skip to Main Content

ফরহিম I ক্ষুর ক্ষতিকর?

একদমই না। যদি জানা থাকে ব্যবহারের সঠিক কৌশল

ক্ষুর দিয়ে শেভিং! বেশ ভীতিকর। কিন্তু সুদূর অতীতে এটা ছিল ম্যানুয়াল শেভিংয়ের মূল পদ্ধতি। বিলাসিতার অন্তর্ভুক্ত। তবে মাথায় রাখতে হবে, এই প্রক্রিয়ায় সফল শেভিংয়ের জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতি, সঠিক কৌশল আর ধৈর্য।
শেভিং বাজারে নতুন সংযোজন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। রেজর ও ট্রিমারে প্রতিনিয়তই আসছে ভিন্নতা। এত সবের ভিড়ে ক্ষুর দিয়ে শেভিংয়ের ট্রেন্ড এখনো টিকে থাকা অনেকটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু এর কারণটা যথার্থ। তা হলো, কোনো শেভিং প্রক্রিয়াই ক্ষুর দিয়ে শেভ করার মতো ফল দেয় না। নিখুঁত ও মসৃণ শেভিংয়ের পাশাপাশি ত্বকের ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে এটি। তাহলে ক্ষুর দিয়ে শেভিংয়ের এত সুবিধা সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ এই পদ্ধতি এড়িয়ে যান কেন? উত্তরও সহজ। এই পদ্ধতিতে দক্ষতা আনা একটু সময়সাপেক্ষ। আর নিখুঁত শেভিংয়ের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক কৌশলী হওয়া প্রয়োজন।
শুরু করার শর্ত
ক্ষুর দিয়ে শেভ করার আগে একটা বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে, তা হলো—এটি রেজর কিংবা ট্রিমার দিয়ে শেভ করার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সময়সাপেক্ষ, কমপক্ষে ১৫ মিনিট। সময় দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা থাকলে না আগানোই ভালো। বেশির ভাগ ছেলেরই রেজর ব্যবহারে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এমনকি সংবেদনশীল ত্বকের ছেলেদের জন্যও এই শেভিং প্রক্রিয়া যথেষ্ট আরামদায়ক হতে পারে। তাই যত দিন না ত্বক ক্ষুরে অভ্যস্ত হচ্ছে, প্রতিটা ধাপ ধীরেসুস্থে পার করা প্রয়োজন। ক্ষুর দিয়ে শেভিংয়ের পর কন্ডিশনিং মাস্ট। এতে ত্বকের জ্বালাপোড়া কিংবা অস্বস্তিভাব কমে আসবে। কোন ব্লেড সঠিক, তা বুঝতে ব্লেডের ওজন বিবেচনায় রাখা যায়। কেননা, ব্লেডের ওজন শেভ করার সঠিক চাপ নির্ধারণ করবে। হালকা ওজনের ক্ষুর দিয়ে শেভ করার সময় ভারী ক্ষুরের তুলনায় বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তবে ক্ষুরের ওজন ভারী হোক কিংবা হালকা, প্রথম স্ট্রোকে সব সময় হালকা চাপ প্রয়োগ করে টুলটি পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
ক্ষুর দিয়ে শেভিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৮ ধাপে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রস্তুতি
অন্য যেকোনো শেভিং প্রক্রিয়ার মতো ক্ষুর দিয়ে শেভ করার আগেও ত্বক প্রস্তুত করে নিতে হবে। ত্বকের পোরগুলো খুলে দেওয়ার জন্য ত্বক নরম থাকতে হবে। আর ক্ষুর দিয়ে প্রথম শেভিংয়ের সময় ত্বক প্রস্তুত করার ধাপটি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রেজর বার্নের মতো সমস্যা ক্ষুর দিয়ে শেভ করার ফলেও হতে পারে। তাই শেভ করার আগে হট বাথ নেওয়া জরুরি। এটি ত্বক নরম করার পাশাপাশি মসৃণ শেভ পেতে সাহায্য করবে। গোসলের পর শুরুতে একটি প্রি-শেইভ অয়েল মাখিয়ে ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে নিতে হবে। তারপর স্বচ্ছ শেভিং জেল মেখে রাখতে হবে।
ক্ষুর ধরার ধরন
ক্ষুর দিয়ে শেভ করার সময় মুখের সঙ্গে ৩০ ডিগ্রি কোণে তা ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়। খুব চ্যাপ্টাভাবে ক্ষুর ধরলে এটি দাড়ি ছিঁড়ে ফেলতে পারে, আর খুব বেশি খাড়াভাবে ধরলে চামড়া কেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। গ্রিপ শক্ত রাখতে এবং আপার লিপ কিংবা চিনের মতো মুখের বিভিন্ন অংশের ধরনের সঙ্গে গ্রিপের সামঞ্জস্য তৈরি করতে হবে। ক্ষুর দিয়ে শেভ করার সময় ভালো ফল পেতে অন্য হাত দিয়ে ত্বক টানটান করে ধরে রাখা চাই। তারপর ক্ষুর দিয়ে হালকা চাপ দিতে হবে। তাহলে মুখ ও আঙুল—দুটোই কাটার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকবে।
ফার্স্ট স্ট্রোকস
কানের কাছের গালের ওপর থেকে তির্যকভাবে প্রথম স্ট্রোকটি টেনে নিতে হবে। ছোট ছোট ও সমানভাবে। হাত যেন ঝাঁকুনি না খায়। প্রতিটি স্ট্রোকের পর ক্ষুরের ব্লেডটি গরম পানিতে চুবিয়ে ধুয়ে নিয়ে তারপর পরবর্তী স্ট্রোক শুরু করতে হবে।
চিন অ্যান্ড আপার লিপ
চিবুকের কাছে শেভ করার সময় রেজরটি একটু ওপরের দিকে তুলে ধরতে হবে। এই অংশে রেজরের মাঝখানের অংশটি ব্যবহার করাই ভালো। চিবুক বা চোয়ালের ওপরের হাড় থেকে কখনোই নতুন স্ট্রোক শুরু করা যাবে না। সব সময় চেষ্টা থাকতে হবে এই জায়গাগুলো থেকে একটু দূরে স্ট্রোক শুরু করার। মৃদু ও অবিচলিত স্ট্রোক দিয়ে কাজ করতে হবে এ অংশগুলোতে। ঠিক একইভাবে ঠোঁটের দুপাশ এবং গালেও শেভ করে নেওয়া যেতে পারে। ঠোঁটের ওপরের মাঝের অংশের ক্ষেত্রে নাক ওপরের দিকে ধরে টানটান করে নিয়ে তারপর আলতোভাবে শেভ করা উত্তম।
লোয়ার লিপ অ্যান্ড নেক
শেভের সময় মুখের ত্বক নমনীয় রাখার অভ্যাস রাখতে হবে। মুখের কোণ থেকে, ত্বকজুড়ে চিবুকের কেন্দ্র অব্দি প্রথম স্ট্রোকগুলো নিতে হবে। এরপর ওপরের দিকে ছোট ছোট স্ট্রোক দিয়ে বাকি দাড়িগুলো কাটতে হবে। কাটাছেঁড়া এড়াতে কিংবা জ্বালাপোড়া কমাতে ঘাড়ের দিকে সতর্ক নজর দরকার। ঘাড়ের ছোট ছোট দাড়ি অনুসরণ করে শেভ করতে হবে। এর ধরন কিংবা আকার মানুষভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই ঘাড়ের আকার ও দাড়ির ঘনত্ব অনুযায়ী ক্ষুর চালিয়ে নেওয়া ভালো।
পুনরাবৃত্তি
ত্বকের কোনো অংশ শেভিং থেকে বাদ পড়েছে কি না, সেটা দেখে নিয়ে আরেকবার একইভাবে ওপরের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপের স্ট্রোকের আগেও অবশ্যই মুখে হালকা গরম পানির ঝাপটা দিয়ে তারপর শেভিং ক্রিম বা জেল মাখিয়ে নিতে হবে। ত্বককে শেভিং বাম্প থেকে রক্ষা করতে এই ধাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ময়শ্চারাইজিং
শেভ করার পরপরই ত্বকে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এতে ত্বকের পোরগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর মুখে দিতে হবে ময়শ্চারাইজার। খুব জোরে ঘষে ঘষে না লাগিয়ে আলতো করে চাপ দিয়ে দিয়ে ময়শ্চারাইজার লাগানো উত্তম। কেননা ক্ষুর দিয়ে শেভ করার পর ত্বকে অতিরিক্ত ঘষাঘষি করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
সংরক্ষণ
শেভিং শেষে ক্ষুরের ব্লেডটি খুব ভালো করে ধুয়ে একটি নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ব্যবহৃত ক্ষুরটি যেকোনো ধরনের আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য এই ব্লেড সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্লেড অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কাপড় দিয়ে মুছে রেখে দেওয়ার আগে এতে এই তেল দিয়ে ক্ষুর মুছে নিতে হবে। এটি ক্ষুরের ব্লেডকে মরিচার হাত থেকে বাঁচাবে। আর যদি ব্লেডে মরিচা পড়েই যায়, তাহলে সেটা তৎক্ষণাৎ পাল্টে নিতে হবে।

 শিরীন অন্যা
মডেল: রাব্বী
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top