এই শহর এই সময় I শিল্পসঙ্গ
বাংলা ক্যালেন্ডারে আষাঢ় ও শ্রাবণের ভাগাভাগি। ঋতুতে বর্ষা। তবু ইংরেজি জুলাই মাসজুড়ে বৃষ্টির ছিল না তেমন দেখা। রোদের চোখ রাঙানি, তীব্র গরমের ধমকে রাজধানীবাসী সকলেই কমবেশি নাকাল। তাই বলে শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্য অঙ্গন থমকে ছিল না মোটেই। বরং বিভিন্ন আয়োজন মনের ক্ষুধায় খোরাক জুগিয়েছে নগরবাসীর।
সারা দেশের চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৭টি গ্যালারিতে ২৫তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০২৩-এর সূচনা ঘটেছিল বেশ আগেই, ২৮ মে। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই জমকালো প্রদর্শনীর পর্দা নেমেছে ১৭ জুলাই। তাতে স্থান পেয়েছিল ৯৬টি চিত্রকলা, ৩৯টি ছাপচিত্র, ২২টি আলোকচিত্র, ৬০টি ভাস্কর্য, ৪টি প্রাচ্যকলা, ৬টি মৃৎশিল্প, ১০টি কারুশিল্প, ৭টি গ্রাফিক ডিজাইন, ৩৮টি স্থাপনা শিল্প, ১১টি নিউ মিডিয়া আর্ট এবং ৩টি পারফরম্যান্স আর্ট। প্রতিটি মাধ্যমে একটি করে মোট ১১টি শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও দেওয়া হয়। সকল মাধ্যম মিলিয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৩’।
শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যের শৈল্পিক মহিমা দর্শকদের বিমোহিত করে রেখেছিল ১৪ ও ১৫ জুলাই। এই দু’দিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব ২০২৩’। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উৎসাহিত করতে। দলীয় নৃত্য ওডিসি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া উৎসবে দেশবরেণ্য শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা পারফর্ম করেন। কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ, মন্দিরা চৌধুরী, সাজু আহমেদ, মো. মাসুম হোসাইন, স্নাতা শাহরিন, অবন্তিকা আল রেজা, দীপা সরকার, মনিরা পারভীন, সন্দীপ মল্লিক এবং রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পীরা (দলীয়)। শাস্ত্রীয় সংগীত শোনান রেজওয়ান আলী লাভলু, কানিজ হুসনা আহমেদী, সৌমিতা বোস, অসিত দে, সুস্মিতা দেবনাথ, সাইফুল তানকার, শেখ জসিম, অন্তরা মন্ডল, বিটু শীল, ড. শেখর মন্ডল, ড. হারুন অর রশিদ, করিম সাহাবুদ্দিন, অভিজিৎ কুন্ডু, রেজওয়ানুল হক ও প্রিয়াংকা গোপ। দ্বৈত সংগীত ইউসুফ আলী খান ও ইয়াকুব আলী খান। ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি, অমিত চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম সাকি, সালমা বেগম মুন্নি, মারিয়া ফারিহ উপমা ও মোহনা মীম; দলীয় পরিবেশনায় ছিলেন সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার ও জাগো আর্ট সেন্টারের শিল্পীরা। একক সংগীত শোনান অসিত রায়, অনিল কুমার সাহা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, ফকির শহিদুল ইসলাম ও পূর্ণচন্দ্র মন্ডল। তামান্না রহমান, সুইটি দাস, বাবরুল আলম চৌধুরী ও মনোমী তানজানা অর্থীর একক পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীরা পরিবেশন করেন মণিপুরি নৃত্য। ওডিসি নৃত্য পরিবেশনায় মো. জসীম উদ্দিন এবং নৃত্যছন্দ দল (দলীয়)। দলীয় নৃত্য কথাকলি পরিবেশন করেন স্বপ্নচূড়া কালচারাল একাডেমির শিল্পীরা। অন্যদিকে, এগনেস র্যাচেল প্রিয়াংকা পরিবেশন করেন গৌড়ীয় নৃত্য।
১৯ থেকে ২৯ জুলাই, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজিত হয়ে গেল জামদানি উৎসব। ‘অনন্য বয়নে জামদানি উৎসব’ শিরোনামে। জামদানির বয়ন পদ্ধতি, তৈরি উপাদান যেমন সুতা, রং, নকশার নমুনা দর্শকদের সামনে প্রদর্শিত হয়েছে। তাতে একই সঙ্গে শত বছরের পুরোনো মোটিফের জামদানির সৌন্দর্য উপভোগের মিলেছে সুযোগ। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) গেইল মার্টিন; একই প্রতিষ্ঠানের টাস্ক টিম লিডার জু অ্যালিসন ই; টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ, সংগ্রাহক ও কলকাতার দ্য উইভার্স স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী দর্শন মেকানি শাহ। সেবা’র নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের উদ্যোগে এ আয়োজন। পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও পিকেএসএফ। সহযোগিতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন। এ উপলক্ষে ২৩ জুলাই আয়োজিত সেমিনারে ‘বর্তমানের সচেতন প্রয়াসই সুনিশ্চিত করবে জামদানির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক শেখ সাইফুর রহমান। জামদানির সংরক্ষণ বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ হামিদা হোসেন। মঞ্চে আরও ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি ও প্রদর্শনীর কিউরেটর চন্দ্র শেখর সাহা, সেবা’র নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোকসানা এবং তাঁত বোর্ডের মসলিন প্রকল্পের পরিচালক মো. আইয়ূব আলী। এই উৎসব থেকে আমাদের দেশের ঐতিহ্য জামদানির আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছেন দর্শকেরা। পাশাপাশি ছিল জামদানি ও জামদানি ব্যবহারে তৈরি পণ্য কেনার সুযোগ।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ