কুন্তলকাহন I পরিবৃত্তির পরিচর্যা
তাপের মাত্রার পরিবর্তন ঘটিয়ে বসন্ত তো এসেই গেল। পাল্টে যাওয়া ঋতুতে ঝলমলে আর প্রাণবন্ত চুল চাইলে বদল ঘটানো চাই চুলচর্চায়ও
গরম আর শীত। আমাদের দেশে সাধারণত এই দুই ধরনের আবহাওয়াই অনুভূত হয়। দুই থেকে তিন মাস শীত, আর বছরের বাকি অংশজুড়ে গরম। শীতের শুরুতে বা শেষে, অর্থাৎ ঋতুবদলের সময় যাপনে যেমন বদল ঘটে, তেমনি পাল্টে যায় সৌন্দর্যচর্চার ধরনও। শীত বিদায়ের সময়টাতে হিম-হিম ভাবটা যেমন থাকে, তেমনি বসন্তের আগমনে কিছুটা গরমও অনুভূত হয়। এই পরিবর্তন শুধু তাপমাত্রায় নয়, বাতাসের আর্দ্রতায়ও ঘটে। দুটি ঋতুর সন্ধিসময়ের এই প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় ত্বক ও চুলে। এই দিনগুলোতে ত্বকের পাশাপাশি চুলেরও প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্নের। সাধারণত শীতে প্রকৃতির মতোই চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। আবার গরম পড়তে শুরু হওয়ায় মাথার ত্বক ঘামতে শুরু করে। এতে চুল স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে এবং দ্রুত ময়লা হয়ে যায়। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে চুল ময়শ্চার করার পাশাপাশি ঝরঝরে ও পরিষ্কার রাখাটাও জরুরি হয়ে পড়ে। তবে পরিষ্কার রাখতে গিয়ে ঘন ঘন শ্যাম্পু করতে যাবেন না যেন। এতে চুল স্বাভাবিক তৈলাক্ততা হারাবে এবং আরও রুক্ষ হয়ে পড়বে। চেষ্টা করুন চুলে যাতে ধুলা-ময়লা কম পড়ে। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় মাথায় স্কার্ফ পরে নিন। ব্যবহার করুন ময়শ্চারাইজিং কন্ডিশনার, যা চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। অন্য সময়ের তুলনায় এ সময় চুল ঝরার পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতিদিন সাধারণত পঞ্চাশ থেকে এক শ চুল ঝরে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ঋতুবদলের সময়টাতে তা বেড়ে যায়। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটি সাময়িক। সেই চেষ্টা করুন, যাতে চুল কম ঝরে।
গরমে মাথার ত্বকে বেশি ঘাম হয় বলে চুলের গোড়া নরম ও নাজুক হয়ে পড়ে। ঘেমে যাওয়া ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না ভুলেও। এতে মাথায় দুর্গন্ধ হয় এবং ধুলাবালি চুলে আটকে যায়। ফলে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে এবং গোড়া নরম হয়ে ঝরতে শুরু করে। শীতে কমবেশি সবাই খুশকিতে আক্রান্ত হন। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে শ্যাম্পু করার আগে মাথার ত্বকে হালকা গরম তেল ম্যাসাজ করে নেবেন। মেথি ও লেবুর রসও খুশকি দূর করতে বেশ সহায়ক। তবে লেবুর রস কিংবা অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু লাগালে অবশ্যই চুল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে নেবেন। এগুলো মাথার ত্বক ও চুল অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে। এ ছাড়া খেয়াল রাখুন, মাথার ত্বক ও চুল যেন ঘেমে কোনোভাবেই স্যাঁতসেঁতে না হয়। এতে খুশকি হয় বা বেড়ে যায়। ভেজা চুল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করাই ভালো। যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার বাতাসে শুকিয়ে নেবেন। হিট দেবেন না। এতে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।
চুল কোমল করে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন প্রাকৃতিক কোনো হেয়ার প্যাক। ডিম ও মেহেদি পাতার রস এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ দেবে। ক্যাস্টর অয়েলেও চুল কোমল ও মসৃণ করে তোলা যায়। নিয়মিত তেল ব্যবহার রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। সপ্তাহে অন্তত এক দিন হালকা গরম তেল ম্যাসাজ করে নিন। একটা ডিম, মধু, অলিভ অয়েল ও মেথি গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
শীতে রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল মসৃণ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে কন্ডিশনারের জুড়ি নেই। কন্ডিশনিংয়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন। চুল সাজানো কিংবা পরিচর্যায় কেমিক্যালযুক্ত পণ্য এ সময় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এতে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। ডিমের সঙ্গে টকদই মিশিয়ে লাগালে তা ভালো কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে। মিশ্রণটি এক ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া শ্যাম্পু করার পর চায়ের লিকারে ধুয়ে নিলে তা ভালোভাবে চুল কন্ডিশনিং করবে। খাঁটি সরিষার তেল বেশ ভালো একটি কন্ডিশনার। চুল মসৃণ ও ঝরঝরে করে তুলতে তেলটি বেশ কার্যকর। শ্যাম্পু করার আগের রাতে সরিষার তেল লাগিয়ে নিলে ভালো কাজ দেবে।
ভেজা চুল জটমুক্ত করে নিতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কেননা এই অবস্থায় চুল বেশি নাজুক থাকে, তাই আঁচড়ানোর সময় কেটে বা উঠে যেতে পারে। ঔজ্জ্বল্যও কমতে পারে। ভেজা চুল আঁচড়ানোর কাজে মোটা দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করুন। ভালো কোনো পারলারে গিয়ে চুলের ধরন বুঝে কোনো হারবাল ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। তাতে নানান স্টাইলে চুল সাজিয়ে নেয়ার সুযোগও মিলবে ভালো।
আহমেদ বুবলি
মডেল: পায়েল
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন