skip to Main Content

ফরহিম I ‘বাম’পন্থী

কন্ডিশনিং, সঙ্গে স্টাইলিং—সম্ভব এই একটি পণ্য দিয়েই

দাড়ি। পুরুষদের লুকের এই সেন্টারপিসের সৌন্দর্য নির্ভর করে নিয়মিত যত্নের ওপর। তাই তো মেনজ গ্লুমিং প্রডাক্টে দাড়ি সুন্দর করে তোলার নিত্যনতুন পণ্যের সংযোজন দেখা যায় হরহামেশা। এ ক্ষেত্রে বিয়ার্ড অয়েলের জনপ্রিয়তা বরাবরই তুঙ্গে। তবে একে টক্কর দিতে বাজারে এসেছে বিয়ার্ড বাম। বিয়ার্ড অয়েলের গুণাগুণ তো থাকছেই, সঙ্গে এটি ব্যবহারে মিলবে কিছু বাড়তি উপকারিতা।
অয়েলের মতো লিকুইড নয়, একদম সলিড কনসিস্ট্যান্সিতে তৈরি হয় বাম। সাধারণত তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ওয়াক্স, এসেনশিয়াল অয়েল আর বাটার। বিয়ার্ড বাম ঘন হওয়ার মূল কারণ এতে থাকা এই বাটার। শিয়া, ম্যাঙ্গো আর কোকোনাট বাটারেই তৈরি হয় এই ধরনের বাম। তাই লিভ ইন কন্ডিশনার হিসেবে দারুণ কার্যকর। বিয়ার্ড অয়েলের মতো বামও দাড়িকে ময়শ্চারাইজড রাখে দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু একদম তেলে ভাব ছাড়া। বিয়ার্ড বামের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এটা দিয়ে বিয়ার্ড স্টাইলিং সেরে নেওয়া যায় অনায়াসে। স্মুদেনিং ইফেক্ট দিয়ে তৈরি করে স্লিক পলিশড লুক। সেই সঙ্গে লাইট টু মিডিয়াম হোল্ড দেয় দাড়িতে, বাড়ায় ভলিউম, কাঙ্ক্ষিত শেপে সেট করে রাখে দীর্ঘ সময়। বিয়ার্ড বাম ব্যবহারে দাড়ি নরম ও কোমল হয়। মুখের সব জায়গায় সমানভাবে দাড়ি বাড়তে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে দাড়ির নিচে থাকা ত্বককেও রাখে সুরক্ষিত। ইনগ্রোন হেয়ার থেকে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মত, বিয়ার্ড বার্ম সবার ব্যবহারের উপযোগী নয়। ফুলার বিয়ার্ড অর্থাৎ যাদের মুখভর্তি দাড়ি, তাদের দাড়ি বশে রাখতে এর বিকল্প হয় না। এ ছাড়া মাঝারি থেকে লম্বা দাড়ির অধিকারীরা অনায়াসেই রূপরুটিনে রাখতে পারেন এ সৌন্দর্যপণ্য। যাদের দাড়ি পাতলা, তাদের বিয়ার্ড বাম না মাখাই ভালো। এতে ভারী ভাব অনুভূত হবে চেহারায়। যাদের ত্বক স্পর্শকাতর, তাদেরও বিয়ার্ড বাম মাখার আগে সচেতন হতে হবে। প্যাচ টেস্ট মাস্ট। প্রতিদিন পুরো দাড়িতে বাম না মেখে অল্প একটু জায়গায় আগে মেখে দেখতে হবে, ত্বকে এর প্রতিক্রিয়া কেমন। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি, সুগন্ধিমুক্ত বিয়ার্ড বাম পাওয়াটা কঠিন হলে বিকল্প হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা শিয়া বাটার কিন্তু চলবে বলেই মত ত্বক বিশেষজ্ঞদের। সাশ্রয়ীও হবে।
বিয়ার্ড বাম কেনার সময় এর উপাদানের তালিকার দিকে নজর দেওয়া খুব জরুরি। এতে ময়শ্চারাইজিং এজেন্ট থাকতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বাম শিয়া বাটার থাকলে সবচেয়ে ভালো। ত্বকযত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসা এই উপাদান দাড়ির সুস্থতায়ও সমান উপকারী। ভিটামিন এ, ই এবং এফ সমৃদ্ধ শিয়া বাটার যুক্ত বিয়ার্ড বাম ক্ষতিগ্রস্ত শুষ্ক দাড়ি তো বটেই, এতে আবৃত ত্বককে আর্দ্র করে তোলায় কার্যকর। অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টি যুক্ত শিয়া বাটার তাই বিয়ার্ডের ড্যানড্রাফ বা বিয়ার্ডাফ দূর করতে পারে নিয়মিত ব্যবহারে। দাড়িকে সুন্দর রাখার সঙ্গে ডার্মাটাইটিস আর একজিমা রোধেও সহায়তা করে।
বিওয়্যাক্স বিয়ার্ড বাম তৈরির অন্যতম উপাদান। এটি দাড়িকে নির্দিষ্ট আকারে ধরে রাখতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে ভিটামিন এ এর মতো দরকারি পুষ্টির জোগান দিয়ে মসৃণতা বাড়ায়, রক্ষা করে আর্দ্রতা। দাড়ি দ্রুত বেড়ে উঠতেও দারুণ সহায়ক এই উপাদান।
বিয়ার্ড বাম যদি আমন্ড অয়েল সমৃদ্ধ হয়, তা দাড়িকে কোমল ও ময়শ্চারাইজড রাখার পাশাপাশি ত্বকও রাখবে যত্নে। কারণ, আমন্ড অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দাড়িতে আবৃত ত্বকের মৃতকোষ, জমে থাকা দূষণ আর ধুলাময়লা দূর করতে সাহায্য করে, লোমকূপগুলো রাখে পরিষ্কার। এ ছাড়া দাড়ির জট বেঁধে যাওয়া রোধেও সহায়ক এই উপাদান। বামের উপাদানের তালিকায় জোজোবা অয়েল থাকলে তা আরও চমৎকার কাজ করবে। এই এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের সিবাম উৎপাদনের হার কমাতে সাহায্য করে। ফলে দাড়ি দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তি আর্দ্রতার জোগান দেয়। কন্ডিশনার হিসেবে এই তেল দারুণ কার্যকর। তাই দাড়িতে জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ বামের ব্যবহারে দাড়ি দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। ভিটামিন ই এবং বি ছাড়াও ক্রোমিয়াম, কপার, জিংকের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর মিনারেল সমৃদ্ধ এই এসেনশিয়াল অয়েল। যা থেকে তৈরি বিয়ার্ড বাম দাড়ি তো বটেই, এতে আবৃত ত্বককেও রাখে পরিপুষ্ট আর সুরক্ষিত।
এ ছাড়া বিয়ার্ড বামে আরও কিছু এসেনশিয়াল অয়েলের উপস্থিতি এর মান বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকখানি। যেমন বামে যদি ইলাং ইলাং থাকে, তা ন্যাচারাল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করবে। ত্বক ও দাড়িকে বাঁচাবে ফাঙ্গাস আর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে। ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবেও ভালো। বিয়ার্ড বামে পাচৌলির উপস্থিতিও এর কার্যকারিতা বাড়াতে পারে অনেকটা। এর স্টিমুলেটিং ইফেক্ট দাড়ি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এই মাস্কি সুইট অয়েল রুক্ষ, শুষ্ক, ফাটা, ডিহাইড্রেটেড ত্বকের যত্নে দারুণ। তাই পাচৌলি সমৃদ্ধ বিয়ার্ড বাম সংগ্রহে থাকলে খুব ভালো।
দিনের যেকোনো সময় ব্যবহার করা গেলেও দাড়ি ধুয়ে পরিষ্কার করে বিয়ার্ড বাম মেখে নিলে ভালো। দিনে অন্তত একবার। দাড়ি ভেজা থাকা অবস্থায় মেখে নিতে হবে বাম। ছোট পি সাইজ পরিমাণে হাতের তালুতে নিয়ে ভালোভাবে ঘষে গলিয়ে তারপর মেখে নিতে হবে দাড়িতে। বাদ দেওয়া যাবে না ত্বকও। ম্যাসাজ করে নিতে হবে ধীরে ধীরে। ডাউনওয়ার্ড মোশনে। তারপর ভালো করে আঁচড়ে নিতে হবে চিরুনি দিয়ে। হাতের তালুতে থাকা অবশিষ্ট বিয়ার্ড অয়েল মেখে নেওয়া যাবে চুলে, এমনকি মুখত্বকেও।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: অরূপ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top