ফিচার I ঈদবান্ধব ডাইনিং
ঈদ মানেই অতিথির আনাগোনা। খাবার টেবিলে আপ্যায়নের ঘটা। তাই ডাইনিংয়ে চাই সুসজ্জা ও সুপরিবেশ। সে ঘর থেকে নানান পদের গন্ধ তাড়াতেও আছে কৌশল
ভোজনেই অতিথি তুষ্ট। তবে শুধু উদরপূর্তি মানেই অতিথি আপ্যায়ন নয়। পরিবেশটা সুন্দর না হলে মুখরোচক খাবারের স্বাদ ফিকে হয়ে যেতে পারে। তাতে পেট ভরবে ঠিকই, মন ভরবে না। ফলে খাবারের আইটেমের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি ডাইনিং রুমের ডেকোরেশন, টেবিল সজ্জা—এসব দিকে খেয়াল রাখা চাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাবারের গন্ধ। ঈদের দিন এ বিষয়টা খুব বেশি ভোগায়। নানান পদের রান্নার কারণে সব খাবারের সুবাস মিলেমিশে একাকার হয়ে খাবার ঘরে একপ্রকার উৎকট গন্ধ তৈরি হয়, যা অতিথিদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তবে এসব কাটিয়ে ওঠা যায় সহজেই।
ঈদের আনন্দ বিলিয়ে দিতে বাড়িতে চাই রুচি ও আন্তরিকতার মিশেল। এ জন্য খাবার টেবিলটি পরিপাটি ও সাজানো-গোছানো হওয়াই উত্তম। ছোট কিংবা বড়, যেকোনো টেবিলই নান্দনিকভাবে সাজানো যেতে পারে। সাজে টেবিল ম্যাট, রানার ও ন্যাপকিন বেশ জরুরি। রঙের কম্বিনেশনটাও খাবার টেবিলের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। থালা-বাটি সাদা হলে টেবিল ম্যাট হওয়া চাই রঙিন। একই রঙের ম্যাট বা রানার ব্যবহার না করে বিপরীত হলে ভালো হবে। সবচেয়ে বেশি মানাবে সিল্ক কিংবা কাতানের তৈরি ম্যাট। ন্যাপকিনটা ভাঁজ করে কাচের গ্লাসের পাশে রাখা যেতে পারে। রেস্তোরাঁয় যেভাবে রাখে।
খুব ছোট ছোট জিনিসপত্র খাবার ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাঁশ, বেত, স্টিল বা কাপড়ের তৈরি অনুষঙ্গগুলো জুতসই। নকশাদার একটা টিস্যু বক্স খাবার টেবিলে রাখা যেতেই পারে। সবচেয়ে ভালো হয় তাতে চমৎকার ফুলসমেত কোনো ফুলদানি এবং মোমের শোপিস ঠাঁই দিলে। মাঝখানে একটা ফলের ঝুড়ি হলে সৌন্দর্যটা আরেকটু খোলতাই হবে। টেবিল সজ্জার পাশাপাশি খাবার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে কিছু অদল-বদল চলতে পারে। যেমন সে ঘরে হালকা সবুজ পর্দা লাগানো যেতে পারে। এতে দারুণ আবহ তৈরি হবে।
ঈদের দিনে অতিথি সন্তুষ্ট করতে আরও কিছু টোটকা মেনে চলতে পারেন। যেমন, মেহমানের সামনে খাবার গরম রাখতে ঢাকনাসহ বাটিতে পদগুলো পরিবেশন করাই ভালো। তা ছাড়া খাওয়ার সময় টেবিলে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা চাই। তৈজসপত্রগুলো একই উপাদানের হওয়া ভালো। মানে সব সিরামিকের কিংবা সব ক্রিস্টালের। মিলিয়ে-মিশিয়ে পরিবেশন করলে দৃষ্টিদূষণ ঘটতে পারে। টেবিলে উঁচু কিছু রাখা ঠিক হবে না। এতে একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
এ তো গেল টেবিল ও খাবার ঘর সজ্জার কথা। ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খাবার ঘর এবং নিজের হাত থেকে খাদ্য ও মসলার গন্ধ দূর করা। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই ফ্রিজ বোঝাই থাকে মাছ, মাংস ও মসলায়। একটু পর পর ফ্রিজ খোলার ফলে ওসবের গন্ধ ঘরে ঢুকে পড়ে। ঈদের দিনে তা আরও বাড়ে। তা ছাড়া ঈদের দিনে নানান জিনিসের কাটাকুটি, ঘরে বিভিন্ন দ্রব্যের আনা-নেওয়া, নতুন জিনিসপত্রের গন্ধ—সব মিলিয়ে ঘরে বাজে গন্ধ জমা হতে পারে। সামান্য কিছু তরিকা মানলে এসব গন্ধ খাবার ঘর ও হাত থেকে দূর করা সম্ভব।
মাংস বা মাছ কাটাকুটির সময় মেঝেতে প্লাস্টিক ক্লথ বিছিয়ে নিলে ভালো। এতে মেঝেতে রক্ত লেগে থাকবে না। রক্ত থেকেই পরে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। সবচেয়ে ভালো হবে মাছ-মাংস কাটার পর ওই প্লাস্টিক ক্লথটি বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলে। ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রেও মাছ-মাংস পলিথিনে মুড়ে রাখাই উত্তম। এতে বারবার ফ্রিজ খোলার ফলে ওসবের গন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়বে না। আরেকটি বিষয় খুব কম মানুষই খেয়াল করে থাকেন; তা হলো ফ্রিজের হাতল। তেল-ঝোল মাখা হাতে বারবার ফ্রিজ খুলতে খুলতে হাতলে ময়লা জমে। সেখান থেকে তৈরি হতে পারে দুর্গন্ধ। এ ক্ষেত্রে হালকা গরম পানিতে ডিশ ক্লিনিং সোপ গুলে তা দিয়ে হাতল পরিষ্কার করা যেতে পারে। এতে হাতল থেকে গন্ধ তৈরির আশঙ্কা কমবে। কাঁচা মাছ ও মাংস যেসব পাত্রে রাখা কিংবা ধোয়া হয়, সেগুলো ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। বেশিক্ষণ ধোঁয়া ছাড়া রাখলে ওগুলোতে চর্বি জমে গন্ধ ছড়াতে পারে। ওসব তৈজসও ডিশ ক্লিনিং সোপ দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো ফল মিলবে। তবু যদি ঘরে কোনো গন্ধ থেকে যায়, তাহলে ভিনেগারের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পুরো ঘর একবার মুছে নেওয়া যেতে পারে। মেহমান আসার আগেই। এরপর অতিথিরা এলে তাদেরকে অনুরোধ করতে হবে জুতা বাইরে রাখতে। এতে খাবার ঘর দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে। মেহমান আসার আগে থেকেই খাবার ঘরের দরজা-জানালা খুলে রাখা ভালো। তা ছাড়া খাবার পরিবেশনের বেশ কিছু সময় আগে সুগন্ধি কিংবা এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করে দেওয়া যেতে পারে। এতে ঘরের দুর্গন্ধ দূর হবে।
তবে ঈদের দিনে ঘরের দুর্গন্ধ দূর করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। রাঁধুনির হাতেও থাকতে পারে তেল, ঝোল ও মসলার দুর্গন্ধ। পরিবেশনের সময় তা অতিথিদের বিব্রত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে মানা যেতে পারে কিছু টোটকা। লবণ দিয়ে হাত ধোয়া যেতে পারে। লবণ গলে না যাওয়া পর্যন্ত হাতে ঘষতে হবে। এরপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে গন্ধ দূর হবে। হাত থেকে পেঁয়াজ, রসুন কিংবা আদাবাটার গন্ধ দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে কফির গুঁড়া। তা দুই মিনিট ধরে হাতে ঘষার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে গন্ধ চলে যাবে। একই কাজ করবে মাউথওয়াশ। তা ছাড়া টুথপেস্ট দিয়ে ধুয়েও হাত থেকে গন্ধ দূর করা যেতে পারে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট