skip to Main Content

ফিচার I রসনাময়ী

খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে নারীর সম্পৃক্ততা বেশ প্রাচীন। এখনো তাদের বৃহৎ অংশ এ খাতে যুক্ত। যদিও সেই কীর্তি স্বীকারে বেশ অবহেলা। অথচ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই তাদের নিভৃত উপস্থিতি

খাদ্য উৎপাদনে নারীর ভূমিকা বরাবরই বেশি। প্রাচীনকাল থেকে। নারীরাই কৃষির আবিষ্কারক। এই আধুনিক বিশ্বে এসেও তারা খাদ্য উৎপাদনে পুরুষের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছেন। বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের অর্ধেকই আসে নারীর শ্রম থেকে। মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত টেকসই খাদ্য আন্দোলনে নারীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও এ-বিষয়ক তালিকায় তাদের খুব একটা জায়গা নেই। তাদের কৃতিত্বের কথা বলাও তেমন হয় না। তবে এলোমেলোভাবে এসব কীর্তিমতীর ভূমিকার কথা এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আছে। এমন কজন নারীকে ঘিরেই এ লেখা।
জাপানি নারী মারিকো গ্র্যাডি। ‘মিশো’ তৈরি ও বাণিজ্যিকীকরণে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। মিশো হলো সয়াবিন ও লবণযোগে উৎপন্ন একপ্রকার পেস্ট, যা সস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কখনো সবজি, মাছ কিংবা মাংসের আচার তৈরিতে লাগে। এসব আচারকে আচার না বলে সংরক্ষিত খাবার বললেই এ দেশের মানুষ হয়তো ভালোভাবে চিনবেন। মিশোকে অনেক সময় স্যুপেও ব্যবহার করেন জাপানিরা। পদটিকে জাপানিদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে মারিকো গ্র্যাডির ভূমিকা অনন্য। ২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহয়তাকল্পে এই খাবার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন গ্র্যাডি। নিরলস প্রয়াস তাকে খ্যাতির পাশাপাশি এনে দিয়েছে ব্যবসায়িক সফলতাও।
ভোজনরসে মোহিত হয়ে নিজের ট্র্যাক ছেড়ে খাদ্য খাতে শিকড় গাড়ার নজিরও রয়েছে নারীদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে সানফ্রান্সিসকোর কীর্তিমতী জেন মাস্টির উদাহরণ টানা যেতে পারে। বেকারিশিল্পে নিপুণ তিনি। খানাখাদ্যের খবরাখবর রাখেন, এমন ভোজনরসিকদের কাছে বেশ পরিচিত মাস্টি। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক হলেও রসনার টানে চলে এসেছেন খাদ্যের ভুবনে। পুরোনো দিনের বেকড ফুডগুলোকে ফিউশনের মাধ্যমে নতুনের মিশেলে উপস্থাপন করেছেন তিনি। তাই তার তৈরি পদগুলো জনপ্রিয় হতে খুব একটা সময় লাগেনি সেই অঞ্চলে। বৈশ্বিক ফুড নেটওয়ার্কে এ নারী ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। সানফ্রান্সিসকোতে কিছু দোকানও আছে তার। তাতেই চালিয়ে নিচ্ছেন নিজের বেকড ফুড আইটেমগুলো।
কৃষির সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা কমে গেলেও একেবারে উবে যায়নি। এমনকি উচ্চশিক্ষিত নারীরাও ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন খাদ্য উৎপাদনের কাজকে। যেমন অ্যারিয়েল ডানান। ইসরায়েলি নারী। ছোটবেলাতেই কৃষিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্নাতক শেষে পাকাপাকিভাবে জড়িয়ে পড়েন এর সঙ্গে। সারা বিশ্বের জৈব ফার্মগুলোতে কাজ শুরু করেন ডানান। শিখে নেন আমন্ড মিল্ক তৈরির কৌশল। সেই বিদ্যার ওপর ভর করেই এগোতে থাকেন তিনি। আমন্ড মিল্কের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের দেশে। তিনি ও তার আমন্ড মিল্ক বেশ বিখ্যাতও বটে।
বিখ্যাত আরও একজন খাদ্য ব্যবসায়ী নারী হলেন কেন্ড্রো কলিং। তার গ্রিল্ড চিজ স্যান্ডউইচ ভোজনরসিকদের কাছে বেশ পরিচিত। রান্নার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক তার। মাত্র ১৪ বছরেই রেস্তোরাঁর রসুইঘরে রান্নার কাজে লেগে পড়েছিলেন এই কীর্তিমতী। পরে বাজারে তিনি স্যালাড, স্যুপ ও স্যান্ডউইচের ব্যবসা শুরু করেন এবং সফলতা পান।
আলাস্কা তানজানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ। লোকাল ফুড সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকায় বেশ নাম কুড়িয়েছে। এই কোম্পানির সিইও জেনিফার ব্যাশ। তিনি তানজানিয়ার খাদ্যভাণ্ডারের উপযোগিতা বুঝতে পেরে সেই খাতে নিজেকে নিবেদিত করেন। কিছু কর্মী নিয়ে ডিম, সূর্যমুখী তেল ও ভুট্টার আটার পাইকারি বিপণন শুরু করার পরপরই ব্যাপক সফলতা পান। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে পুরস্কারও লাভ করে।
খাদ্যসংশ্লিষ্ট আরেক নারী উদ্যোক্তা হলেন জাম্বিয়ার প্রতিষ্ঠান জাভা ফুডসের কর্ণধার মনিকা মাসুন্ডা। খাদ্য ব্যবসার প্রতি প্রবল টান থেকেই তিনি নাইজেরিয়ান ডাঙ্গোট কোম্পানিতে নিশ্চিত ক্যারিয়ার ছেড়ে দেন। চালু করেন নিজের প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে জাম্বিয়ার সফল উদ্যোক্তা নারীদের তিনি একজন।
নিজ পেশা ছেড়ে খাদ্য ব্যবসায় চলে আসেন ক্যালডি’স ক্যাফের সিইও সেডি অ্যাসরাতও। ইথিওপিয়ান এ নারী আগে ছিলেন ফ্যাশন উদ্যোক্তা। একসময় পড়ে যান কফির প্রেমে। খুলে ফেলেন কফি রেস্তোরাঁ। ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে থাকে তার কফির সুনাম। এখন তার অধীনে ১ হাজার ৮০০ কর্মী রয়েছেন। ৩৮টির মতো ক্যাফে পরিচালনা করছেন সেডি। এখানে নাম নেওয়া যেতে পারে নিউইয়র্কের বাসিন্দা কারেন ওয়াশিংটনের। তিনি পুষ্টিপ্রাপ্তিকে মানবাধিকার মনে করেন। রাইস অ্যান্ড রুট ফার্মের এই কো-ফাউন্ডার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারও লুফে নিয়েছেন ইতিমধ্যে।
এসব তো গেল উপমহাদেশের বাইরের নারীদের ফিরিস্তি। ভারতজুড়েও রয়েছেন খাদ্যসংশ্লিষ্ট সফল নারী উদ্যোক্তা। যেমন দিল্লিতে বসবাসরত নারী আনাহিতা। খুব অল্প বয়সেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, বিশ্বের খাদ্যাঙ্গনটি এখনো পুরুষশাসিত। এই খাতে নারীদের ছাপ রাখতে এগিয়ে আসেন তিনি। ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন খাদ্যাঙ্গনেই। হয়ে ওঠেন শেফ। তাকে দিল্লির সবচেয়ে কনিষ্ঠ রন্ধনশিল্পী ভাবা হয়। ফিরিস্তিতে ভারতীয় সেলিব্রিটি শেফ অনল কোটকের নামও চলে আসে। ১৪ বছর আগে রেস্তোরাঁশিল্পে তার যাত্রা শুরু। শেফ হওয়ার ইচ্ছা এতই প্রকট ছিল, নিজের বাগদানের অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে একটি রান্নার অনুষ্ঠানে অডিশন দিয়েছিলেন এই নারী! বর্তমানে বিশ্বের রন্ধনশিল্পীদের মধ্যে তিনি বেশ সুপরিচিত। এদিকে, কাঠমান্ডুর বিনীতা প্রধান যুক্ত ছিলেন লা কোসিনা’স ফুড বিজনেস ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের সঙ্গে। পরে সানফ্রান্সিসকোতে ক্যাটারিং সার্ভিসে যুক্ত হন। তার তৈরি মোমো বেশ জনপ্রিয় সেখানে।
পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি নারীরাও। বর্তমানে খাদ্য ও পানীয় খাতে অনেক নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী রয়েছেন এ দেশে। এ ক্ষেত্রে পলি আক্তার, উম্মে হানি, শাহিদা আক্তার আশা প্রমুখের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মূলত কোভিড পরিস্থিতি নারী উদ্যোক্তাদের খাদ্য খাতে ব্যবসা করতে আগ্রহী করে তুলেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কজন নারী মহামারি পরিস্থিতিতে নিজেদের অনলাইন খাদ্য ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। পলি আক্তার জানিয়েছেন, অনলাইনে খাবার ডেলিভারি করে তিনি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম। প্রায় একই কথা শোনা গেছে শাহিদা আক্তারের কাছে। চাকরিজীবী ও ব্যাচেলরদের খাবার সরবরাহ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top