কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্পশিয়াল
চুল নিয়েই যেন রাজ্যের সব দুশ্চিন্তা। কিন্তু এতে প্রাণ জোগানোর কাজে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত যে জোগালি, তার দেখভাল হচ্ছে তো? অবহেলায় বিপদ বাড়বে কিন্তু
চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল—কথাটি ব্যক্তিচরিত্রের ক্ষেত্রে তো সত্যই, কিন্তু এর চেয়েও সত্য সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে। তাই ত্বকের যে অংশটুকু চোখের আড়ালে থাকে, তার যত্নও না দেখাই রয়ে যায়। বলা হচ্ছে মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পের কথা।
ত্বকের যত্নে যেটুকু সময়-শ্রম ব্যয় করা হয়, স্ক্যাল্পের যত্নে তার ছিটেফোঁটাও সাধারণত দেওয়া হয় না। কিন্তু দিন শেষে চুল নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। আর তার জন্যই নতুন সল্যুশন: স্ক্যাল্পশিয়াল। এক্সপার্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ঘন চুলের জন্য স্ক্যাল্প ফেশিয়াল বা ‘স্ক্যাল্পশিয়াল’ ট্রেন্ডি আর উপযোগী সমাধান।
স্ক্যাল্প ফেশিয়াল কী
ফেশিয়াল যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, ঠিক একইভাবে স্ক্যাল্প ফেশিয়াল রক্ষা করে স্ক্যাল্পকে। স্ক্যাল্প পেম্পারিং প্রক্রিয়াই স্ক্যাল্পশিয়াল। স্ক্যাল্পে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল, ময়লা, খুশকি, বিল্ড-আপ কেমিক্যাল দূর করা এর মূল উদ্দেশ্য। মাথার ত্বক মাসাজ করা হয় বিভিন্ন রকম মাসাজিং টুলের সাহায্যে। এতে স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ে, তাই চুল পড়াও ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেশিয়াল যেমন ভিন্ন হয়, স্ক্যাল্পশিয়ালও তেমনি চুল ও স্ক্যাল্পের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়।
প্রফেশনাল স্ক্যাল্প ফেশিয়াল বনাম হোম স্ক্যাল্প ফেশিয়াল
ফেশিয়ালের মতো এ ক্ষেত্রেও অপশন বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। প্রফেশনালের কাছে কিংবা ঘরে বসেই এই ট্রিটমেন্ট নেওয়া যাবে। স্ক্যাল্প ফেশিয়ালের ব্যাপারে বিস্তর ধারণা না থাকলে অবশ্যই একজন প্রফেশনালের সাহায্য নেওয়া উচিত। তা ছাড়া নিজেকে একটু পেম্পার করার জন্যও এটি ভালো উপায়। একজন প্রফেশনাল স্ক্যাল্প ফেশিয়ালের সময় চুলে ডার্মাটোলজিস্ট স্বীকৃত বিভিন্ন ধরনের টুলস ও প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। ডিআইওয়াই অর্থাৎ নিজে নিজে স্ক্যাল্প ফেশিয়াল করতে চাইলে হয়তো এ রকম প্রফেশনাল সার্ভিস মিলবে না; তবে নিজের চুলের ধরন বুঝে সঠিক যত্ন নেওয়া যাবে ঠিকই।
চারটি উপকারিতা
ক্ষতির শুরুটা হয় শাওয়ারের সময় চুল নিংড়ে পানি ঝরানো দিয়ে। এরপর হেয়ার ড্রায়ারের কড়া তাপে রোস্ট। বাইরের ধুলাবালি, সান ড্যামেজ তো আছেই! চুলকে যেন প্রতিদিনই যেতে হয় এক রোলার কোস্টার রাইডের মধ্য দিয়ে। আর যত্নের সময় কোন শ্যাম্পু বা কোন ট্রিটমেন্ট বেছে নেওয়া হচ্ছে, স্ক্যাল্প এ ক্ষেত্রে কতটুকু পুষ্টি পাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল আছে তো? স্ক্যাল্প সুস্থ রাখা আসলে একটি ট্রিকি কাজ। এ ছাড়া রুটিন হেয়ার ওয়াশের বাইরে মাথার ত্বককে রিজুভিনেট করা একটু কষ্টসাধ্য। তাই স্ক্যাল্প ফেশিয়ালে প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
পরিষ্কার করে: স্ক্যাল্পে চুলকানি, দেখতে দৃষ্টিকটুই বটে। সেই সঙ্গে খুশকির উৎপাত কিন্তু মাথার ত্বকের জন্যও মারাত্মক। যাদের স্ক্যাল্পে তৈলাক্ত কিংবা ড্রাই খুশকি থাকে, তাদের জন্য স্ক্যাল্প ফেশিয়াল একটি অসাধারণ সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া স্ক্যাল্পে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জির সমস্যায় নিশ্চিন্তে বেছে নেওয়া যেতে পারে এই সল্যুশন।
চুলের বৃদ্ধিতে: সুস্থ স্ক্যাল্প মানেই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল। আর মাথার ত্বক সুস্থ থাকলে চুল বাড়ে খুব দ্রুত। ফলিকলে যখন সঠিকভাবে পুষ্টি পৌঁছাতে পারে, তখন চুলে তা প্রতিফলিত হয়।
ঝলমলে ভাব বাড়াতে: চুলের গোড়ায় সিবাম কিংবা ঘাম জমে থাকলে চুল দেখতে চিটচিটে লাগে। স্ক্যাল্প ফেশিয়াল চুলের অতিরিক্ত ঘাম রুখে দেয়, তাই চুল বাউন্সি দেখায়। বাড়তি তেল জমতে পারে না বলে চুল দেখায়ও ঝলমলে।
স্ট্রেস কমাতে: দিনশেষে একটি হেড মাসাজ যেন সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে দেয়। থেরাপি সেশনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এ সময় এনডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, আরামদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এটি মানসিক প্রশান্তিতেও সহায়তা করে।
একাই এক শ
অবশ্যই প্রফেশনাল হেল্পটা বেশি কার্যকরী, তবে সাধ ও সাধ্যের হিসাবও তো মেলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাসায় বসে সেরে নেওয়া যেতে পারে স্ক্যাল্প ফেশিয়াল।
প্রি-ওয়াশ ট্রিটমেন্ট: স্ক্যাল্পের ধরন বুঝে প্রথমেই বেছে নিতে হবে সঠিক হেয়ার অয়েল। হট অয়েল মাসাজ করে নিলে উদ্দীপ্ত হবে মাথার ত্বক। এরপর বেছে নেওয়া চাই প্যারাবেন ফ্রি হেয়ার মাস্ক।
মাসাজ: চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিতে মোক্ষম উপায়। এ ক্ষেত্রে কোনো মাসাজিং টুল অথবা শুধু আঙুলেরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
ওয়াশ: চুলে থাকা তেলের পরিমাণ এবং স্ক্যাল্পের ধরনের ওপর নির্ভর করবে কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করা চাই। শ্যাম্পু করার পর খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলের গোড়ায় কোনো ফেনা লেগে না থাকে।
স্ক্রাবিং: বাজারে সিলিকনের অনেক ধরনের স্ক্যাল্প স্ক্রাব পাওয়া যায়। এগুলো স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
কন্ডিশনার: সবশেষে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে কন্ডিশনার। তবে সাবধান, স্ক্যাল্পে কোনোভাবেই কন্ডিশনার ব্যবহার করা যাবে না।
প্রফেশনাল বা ঘরে বসে, স্ক্যাল্প ফেশিয়াল যেভাবেই নেওয়া হোক না কেন, চুলের এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে লিভ-ইন সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। চুল ভলিউম পাবে, আর আর্দ্রতা ধরে রাখবে। তবে যেকোনো হেয়ার ট্রিটমেন্ট নেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে, চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য শুধু যত্নে নয়, বরং হেলদি লাইফস্টাইলের ওপরও নির্ভর করে। তাই ঘুম কিংবা ডায়েটের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোস করা চলবে না।
বিদিশা শরাফ
মডেল: তুবা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল