ত্বকতত্ত্ব I পাত থেকে পরিচর্যায়
ভোজনরসিক বাঙালির রসুইঘরে এই উপাদানের উপস্থিতি অবধারিত। কিন্তু রোজকার রূপরুটিনে এর অন্তর্ভুক্তি যে আয়ুর্বেদিক অ্যাপ্রুভড, জানা আছে তো?
গরম ভাতের সঙ্গে আলু সেদ্ধ আর একটুখানি ঘি- বাঙালির পেটপূজার জন্য যথেষ্ট। যেকোনো রান্নায় খানিকটা ঘি পড়লেই যে তার স্বাদ বদলে যায়, সেটি মানেন নামীদামি শেফরাও। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ঘিয়ের যোগ আলাদা মাত্রা আনে খাবারে। হোক তা প্রথম পাতের সবজি, শুক্তো, ভর্তা কিংবা শেষ পাতের মিষ্টি। সনাতন ধর্মের পূজা, যজ্ঞসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানও ঘি ছাড়া অসম্পূর্ণ। তবে শুধু এগুলোতেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ নয়। প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় এর নামডাক রয়েছে। আর না হবার তো কারণ নেই! ভিটামিনে ঠাসা, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ ঘি, যা সুস্থ-সুন্দর থাকতে দারুণ সহায়ক। বর্তমানে ঘি সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সৌন্দর্য রক্ষায় এর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
নানা গুণের ঘি
এতে মিলবে ভিটামিন এ, ডি, কে এবং ই এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান। যা ত্বক তো বটেই, স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। তবে ঘি খাওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কে মনে সংশয় সৃষ্টি হলে জেনে রাখা ভালো, সঠিক পরিমাণ এবং প্রক্রিয়ায় ঘি খাওয়া হলে কোনো সমস্যা হয় না; বরং এতে ত্বক আর চুলের জেল্লা বাড়ে। এমনকি ওজন কমারও প্রমাণ মিলেছে। সুখবর হচ্ছে, যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তারাও নির্দ্বিধায় খেয়ে নিতে পারেন। ঘি শরীরকে ডিটক্সিফাইও করে। রূপচর্চাতে ঘিয়ের ব্যবহার নিয়ে নানা নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন ঘি ব্যবহারে অকালে চুল পেকে যায়, ত্বকে দেখা দেয় অ্যাকন, ব্রণের মতো সমস্যা। ব্যাপারগুলোর কোনো সত্যতা মেলেনি। এ ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা পুরোপুরি নির্ভর করবে ঘি কীভাবে এবং কতখানি ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর।
যথার্থ যত্নে
শীত মানেই ত্বকের শুষ্কতা। এটা সারাতে ঘি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের কোষে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। শুধু পরিমাণমতো ঘি খানিকটা গরম করে নিতে হবে। গোসলের আধঘণ্টা আগে ভালোভাবে গোটা শরীরে মাসাজ করতে হবে। নিদেনপক্ষে পাঁচ মিনিট।
ময়শ্চারাইজার হিসেবেও ঘি দারুণ কার্যকর। তবে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে ২ থেকে তিনবার মুখে এটা মাখা যেতে পারে। এতে ত্বক হয়ে উঠবে নরম, মসৃণ। এ জন্য সমপরিমাণে বিশুদ্ধ ঘি আর পানি নিতে হবে। ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে নেওয়ার পর এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে। আলতো করে মাসাজ করে নিয়ে ত্বকে মিনিট পনেরো রেখে ধুয়ে ফেলা চাই।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ঘিয়ের জুড়ি মেলা ভার। কাঁচা দুধ, বেসন অথবা মসুর ডালের সঙ্গে সমপরিমাণ ঘি মিশিয়ে ঘন একটা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ত্বকে পুরু করে মেখে পনেরো-বিশ মিনিট অপেক্ষার পর ধুয়ে ফেলতে হবে পরিষ্কার পানি দিয়ে।
যৌবনদীপ্ত ত্বকের জন্য ঘি থেকে ভালো অপশন আর হতে পারে না। এটি অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে দারুণ, যা ত্বকের গভীরে গিয়ে কোষে পুষ্টি জোগায়। অকালবার্ধক্য থেকে রক্ষা করে। এ জন্য ভালো মানের বিশুদ্ধ ঘি প্রতিদিন ত্বকে মাসাজ করতে হবে। যাদের ত্বকে ফাইন লাইন কিংবা বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করেছে, তাদের জন্য কিন্তু দারুণ কাজের এটি।
বডি অয়েলেরও অভিনব বিকল্প হতে পারে ঘি। গোসলের আগে প্রতিদিন নিয়ম করে ঘি মাসাজ করলে ত্বক হয়ে উঠবে জেল্লাদার, মসৃণ ও কোমল। সমপরিমাণে নারকেল তেল আর ঘি মিশিয়ে পুরো শরীরে মাখা চাই। আধঘণ্টা পরে গোসল সেরে নিতে হবে। ব্যস! পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে দিন কয়েকের মধ্যেই।
ডার্ক সার্কেল কমিয়ে চোখের চারপাশকে সতেজ করে তুলতেও ঘি কাজে লাগবে। যা বাজারে চলতি যেকোনো নামীদামি আইক্রিমকে টক্কর দিতে পারে অনায়াসে। এগুলো যেমন খরচসাপেক্ষ, তেমনি ফলাফলেরও কোনো গ্যারান্টি নেই। তার চেয়ে বরং ঘি অনেক বেশি পকেট ফ্রেন্ডলি অপশন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে চোখের চারপাশে মাখিয়ে নিতে হবে। আঙুলের সাহায্যে, আলতো মাসাজ করে। সকালে উঠে ধুয়ে নিতে হবে। কিছুদিন লাগবে ফল পেতে।
ঠোঁটের ফাটা ভাবের পাশাপাশি কালো ভাব দূর করতেও ঘি উপকারী। এটি জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিতে পারে বলে শুষ্ক ঠোঁটের সমস্যা সারাতে আদর্শ। তা ছাড়া দাগছোপও হালকা করে দেয়। তাই ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে চাইলে প্রতিদিন রাতে ঘি ব্যবহার শুরু করলেই চলবে। আঙুলে করে অল্প ঘি নিয়ে ঠোঁটে মাসাজ করতে হবে। সারা রাত রেখে সকালে ধুয়ে নেওয়া চাই।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল