skip to Main Content

ফিচার I শরতে সুস্থতায়

প্রতিটি ঋতুরই আছে আলাদা আবহাওয়া। তা প্রভাব ফেলে শরীর ও মনে। আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের সঙ্গে শরীর হুট করে অভিযোজিত না-ও হতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাসে একটু বেশিই নজর দেওয়া চাই

কোনো দেশের জলবায়ুর সঙ্গে সে দেশের খাদ্যাভ্যাস ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। গরম কিংবা শীতপ্রধান দেশের খাদ্যরীতি দেখলেই তা বোঝা যায়। সাইবেরিয়ার মানুষ শরীর গরম রাখার খাবারগুলো বেশি খান। অন্যদিকে আরব উপদ্বীপের দেশগুলোর অধিবাসীরা শরীর ঠান্ডা রাখার মতো খাবারের পেছনে ছোটেন। জলবায়ুর মতো আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গেও খাদ্যাভ্যাসের একটা যোগ আছে। যদিও এ বিষয়ে অনেকে উদাসীন। ফলে ঋতুর বদল ঘটলেই নানান রোগবালাইয়ে পড়েন অনেকে; বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
আমাদের দেশে সাধারণত গরমকালে পথে শরবতের দোকানের পসরা বসে। আবার কনকনে শীতের সন্ধ্যায় শহরের অলিগলিতে বসে গরম-গরম পিঠার অস্থায়ী দোকান। বেশি গরম পড়লে পেট ঠান্ডা রাখতে এখনো বয়োজ্যেষ্ঠরা লাউ খাওয়ার পরামর্শ দেন। আবার বৃষ্টি পড়লেই খিচুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কেননা, খিচুড়ির মতো একটি জটিল খাবার অতি গরমের মধ্যে খেলে হজমে গন্ডগোল হতে পারে। তাই কিছুটা শীতল পরিবেশে এই খাবার খাওয়ার চল। বর্ষা-বাদলে চা-কফি অনেকে পথ্য হিসেবেই পান করেন। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে ঋতুভিত্তিক বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। শীতে অনেকে গরম-গরম স্যুপ খেয়ে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব থেকেই বোঝা যায়, জলবায়ুর মতো আবহাওয়ার সঙ্গে খাদ্যরীতি বদলের রয়েছে বিশেষ সংযোগ। শুধু গ্রীষ্ম কিংবা শীত নয়, শরতের আবহাওয়ার দিকেও খেয়াল রাখা চাই। এ সময় খাবার খেতে হয় আবহাওয়া বুঝে। নয়তো অসুস্থতায় পড়ার ঝুঁকি থাকে।
আবহাওয়া বদলের সঙ্গে পরিবেশে যে বিশেষ পরিবর্তন আসে, তার মধ্যে রয়েছে সূর্যের তাপের তারতম্য, দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য বাড়া কিংবা কমা এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রায় হেরফের ঘটা। পরিবেশে ঘটে যাওয়া এই তিনটি বদলের সঙ্গে শরীর যদি অভিযোজিত হতে না পারে, তাহলে রোগ দেয় উঁকি। তাই খাদ্য হওয়া চাই উল্লিখিত পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানানসই।
শরৎ একটি জটিল ঋতু! একেবারে গরমকাল বলা চলে না, আবার শীতও পড়ে না এ সময়। ঝুম বৃষ্টি যেমন নেই, তেমনি হঠাৎ বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ে এ ঋতুতে। ফলে শরতের আচরণ ব্যাখ্যা করা মুশকিল। আরেকটি বিষয় হলো, এ ঋতুতে আকাশে মেঘের উপস্থিতি। দিনরাত গরম যাবে, নাকি ঠান্ডা, তা অনেকাংশে নির্ভর করে মেঘের উপস্থিতির ওপর। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনভর সূর্যের যে আলো ভূপৃষ্ঠে আসে, তা আর বেরিয়ে যেতে পারে না। তাই রাতে গরম বেড়ে যায়। কিন্তু শরতের আকাশে মেঘ থাকবে কি না, তা হলফ করে বলার জো নেই। ফলে এ ঋতুর আচরণ বুঝতে হলে প্রতিদিনই এর ওপর নজরদারি রাখা চাই। এমনকি খাদ্যতালিকায় বদল আনতে হতে পারে প্রতিদিনই। তা ছাড়া গরম ও ঠান্ডা ঋতুর মাঝামাঝি হওয়ায় এ ঋতুকে শীতের প্রস্তুতিকাল হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
শরৎকালে আরেকটি বিষয়ের সঙ্গে মানুষকে লড়তে হয়; তা হলো হতাশা। দীর্ঘদিন গরমে ভোগার পর এ ঋতুতে মানুষ কম সূর্যালোক পেতে শুরু করে, যা তাদের হরমোনে প্রভাব ফেলে। ফলে মেজাজ বিক্ষিপ্ত হওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া এবং ঘুমের সময়ের হেরফের ঘটা অস্বাভাবিক নয়। এ ঋতুতে ভিটামিন ডি কম মেলে, যা হতাশা বাড়ায় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। উল্লিখিত সব সমস্যার সমাধান হতে পারে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন নিয়ে আসা।
শরতের আবহাওয়া প্রভাব ফেলতে পারে ফুসফুসেও। ফলে সর্দি-কাশি সারে এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে, খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখাই মঙ্গল। সে ক্ষেত্রে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন লেবু, বাতাবিলেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, কুল ইত্যাদি। এ ঋতুতে মাঝেমধ্যে ঠান্ডা বাতাস বইতে পারে। কিন্তু কিছুদিন আগেই শরীর যেহেতু গরমের সঙ্গে লড়াই করেছে, তাই এই শীতলতা বক্ষব্যাধির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে রক্তচাপে হেরফের ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তা সামাল দিতে শরতের সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করা যেতে পারে। তা ছাড়া হৃদপিণ্ডের সুস্থতার জন্য প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন বিজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মাছ, কলা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে পরিমাণমতো।
এ ঋতুর উষ্ণ ও আর্দ্র সম্মিলিত আবহাওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে ত্বক। তাই ত্বকের সুস্থতায় শরতের মেনুতে চিনাবাদাম রাখা যেতে পারে। তা ছাড়া নাশপাতি, খেজুর, আঙুর, আখ, আখরোট, মধু ও তিল খেলে উপকার মিলবে। শরৎকালে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অন্যান্য ঋতুর চেয়ে একটু বেশি। এই তারতম্যের কারণে শরীরে নানান বালাই দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিক ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল খিঁচুনি। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শরতের খাবারগুলো হওয়া চাই নরম, হালকা ও তাজা। একেবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াই ভালো। খুব মসলাদার ও আঠালো খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হতাশাবিনাশী খাবারগুলো মেনুতে রাখলে উপকার মিলবে শরতে।
আগেই বলা হয়েছে, শরৎকালকে শীতের প্রস্তুতিকাল হিসেবে গণ্য করা যায়। শীত মোকাবিলা করতে শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চর্বি সঞ্চয়ের দিকে এগোতে পারে এ সময়ে। ফ্যাটজনিত বালাইকে পাশ কাটিয়ে শীতের প্রস্তুতি হিসেবে এ ঋতুতে বেশি করে লাল মটরশুঁটি, মুলা, বাঁশ কোড়ল, বার্লি ও মাশরুম খেলে উপকার মিলবে। অনেক সময় শীতের সবজিগুলো বাজারে চলে আসে শরতের অন্তিম লগ্নেই। সেগুলো এখন থেকে খেয়ে নিলে শরতে সুস্থ থাকার পাশাপাশি শীতের প্রস্তুতিও নেওয়া হবে। ওসব শাকসবজির মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লালশাক ইত্যাদি। তা ছাড়া শরতের বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলার রসদ মিলতে পারে এই ঋতুর ফলগুলোতেই। আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অড়বরই, করমচা, চালতা, ডেউয়া—এসব ফলে রয়েছে নানান ধরনের রাসায়নিক, যা শরৎজনিত রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম।
অবশ্য খাবার মেনুতে বদল আনলেই যে সুস্থতা নিশ্চিত, তা কিন্তু নয়; পাশাপাশি চাই পরিমিত ব্যায়াম ও ঘুম। আমাদের দেশে ঋতুবদলের সময় রোগবালাই বেড়ে যায়। আগাম সতর্কতাই ঋতুভিত্তিক অসুস্থতা থেকে রেহাই দিতে পারে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। তা ছাড়া ওষুধ সেবনের চেয়ে প্রকৃতি থেকে নেওয়া খাবার খেয়ে ফিট থাকাই স্বাস্থ্যসম্মত হবে। তাই হেলাফেলা না করে প্রতিটি ঋতুর আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে বদল আনা জরুরি। তবে বদলের আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিলে বেশি ভালো হবে।

 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top