ত্বকতত্ত্ব I পিলিং প্রিভেনশন
ত্বকের চামড়া ওঠার চিরাচরিত সমস্যা একেবারেই নয় এটি; বরং সানস্ক্রিন-সংক্রান্ত বহু পুরোনো জটিলতা। সমাধানে নতুন পথ ভেবেছেন বিশেষজ্ঞরা
ভালোভাবে মুখ পরিষ্কারের পর ত্বকচর্চার প্রতিটি পণ্য মেখে নেওয়া সারা। সবশেষে পালা সানস্ক্রিন মাখবার। তখনই বাধে বিপত্তি। ত্বকের সঙ্গে না মিশে দলা পাকাতে শুরু করে। দানা দানা হয়ে জমতে থাকে ত্বকের উপরিস্তরে। প্রতিদিনকার রূপচর্চায় এ ধরনের সমস্যায় একবারও পড়েননি, এমন মানুষ পাওয়া ভার। ফলে পুরো রূপরুটিন আবার সেরে নিতে হয়। ত্বকে সানস্ক্রিনের এমন অবন্ধুসুলভ আচরণকে বলে সানস্ক্রিন পিলিং। তবে এটা স্কিন পিলিং থেকে একদমই আলাদা। এমনকি ইংরেজি বানানটাও ভিন্ন। ত্বকের চামড়া ওঠার সমস্যা ‘চববষরহম’ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ত্বকের উপরিভাগে সানস্ক্রিনের দলা পাকিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি পরিচিত ‘চরষষরহম’ হিসেবে। সানস্ক্রিন পিলিং শুধু বিরক্তিকরই নয়, এতে সময়ের সঙ্গে সৌন্দর্যপণ্যের বেশ অপচয় হয়।
কিন্তু কারণ?
সানস্ক্রিন পিলিংয়ের মূল কারণ সম্পর্কে জানতে হবে আগে। বিশেষজ্ঞদের মত, যে পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তার কারণে পিলিং হতে পারে। এ ছাড়া যে উপায়ে পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটাও পিলিংয়ের অন্যতম কারণ।
প্রতিরোধের পন্থা
সানস্ক্রিন পিলিং রোখার জন্য প্রথমে প্রয়োজন সচেতনতা। সেই সঙ্গে সঠিক উপায় জানা থাকলে এটি রুখে দেওয়া যাবে খুব বেশি জটিলতা ছাড়াই।
নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন
কার্যকর রূপচর্চার শুরুটা হওয়া চাই পরিষ্কার ত্বক ক্যানভাস দিয়ে। এ ক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েশনের বিকল্প নেই। এটি ত্বকের মৃতকোষ সরানোর সঙ্গে সঙ্গে দূর করে ময়লা আর দূষণও। এতে যেকোনো ধরনের সৌন্দর্যপণ্য সহজেই ত্বকে প্রবেশের সুযোগ পায়। ঝক্কি ছাড়াই শুষে নেয় ত্বক। তাতে সানস্ক্রিন পিলিংয়েরও আশঙ্কা কমে অনেকখানি। তবে কোনোভাবেই অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েট করে ফেলা যাবে না ত্বক। ঠিক তেমনি কম এক্সফোলিয়েশনও ত্বকের জন্য কার্যকর নয় একদম। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যই মূলমন্ত্র। না হলে ত্বক অতিরিক্ত তেলে কিংবা বেশি শুষ্ক হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা পিলিংয়ের কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক বা দুবারই যথেষ্ট। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টের বদলে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট বেশি কার্যকর।
পণ্য যাচাই
এখনকার ‘মোর ইজ মোর’ বিউটি কালচারে প্রতিদিনই অনেক ধরনের পণ্য মাখা হয় ত্বকে। এতে অনেক সময়ই পণ্যগুলোকে একে অন্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে দেখা যায়। ফলাফল ত্বকের ক্ষতি। এ ছাড়া বেশি পণ্যের ব্যবহারে অনেক সময় ত্বকের তেলে কিংবা শুষ্ক ভাব বেড়ে যেতে পারে, যা সরাসরি পিলিংয়ের আশঙ্কা বাড়ায়। এ ছাড়া একই সময়ে অনেক পণ্যের ব্যবহার, বিশেষ করে ভারী ক্রিম বা অয়েল বেসড প্রডাক্টগুলো ত্বকের স্বাভাবিক শোষণ ক্ষমতায় বাধা দেয়। ফলাফল সানস্ক্রিন পিলিং। তাই পণ্যের ওভার লেয়ারিং অথবা অতিরিক্ত ব্যবহার বাদ দেওয়া জরুরি।
পণ্যের পর্যায়ক্রমিক ব্যবহার
একটি পণ্য অন্যটির সঙ্গে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবে, তা ত্বকে সঠিক পর্যায়ে পণ্যের লেয়ারিংয়ের ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে সেরামের মতো হালকা, পাতলা পণ্যে থাকে ক্ষুদ্র মলিকিউলার স্ট্রাকচারের অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। অন্যদিকে ক্রিমের মতো ভারী পণ্যগুলো তৈরি হয় তুলনামূলক বড় মলিকিউলে। ছোট মলিকিউলগুলোকে বাধা দেওয়ায় কার্যকরভাবে ত্বকে শোষিত হয় না পণ্য; বরং ত্বকের বহিঃস্তরে জমে সানস্ক্রিন পিলিংয়ের মতো সমস্যা তৈরি করে। তাই বিশেষজ্ঞদের মত, প্রথমে হালকা ও পাতলা স্কিনকেয়ার প্রডাক্টগুলো ব্যবহার করতে হবে ত্বকে। ক্রমান্বয়ে ভারী প্রডাক্টগুলো ব্যবহারের পরামর্শ। আর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে স্কিনকেয়ার রুটিনের একদম শেষ ধাপে। তাই প্রথমে মিস্ট কিংবা টোনার কিংবা লাইটওয়েট সেরাম মাখার পর ত্বকে ব্যবহার করতে হবে জেল অথবা ক্রিম ময়শ্চারাইজার। সবশেষে সানস্ক্রিন দেওয়ার আগেও এসব ধাপ মেনে চললে প্রতিরোধ হবে পিলিং।
লেয়ারিংয়ের আগে
ত্বকে মাখার পর কোনো পণ্য শুকিয়ে যাওয়া বা শোষণের ব্যাপারটা নির্ভর করবে পণ্যের ঘনত্ব আর ব্যবহারকারীর ত্বকের ধরনের ওপর। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, একটি পণ্য ত্বকে মাখার পর ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড অপেক্ষা করা প্রয়োজন। তারপর পরবর্তী পণ্য মাখাতে হবে। এতে ত্বক পণ্য শোষণের পর্যাপ্ত সময় পাবে। ত্বকের উপরিভাগে কিছু জমে থাকবে না। সানস্ক্রিন পিলিংও হবে না।
উপাদানে নজর
এমন অনেক সৌন্দর্য উপাদান রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য পণ্যের উপাদানের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে সানস্ক্রিন পিল ফর্ম করতে পারে। যার মধ্যে প্রথমেই নাম আসে সিলিকনের। ডাইমেথিকন, অ্যামোডাইমেথিকন আর সাইক্লোমেথিকনের মতো সিলিকনগুলো সাধারণত সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত হয়। এগুলো সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। ত্বকের উপরিস্তরে দেয়াল তৈরি করে পরিবেশদূষণ থেকে বাঁচায়। তবে এগুলোর প্রতিটিই সানস্ক্রিন পিলিংয়ের কারণ। এ ছাড়া তালিকায় আরও রয়েছে জ্যানথান গাম। এটি পটেনশিয়াল পিলিং কালপ্রিট হিসেবে পরিচিত; যা সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত হয় থিকেনার, স্ট্যাবিলাইজার আর বাইন্ডার হিসেবে। উচ্চমাত্রার কনসেনট্রেশন যুক্ত হওয়ায় এটিও পিলিংয়ের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বাজারে মিনারেলযুক্ত এসপিএফগুলোও পিলিংয়ের কারণ হতে পারে। তাই এ ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে, তাতে যেন মাইক্রোনাইজড মিনারেল থাকে। এ ছাড়া কোনো ক্ষতিকর উপাদান সানস্ক্রিনে রয়েছে কি না, খেয়াল রাখা চাই ব্যবহারের সময়। ঘষে নেওয়ার বদলে চেপে চেপে মাখতে হবে সানস্ক্রিন। পিলিং প্রতিরোধে।
এ ছাড়া ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহারে পিলিংয়ের আশঙ্কা অনেকখানি কমে যায়। যেমন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেছে নিতে হবে সুপার লাইটওয়েট, ড্রাই ফর্মুলার সানস্ক্রিন। অ্যাকনেপ্রবণ ত্বকে কেমিক্যাল সানস্ক্রিনের বদলে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনই ভালো। শুষ্ক ত্বকের জন্য বেছে নিতে হবে হাইড্রেটিং উপাদানযুক্তগুলো। স্পর্শকাতর ত্বকে সুগন্ধিহীন ফর্মুলারগুলো বেশি মানানসই। তাই ত্বকের ধরন আর চাহিদা বুঝে বেছে নিন সবচেয়ে মানানসইটি। সানস্ক্রিন পিলিং এড়াতে।
অর্চনা সাহা
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল