ফুড ফিচার I শজিনা ডাঁটা
বিজ্ঞানের পরিভাষায় ফুলযুক্ত গাছের বর্গকে বলা হয় ব্রাসিকেলস। এর রয়েছে ১৭টি পরিবার। সেগুলোর মধ্যে মরিংগাসি পরিবারের একমাত্র প্রজাতি হলো শজিনা। এই সবজির বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। যুক্তরাজ্যে এটি ড্রামস্টিক ট্রি এবং ফিলিপাইনে মালুঙ্গ নামে পরিচিত। তামিল শব্দ মুরুংগাই থেকে মরিংগা শব্দের উৎপত্তি। শজিনার আদি উৎপন্নস্থল ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পাকিস্তান।
চার হাজার বছর ধরে রান্না এবং চিকিৎসায় শজিনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সবজি প্রধানত আফ্রিকা ও এশিয়াজুড়ে দেখা যায়। তবে আজকাল আফ্রিকার সেনেগাল ও মালিতে বাণিজ্যিকভাবে শজিনা চাষ হচ্ছে। ১৯৪৫ সালে দিল্লিভিত্তিক ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের বিজ্ঞানী শানমুগেভেলু সাবেসান তিন ধরনের শজিনা ডাঁটার খোঁজ পান। এগুলো হলো শ্বেত শজিনা বা কৃষ্ণগন্ধা, রক্ত শজিনা বা মধু শিগ্রু এবং নীলা শজিনা বা কৃষ্ণ শজিনা। বাংলাদেশে মূলত শ্বেত শজিনা পাওয়া যায়। ভারতের মালদহে পাওয়া যায় রক্ত শজিনা। নীলা শজিনা বেশ বিরল প্রজাতির। তবে এটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।
পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, দক্ষিণ ভারত ও থাইল্যান্ডে বাসগৃহের পাশেই শজিনা গাছ জন্মে। সবজি হিসেবে এসব অঞ্চলে এটি বিক্রি হয়ে থাকে।
ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় মূলত খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্যই শজিনা চাষ করা হয়। তাইওয়ানের বিশ্ব সবজি কেন্দ্রে (উদ্ভিজ্জ গবেষণা কেন্দ্র) প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শজিনার চাষ করা হয়। অন্যদিকে, হাইতিতে মাটির ক্ষয় রোধের জন্য শজিনাগাছ সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়।
শজিনা ডাঁটা মূলত গরমকালীন সবজি। এর ৮৮ শতাংশ পানি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পানিশূন্যতা রোধে এটি কার্যকর। পানি ছাড়া এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ডায়াটারি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়ামের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তা ছাড়া মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড জোগান দিতে এটি সাহায্য করে। এই সবজিতে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। যা উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এসব খাবার পুষ্টির মাত্রাকে বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক ফল দেয়। শজিনা ডাঁটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। আলু, সরিষা, কুমড়া বড়ি, রুই মাছ, চিংড়ি ইত্যাদির সঙ্গে শজিনা ডাঁটা বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। শজিনা ও মসুর ডালের খাবার বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক সময় পরিপাকতন্ত্রের কার্যপ্রক্রিয়া সঠিক না থাকায় হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় যেকোনো খাবারের সঙ্গে মেশানো শজিনা ডাঁটার ঝোল খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। এতে থাকা ভিটামিন সি বিভিন্ন রোগ, যেমন- সর্দি, কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি সারাতে পারে। শজিনা ডাঁটাযুক্ত খাবারে ঝাল ও মসলার পরিমাণ কম হওয়া ভালো। তবে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন জরুরি। অনেকে জিরা, ধনিয়া গুঁড়া ব্যবহার করে থাকে। তবে মসলা বেশি মেশালে এবং অনেকক্ষণ ধরে সেদ্ধ করলে শজিনা ডাঁটার স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
রেন্টিনা চাকমা
ছবি: সংগ্রহ