। সম্ভব হলে ঘরের জানালা-দরজা খোলা রাখবেন। এতে ঘরের মধ্যে বদ্ধ পরিবেশের ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।
বলি…
আমরা মাঝেমধ্যে ভীষণ কষ্টের মুখোমুখি হই। কিছু কষ্ট মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে, যা থেকে সহজে বের হয়ে আসা যায় না। বারবার মনে পড়তে থাকে। নিজে নিজেই তখন কষ্ট পাই। এই কষ্ট আপনার চলার গতি থামিয়ে দিতে পারে। একই আঘাতে কেউ হয়তো ঠিকভাবে চলতে পারে, আবার কেউ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। কোনোভাবেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয় না তার পক্ষে। তবে কষ্টকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে সেটা সবার জন্যই ট্রমা হবে, তা কিন্তু নয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেলেও, অনেক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হলেও সেটা সামলানোর সহজাত ক্ষমতা মানুষের রয়েছে। সেটা সুন্দরভাবে সমাধান করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে যে সামলাতে পারে না, সে-ই পড়ে ট্রমায়।
কেবল দুর্ঘটনা-পরবর্তী ট্রমা নয়; চারপাশের যেকোনো ঘটনা আপনার জীবনে ট্রমা হয়ে ধরা দিলে মনোসেবা নিতে হবে আপনাকে। সেটা যত দ্রুত সম্ভব, ততই মঙ্গল।

 আশিক মুস্তাফা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top